হাসিনা ও খালেদার যৌথ চলার অঙ্গিকার

Khaleda and Hasinaবাথরুম থেকে বের হলেন ওজু করে। ফজরের নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসলেন কুরআন শরীফ নিয়ে। পনের মিনিট তেলাওয়াত করলেন। প্রতিদিনই করেন। অন্যান্যদিন একটু বেশি করেন। আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন তিনি জায়নামাজ থেকে। একটু তাড়া আছে আজ। আজ হবে একটি বিশেষ দিন। আজ তিনি এমন একটি কাজ করবেন, এর আগে আর কেউ কখনো করেনি। ক্ষমতা ছিলো সবার, তবুও করেনি কেউ। তিনি করবেন কাজটি। সুন্দরের চর্চা, ক্রোধের পরিসমাপ্তি, সেটা তো কারো না কারো শুরু করা দরকার।

আজ ১৫ই ডিসেম্বর ২০১০ইং। আজ থেকে ৩৯ বছর আগের কথা। ২৪ বছর বাঙালি জাতিকে তিলে তিলে নির্যাতন করার পর পশ্চিম পাকিস্তানি হায়েনারা ২৫শে মার্চ ১৯৭১ এ নিরীহ বাঙালি জাতির ঝাপিয়ে পড়েছিলো পাগলা কুকুরের মতো। পরদিন ২৬শে মার্চ ১৯৭১ থেকে শুরু হয় বাঙালি জাতির প্রতিরোধ। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি মুক্তি চায়। আলাদা পতাকা চায়। পাকিস্তানি গোলাম হয়ে আর বেঁচে থাকতে চায় না। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তির মিছিলে এসে জড়ো হতে লাগলো বাংলার দামাল ছেলেরা। লুঙ্গি পরে, গায়ে গামছা পেঁচিয়ে রাইফেল কাধে ছুটে চলেছে মুক্তিযোদ্ধা, পৃথিবীর মানুষ এমন দৃশ্য এর আগে আর দেখেনি। ৯ মাস টিকে ছিলো পাকিস্তানিরা। অবশেষে অই পোষা মিলেটারীরা লেজ ঘুটিয়ে পালাতে বাধ্য হলো। নাকে খত্ দিয়ে তারা ফিরে গেল তাদের ঠিকানায়। স্বাধীন হলো ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই সবুজ শ্যামল ভূÑখন্ড।

আজ ১৫ই ডিসেম্বর ২০১০ইং । নামাজ শেষে, তেলাওয়াত শেষে, কিছু প্রাত্যহিক তসবীহ পাঠ করা শেষে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। হালকা লিকারে এককাপ চা খেলেন। সঙ্গে এক পিছ নুনতা বিস্কিট। পান খাওয়ার তেমন অভ্যেস নেই তাঁর। আজ জর্দ্দা দিয়ে একটি পানও মুখে দিলেন। তারপর আস্তে আস্তে চলেগেলেন লাল টেলিফোনটির কাছে। অনেক ভেবে আজ তিনি এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। কারো সাথে পরামর্শ করেন নি। এমনকি নিজের ছেলেÑমেয়ের সাথেও না। কাংখিত ডিজিটগুলো চাপলেন। রিং হচ্ছে! তিনি অপেক্ষা করছেন। একবার, দু’বার, মোট ছয় বার ট্রাই করলেন তিনি। প্রতিবারই রিং হয়ে ‘নো আনসার’ টোন শুনাগেল। রিÑডায়াল বাটনে চাপ দিলেন আবার। ৪র্থ রিং হতেই রিসিভ হলো ফোন। ওপাস থেকে ভেসে আসলো কাংখিত সেই কন্ঠÑ
“হ্যালো!”
“হ্যালো স্লামালিকুম। ভাবি, কেমন আছেন?”
“ওয়া আলাইকুম সালাম। আরে আপা আপনি! এত সকালে! আর আপনার গলাটা এমন লাগছে কেন? কেমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা! আমিতো প্রথমে চিনতেই পারি নি!”
“আপনার প্রশ্নের জবাব পরে দিচ্ছি। তার আগে বলুন এতক্ষণ ধরে ফোন করছি আমি। আপনাকে পেতে এতো দেরি হলো কেন? ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে টুমিয়ে পড়েছিলেন নাকি?”
