কালকিনিতে একের পর এক আত্মহত্যা!

মানবিক বিষয় নিয়ে মানসিক রোগে ভূগে অন্যের নিকট থেকে সাহায্য-সহযোগীতা না পেয়ে নিজেকে অসহায় ভেবে নিজ প্রাণ দিয়ে সুবিধাবাদীদের সুযোগ করে দিতে ‘আত্মহত্যা মহাপাপ’ জেনেও মানুষ নিজেকে শেষ করে দিয়ে এই পথটি বেছে নিচ্ছে। ‘কিন্তু এই পথ ছাড়াও তো তার বিকল্প পথ আছে’ এটা একজন শিক্ষিত, সচেতন ও বিত্তবানদের জন্য। একজন গরীব, অসহায় ও বৃদ্ধ কোনো সমস্যা নিয়ে যখন গ্রামের মাতুব্বর, চেয়ারম্যান-মেম্বার, থানা, এমনকি ইউএনও বা প্রশাসনের যে কোনো বিভাগের কর্মকর্তার নিকট যায়, প্রত্যক্ষদর্শী যারা থাকেন তারা দেখে থাকবেন ঐসব কর্মকর্তারা এসব মানুষদের কতটুকু সহযোগীতা করে থাকেন। যে টুকু সহযোগীতা ভাগ্যে জুটে তাও কোনো ব্যক্তির শুপারিশে। তবে কিছু কর্মকর্তা ব্যতিক্রম কিন্তু তাদের সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য। সহযোগীতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও যখন আর সামনে এগুতে না পারেন তখন নিজেকে অসহায় ও অবাঞ্চিত মনে করে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে থাকেন।

গৃহবধু শিল্পি বেগম, কলেজ ছাত্রী চৈতী ও দিন-মজুর খলিল হাওলাদারসহ অর্ধশতাধিক মনুষ্য জীব গত ১০বছরে অকালে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে পরোপারে চলে গেছেন। স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা দিতে গিয়ে একাধিকবার অসহ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বিচার নিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে বারবার ধরনা দিলেও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি থানায় জিডি করেও কোনো সুফল পাননি। অবশেষে নিজের স্বামীকে অন্য একটি নারীর সাথে দেখা সইতে না পেরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে (৩০শে জানুয়ারী) মৃত্যুকে বরন করে নেন উপজেলার রমজানপুর ইউপির জজিরা গ্রামের  আজাহার সরদারের স্ত্রী শিল্পি বেগম। নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে স্বামীকে সুখী করতে চাইলেও সিফাত(৮) ও মিতু(৫) নামের দু’সন্তানকে রেখে গেছেন অন্ধকার ভবিষ্যতে।

সরেজমিনে বাড়িতে গেলে এই দু’শিশুকে মায়ের লাশের পাশে ‘মা, মা’ বলে চিৎকার দিতে দেখা গেল। সামনে মায়ের লাশ, আত্মহত্যার ঘটনায় বাবাও পলাতক, কার কাছে যাবে এই শিশু দু’টি। মায়ের অনাদরে কীভাবে বেড়ে উঠবে ওরা, কে করবে আদর-যত্ন ও লালন-পালন। ‘মায়ের আত্মহত্যায় মৃত্যু’র অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে ওদের। এ নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই উপস্থিত লোকজনের। অথচ এদের জান্তায়েই এক সময় শারীরিক নির্যাতন করতো তার স্বামী। কেউ উদ্যোগ নিয়ে দু’জনকে মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করেনি।

শিল্পি বেগম’রা এভাবেই মানবিক সমস্যার সম্মুখিন হয়ে পাড়া-প্রতিবেশীর সহযোগীতা না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। তখন নিজেকেই অসহায় মনে করে অবুঝ শিশুদের কথাও ভুলে যায়। অথচ শিল্পি বেগমদের যদি একটু বুঝানো যেত সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে, সন্তানদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করতে হবে, মানবধিকার সংস্থার সাহায্যের কথা, প্রচলিত আইনের সুবিধা ও ধর্মীয় রীতিনীতি। যে কোনো ব্যক্তি সামান্য একটু কষ্ট করেও উদ্যোগ নিয়ে দ্বন্ধ নিরসনে পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।