অবশেষে মাশরাফির সামনে আশার আলো!

বিশ্বকাপে খেলবেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, তা এখন নিশ্চিত। তবে সবকিছু ‘যদি’র উপর নির্ভর করছে। এই যদিই পারে মাশরাফিকে বিশ্বকাপে খেলাতে। কিভাবে? যদি মাশরাফি নিজের ফিট থাকার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভা হয়েছে। মাশরাফির বাদ পড়ার বিষয়টি নিয়ে সবাই কথা বলেন। শেষপর্যন্ত বিসিবির সব কর্মকর্তাই মাশরাফিকে দলে নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। কিন্তু এর জন্য মাশরাফিকেই সব কিছু করে দেখাতে হবে। ফাঁকফোকর বের করার চেষ্টা চলছে। কোন এক ফাঁক পেলেই মাশরাফিকে দলে নেয়া হবে। আজ শনিবার রাতে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস শ্রীলঙ্কায় কলম্বোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করার কথা রয়েছে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডেভিড ইয়াং থাকবেন। পরের দিন মাশরাফিকে দেখবেন ইয়াং। তার রিপোর্টের ওপরও অনেক কিছুই নির্ভর করছে। যদি ইয়াং মাশরাফিকে দেখে বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনার কথা জানান তাহলেই হয়ে যায়। পরের কাজটুকু করতে হবে ‘নড়াইল এক্সপ্রেসের নিজের। আর যদি ইয়াং তাকে অস্ত্রোপচারের টেবিলে যেতে বলেন তাহলে সব শেষ! মাশরাফিকে সেই স্থানেই যেতে হবে। বিশ্বকাপ খেলার যে স্বপ্ন তা মিলিয়ে যাবে। ইয়াংই এখন মাশরাফির বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। একটি ইতিবাচক রিপোর্টেই তা সম্ভব। প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম আগেও বলেছেন যে মাশরাফির সুযোগ রয়েছে। তাকে ফিট প্রমাণ করতে হবে। তাহলেই দলে ভিড়তে পারে এই বাংলাদেশ পেসার। ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি সুযোগ আছে। এরপর আর কোন সুযোগ থাকবে না। এই সময়ের মধ্যেই মাশরাফিকে ফিট হতে হবে। অবশ্য ফিট হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়ও রয়েছে। মাশরাফিও সেই সুযোগ পুরোদমে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। শেষপর্যন্ত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পারবেন কিনা ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ এ নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে পরবতী ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঠিকই মাঠে নামবেন এই বাংলাদেশ সেরা পেসার। এটা এখন নিশ্চিত। তাই সময় আরও বাড়ল। নিজেকে প্রমাণ করতেও সুযোগ পেলেন। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ খেলছেন মাশরাফি। কিন্তু তাকে খেলাতে হলে দলের যে কোন একজনকে ইনজুরি দেখাতে হবে। তাহলেই কেবল সম্ভব। নয়ত ১৫ সদস্যের দলে যে মাশরাফির অন্তভূক্তির কোন সুযোগই নেই। নির্বাচক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখনও অনেক সময় আছে। কী হয় বলা মুশকিল। বিশ্বকাপের আগে থাকছে প্রস্তুতি ম্যাচও। যদি কেউ ইনজুরিতে পড়ে যায়। সেই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। দলে খানিক ইনজুরিযুক্ত ক্রিকেটারও আছে। তাহলে প্রথম পছন্দই থাকবে মাশরাফি।’

নির্বাচক কমিটির সদস্য পেসারদের দিকেই নজর দিয়েছেন। তিন পেসার নিয়ে বুধবার দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সেখানে নাজমুল হোসেন, শফিউল ইসলাম ও রুবেল হোসেন রয়েছেন। শফিউল ইনজুরির মধ্যেই আছেন। রুবেলও। আর নাজমুল কখন ইনজুরিতে পড়েন বলা মুশকিল। তাই হাতে থাকা সময়ে যে কোন একজন ইনজুরিতে পড়লেই মাশরাফির সামনে সুযোগ ধরা দেবে। মাশরাফি এখন তাই আরও উজ্জীবিত। দল ঘোষণার দিন অনুশীলন শেষে বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না এই ভেবে কেঁদেছিলেন। এখন তার আত্মবিশ্বাস আরও চাঙ্গা। যেভাবেই হোক দলে প্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে আছেন। নিজেকে ফিট প্রমাণ করতে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগেই বল হাতে তুলে নিয়ে গতির পরশ বুলিয়ে দিতে চাইছেন। সবার আশা মাশরাফি দলে থাকুক। সেই আশা পূরণ করতেই লড়াই করছেন দেশ সেরা পেসার। আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় দলের অনুশীলন নেই। বিশ্বকাপের জন্য বিশ্রাম দেয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের। লীগের খেলাও নেই। প্রিমিয়ার লীগের প্রথম পর্ব শেষ। সুপারলীগে আর দেখা যাবে না শাকিব, তামিম, আশরাফুলসহ বিশ্বকাপ দলে থাকা ১৫ ক্রিকেটারকে। সবাই নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। পরিবার, পরিজনের সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে দেখা করছেন। ২৬ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে আবার অনুশীলনে নামবে দল। মাশরাফি অবশ্য নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত । তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আগ্রহী। যে করেই হোক এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। এজন্য পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নয়, কলম্বোয় তার স্বপ্ন সত্যি করার মূল কারিগর ডেভিড ইয়াংয়ের সান্যিধ্য নিবেন। এরপরই সব বোঝা যাবে। দেশবাসীর একটিই প্রত্যাশা এখন, মাশরাফি বিশ্বকাপ দলে থাকুক। এই আশা এখন পূরণ হলেই হয়।–সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, ২২-০১-২০১১ ইং