“না আপা, আর বলবেন না। রাতে কিছু কাজ ছিলো। দেরি করে ঘুমেতে গেছি। তাই উঠতে আজ দেরি হয়ে গেছে। নামাজ পড়ে ছাদে হাটতে চলে গিয়েছিলাম।”
“ও আচ্ছা।” একটু থামলেন তিনি। তার পর বললেন, ”কয়েকদিন হলো টনসিলটা একটু প্রভলেম করছে। কীভাবে জানি ঠান্ডা লেগে গেছে। এর সাথে রাত থেকে এসে যোগ দিয়েছে সর্দি জ্বর। এ জন্যই গলা একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাগছে। ও কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে। তারপর ভাবি, আপনার শরীর কেমন? পায়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”
“ জ্বি না আপা, পা ঠিকই আছে। গত মাসেই তো কিং ফাহাদে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এলাম। আচ্ছা আপা, আপনার কানের অবস্থা কী?”
“আগের থেকে ভাল। বেশ ভাল। কয়েকদিন আগেই তো আমেরিকায় গিয়ে চেকাপ করি আসলাম। হাসপাতাল তো আবার আমার ছেলের বাসার পাশেই। ছেলেই আমাকে নিয়ে গেলো। কত করে বললাম, ভাল আছি, দরকার নেই। কে শুনে কার কথা। আমাকে জোর করে নিয়ে গেল। পাগল ছেলে!”

পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কারা কথা বলছেন। তাহলে আর উনি তিনি বলে ভাববাচ্যে চালানোর দরকার কী? কথা হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে। এই অসম্ভব কাজটি কীভাবে সম্ভব হলো, পরে বলছি। তার আগে চলুন উনাদের আলাপচারিতার বাকী অংশ শুনে নিই।

প্রধানমন্ত্রী বললেন, “ভাবি, ছেলেরা কেমন আছে?”
কিছু সময়ের জন্য নিরব হয়ে গেলেন খালেদা জিয়া। লম্বা একটি শ্বাস বেরিয়ে এলো তাঁর ভেতর থেকে। শ্বাসের সাথে বেরিয়ে এলো মায়ের মমতা। বললেন,
“বুঝতেই পারছেন ওরা কেমন থাকতে পারে। দুই বছর আমার ছেলে দু’টোর উপর যে নির্যাতন হয়েছে, তারপরেও যে তারা বেঁচে আছে, তাইতো আল্লার শুকরিয়া। আচ্ছা আপা, সত্যি করে বলেন তো, আপনি কি মনে করেন আমার ছেলেরা সে রকম কোনো অন্যায় করেছে?”
কিছুটা বিব্রত হয়ে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বললেন, “দেখুন ভাবি, আমার মনে করা না করায় তো কিছু যায় আসে না। মামলাগুলো তো আদালতে বিচারাধীন। আদালতই সিদ্ধান্ত নিক।”
তাতো ঠিকই আছে. কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনা বলে একটা ব্যপার আছে না? এই যেমন আপনারা আপনাদের সকল মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে খারিজ করিয়ে নিলেন!
চুপ হয়ে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী.। এই প্রশ্নটি তার জন্য একটু কঠিন হয়ে গেছে! এরপর কিছুক্ষণ নিরবে কেটে গেল। প্রায় ৩০ সেকেন্ড। তারপর প্রথম কথা বললেন শেখ হাসিনা। বললেন,
“হ্যালো!”
“হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি, বলেন।”
“আমরা কি একটি ব্যাপারে একমত হতে পারি আজ?”
“কোন্ ব্যাপারে?”
“অতীতে কী হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা আর কথা বলবো না। আমরা বলবো ভবিষ্যত নিয়ে।”
“প্রস্তাব চমৎকার, আমি রাজি। কিন্তু আপনার দলের নেতারা কি সেটা মানবে?”
“দেখুন, আমার দলেরটা আপনি আমার উপর ছেড়ে দেন। আপনি আপনার দলের মুখবাজদের সামাল দিন।”
“দেখুন আপা, আপনি যদি আপনার গলাবাজদের কন্ট্রোল করে ফেলতে পারেন, তাহলে আমি আমার মুখবাজদের কন্ট্রোল করতে পারবো। আর হ্যাঁ, আপনার সৈয়দ আশরাফ সাহেবের কাছ থেকে অতি আওয়ামীলীগারদের লিষ্টিটাও যোগাড় করে নেবেন। আর আপনি আপনার মন্ত্রী-এমপিদের কন্ট্রোল করে ফেললে তো সমস্যা এমনিতেই কমে আসবে। শুরু তো উনারাই করে। ”
“আপনি কিন্তু ভাবি আবারো অতীতে চলে যাচ্ছেন?”
“সরি, আপা।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। দেশে এতো সমস্যা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না। সন্ত্রাস দমন করা যাচ্ছে না, প্রশাসন যন্ত্রে গতিশীলতা আনা যাচ্ছে না। এদিকে আমার গুণধর মন্ত্রীরা কাজের’চে কথা বলছেন বেশি। আবার মাঝেÑমধ্যে এমন ফালতু কথাও বলছে কেউ কেউ, যার জন্য আমাকে পর্যন্ত বিব্রত হতে হচ্ছে। এই দেখলেন না কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ছাত্র, কী যেন নাম …. হ্যাঁ, আবু বকর, তার মৃত্যুতে আমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে বসলেন, ‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এমন হতেই পারে ….?”
টেলিফোনের অপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনাগেল। শেখ হাসিনা বললেন, “আপনি হাসছেন? আমার কথা শুনে আপনি হাসছেন?”
খালেদা জিয়া বললেন, “সরি আপা, আমি হাসছি অন্য কারণে। আপনি বলছেন, দ্রব্যমূল্য কমানো যাচ্ছে না। ওটা কি আমার সময় কম ছিলো নাকি! আসল কথা হল, আমাদের এই দেশে দ্রব্যমূল্য কখনো কোনো সরকারের হাতেই থাকে না। অটা থাকে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। আর আপনি আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেফাশ মন্তব্যের কথা বললেন। আপনার কি মনে নেই আমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হুসেনের কথা। সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ছেলের মাÑবাবার কাছে গিয়ে ‘ও’ বলেছিলো, ‘আল্লার মাল আল্লায় নিয়াগেছে!”
শেখ হাসিনা বললেন, “আচ্ছা ভাবি, ছাত্রলীগকে নিয়ে কী করি বলেন তো। ছেলেগুলোকে  তো কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না।”
“আরে আপা। আমার সময় আমার ছাত্রদল কম করেছে নাকি! সরি আপা।”
“কেন! সরি কেন?” শেখ হাসিনার কন্ঠে বিষ্ময়।
খালেদা জিয়া বললেন, “কিছুদিন আগে সংসদে আমার দলের কিছ সাংসদ চাচাকে (বঙ্গবন্ধু)নিয়ে যে নোংরা কথাগুলো বলেছে, সত্যিই সেটা দুঃখজনক। আমি তাদের হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।”
“ক্ষমাতো আমারো চাওয়া দরকার। আমার দলের সাংসদরাও তো ভাই সাহেবকে(জিয়াউর রহমান) নিয়ে বাজে কথা বলেছে। আর আপনার কাছেতো এমনিতেই বিশেষভাবে ক্ষমা চাওয়া দরকার।
কেনো? বিশেষভাবে ক্ষমা চাওয়া দরকার কেনো?
কারণ আপনাকে আপনার চল্লিশ বছরের বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছি! সরি ভাবি। বুঝতে পারছি কাজটা ঠিক হয়নি কিন্তু দলের ভেতর আমিও চাপে ছিলাম।
না আপা, এ নিয়ে আপনার হীনমন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নেই। আমারই উচিত ছিলো বাড়িটি আগেই ছেড়ে দেয়া। তাছাড়া বিশেষভাবে ক্ষমা তো আমারও চাওয়া দরকার।
কেনো?
কারণ, গণভবন থেকে আমিও আপনাকে বের করে দিলাম না! কী যে হয়েছিলো তখন! আসলে হয়েছে কি, আমার উপদেষ্টারাই মাথাটা আমার গুলিয়ে কেয়ে ফেলছে!
ওসব কথা আর টেনে না আনাই ভালো। আর উপদেষ্টাদের কথা বলছেন? আমার হযরতগণের অবস্থা দেথছেন না? যাই হোক, কাজের কথায় আসি।
আমি আপনার সাহায্য চাই।”
“ কী সাহায্য?”
“আমি চাই রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বিকভাবে আপনি আমাকে পরামর্শ দেবেন।”
“তার কোনো দরকার আছে বলে তো মনে হয় না। আপনার লেখাপড়া যোগ্যতা কোনোটিই তো আমার থেকে কম না।”
“না ভাবি, পাশ কাটিয়ে যাবেন না। আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়ছি না।”
“বলুন আমাকে কী করতে হবে?”
“প্রথমেই আপনি যা করবেন  তা হলো, আমার যে কোনো কাজ সঠিক মনে না করলে, দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী মনে হলে সাথে সাথেই আমাকে ফোন করবেন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“দেশের স্বার্থে কোনো কাজ করা উচিৎ মনে হলে  আমাকে বলে দেবেন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“আমাকে সব সময় ছোট বোনের মতো দেখবেন। আমি তো আপনার চেয়ে দুই বছরের ছোট।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। আর কিছু?”
“হ্যাঁ, এবারে আমি আমার আসল পরিকল্পনার কথাটি বলবো। অনেক ভেবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি কিন্তু না করতে পারবেন না।”
“বলুন আপা। কী করতে হবে আমাকে?”
“তেমন কিছুই করতে হবে না। আপনাকে শুধু হ্যাঁ বলতে হবে।”
“কী ব্যাপার আপা! দেশে হাঁÑনা ভোট দিচ্ছেন নাকি?
খালেদা জিয়ার কন্ঠে রসিকতা। শেখ হাসিনা বললেন, “আপনি কথাটিকে হালকা ভাবে নেবেন না ভাবি। আমি সিরিয়াসলিই বলছি।”
“আচ্ছা বলুন আমাকে কোথায় হা বলতে হবে?”
“বলছি! তার আগে বলুন আপনার বাসায় কি ফুলগুলো পৌঁছেছে?”
“কীসের ফুল?”
“আমি আপনার জন্য কিছু ফুল পাঠিয়েছি। আজ আমি এমন একটি কাজ করতে যাচ্ছি, যা এর আগে কেউ আর করেনি। তাই ফুলের শুভেচ্ছাটা আপনাকেই প্রথম পাঠালাম।”
“আপা, থ্যাংক য়্যূ।”
“আচ্ছা ভাবি, আজ কত তারিখ, আপনার মনে আছে?”
“মনে থাকবে না কেন? আজ  ১৫ই ডিসেম্বর।”
“এখন কটা বাজে?”
“সকাল ৭টা বাইশ।”
“আগামীকাল কত তারিখ?”
“কেন! ১৬ই ডিসেম্বরর্ ।”
১৬ই ডিসেম্বরের প্রথম প্রহর তো শুরু হবে আজ রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে। শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাবেন না?”
“হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?”
“আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দেননি।”
“হ্যাঁ যাবো। প্রতি বছরই তো যাই।”
“আমি এবার একটু অন্যভাবে ফুল দিতে চাই।”
“অন্যভাবে! আপনি কি হেলিকপ্টারে করে শহীদ মিনারে যাবার কথা ভাবছেন?”
“না ভাবি, আমার মাথায় একটা অন্য পরিকল্পনা এসেছে। আমি ঠিক করেছি এবার আপনি আর আমি আমরা দ’জনে মিলে এক সাথে একটি তোড়া দেবো।”
ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠলেন খালেদা জিয়া! কী বলবেন ভেবে পেলেন না। প্রধানমন্ত্রী বললেন,
“কী হলো! আপনি কিছু বলছেন না?”
“আসলে আপনি কী বলছেন আমি তো বুঝতেই পারছি না। তাহলে কী বলবো?”
“দেখুন ভাবি, আপনার আমার, আমাদের দু’জনের সৌভাগ্য যে, সারা দেশের মানুষ আমরা দু’জনের উপরই আস্থা রাখছে। বারবার রাখছে। আমাদের কি উচিৎ না তাদের আস্থার প্রতিদান দেয়া?”
“হ্যাঁ, উচিৎ তো।”
“আমাদের কি উচিৎ না দেশের মানুষের আশাÑআকাংখার প্রতীক হয়ে উঠা?”
“হ্যাঁ, তাইতো উচিৎ।”
“আপনার কি মনে আছে  একবার সেনাকুঞ্জে অতি সামান্য কিছু সময়ের জন্য একত্র হয়েছিলাম আমরা। সেদিন ওখানে আমাদের মধ্যে হাই- হ্যালো ধরনের কথা হয়েছিলো মাত্র। আর সেটা দেখে দেশের মানুষ কী খুশি হয়েছিলো। দিনের পর দিন এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় কত লেখা হলো। টেলিভিশনগুলোর টকশো তো এ ঘটনা নিয়েই মুখর ছিলো কয়েক দিন।” 
“দেশের মানুষ কিন্তু আরেকটি খবর শুনেও খুশি হয়েছিলো আপা।” বললেন খালেদা জিয়া।
“কোন্ খবর?” শেখ হাসিনার কন্ঠে বিষ্ময়! খালেদা জিয়া বললেন,
“কেন! আপনার মনে সেই ফখরুদ্দিন সরকার আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করে যখন বিশেষ কারাগারে নিক্ষেপ করলো, আমরা ছিলাম পাশাপাশি রুমে। আপনি শখ করে রান্না করতেন মাঝেÑমধ্যে। আপনি আপনার নিজ হাতে রান্না করা খাবার টিফিন কারিয়ারে করে আমার জন্য পাঠাতেন। যাই বলেন আপা, আপনার হাতের রান্না কিন্তু অসাধারণ! প্রশংসা না করে পারছি না।”
“থ্যাংক য়্যূ ভাবি।”
প্রশংসা শুনে খুশি হলেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া বললেন,
“বাইরে এসে এই ঘটনা যখন আপনি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করলেন, কী খুশি হলো মানুষ?”
শেখ হাসিনা বললেন, “আসলে হয়েছে কি ভাবি, আপনি একজন নারী, আমিও নারী। আপনি আমার সঙ্গে সুÑসম্পর্ক রাখবেন, আমি সুসম্পর্ক রাখবো আপনার সঙ্গে। বোন বোন মতন চলবো দু’জনে। কিন্তু সমস্যা তো হচ্ছে আমার দলের লোক। তারা চায় না আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মধুর হোক।”
খালেদা জিয়া বললেন, “একই অবস্থাতো আপা আমারও হয়েছে। আমার দলের নেতারাও তো চায় না আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল হোক।”
শেখ হাসিনা বললেন, “আমি তাই একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভাবি? কারো সাথে কোনো পরামর্শ না করেই। আপনি শুধু সম্মতি জানালেই ডিসিশন ফাইনাল।”
“বলেন আপা, কী সিদ্ধান্ত? আমি সর্বাত্মকভাবে আপনার সাথে আছি।”
“আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ থেকে আপনাকে সাথে নিয়েই শুরু হবে আমার পথচলা। আমি সব কাজ করার আগে আপনার পরামর্শ নেবো।”
খালেদা জিয়া বললেন, “আমি রাজি হতে পারি তবে এক শর্তে?”
“শর্ত! কী শর্ত?”
“শর্ত হচ্ছে, আগামীতে দেশের মানুষ আমাকে ভোট দিলে আপনাকেও কিন্তু থাকতে হবে আমার সাথে।”
শেখ হাসিনা বললেন, “আমি রাজি”
“প্রমীজ?”
“হ্যাঁ, প্রমীজ।”
“তবে আছি আমি আপনার সাথে।”
শেখ হাসিনা বললেন, “কাজটা আমি শুরু করতে চাই আজ থেকে।”
“বলুন আমাকে কী করতে হবে?”
“আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আজ রাত ১১ টায় আপনি শুধু তৈরি হয়ে থাকবেন। আমি আপনার বাসায় আসবো। আপনি আপনার গোলাপী শাড়িটা পরবেন। অই শাড়িতে আপনাকে যা মানায় না?”
খালোদা জিয়া বললেন, “আপনি আমার বাসায় আসবেন, এ তো খুশির কথা। কিন্তু গোলাপী শাড়ি পরে বাসায় সেঁজে গুজে তৈরি হতে হবে কেন?”
“আরে ভাবি, বুঝলেন না? আমি আপনাকে নিয়ে এক গাড়িতে বের হবো। দু’জনে মিলে বড় একটি ফুলের তোড়া কিনবো। তারপর সোজা চলে যাবো শহীদ মিনারে? এবাবে আমরা দু’জনে মিলে একসাথে একটি ফুলের তোড়া দেব। তাতে করে একটি ফুলের তোড়া হয় তো কম পড়বে। কিন্তু এতে করে দেশের মানুষ তো বটেই, ৩০ লাখ শহীদের আত্মাও খুশি হয়ে যাবে বলে আমার ধারনা।”
আনন্দে প্রায় চিমৎকার করে উঠলেন বেগম খালেদা জিয়া। বললেন, “চমৎকার আইডিয়া! আপা আমি রাজি। তবে ফুলের দাম কিন্তু আমি দেব। রিকোয়েস্ট।”
“আচ্ছা ঠিক আছে? দাম আপনিই দিয়েন।”
“থ্যাংক য়্যূ আপা।”
“তাহলে কথা ফাইনাল। রাত ১১ টা?”
“ঠিক আছে।”
“তৈরি থাকবেন কিন্তু”
“অবশ্যই।”
“কাউকে আগে থেকে বলার দরকার নেই।”
“ঠিক আছে।”
“আচ্ছা, তাহলে রাখছি এখন।”
“ঠিক আছে আপা।”
“খোদা হাফেজ ভাবি।”
“খোদা হাফেজ আপা। ভাল থাকবেন…

দরজায় প্রচন্ড জোরে ধাক্কার শব্দ শুনলাম। ঝটপট উঠে দরজা খুলে দিতেই দরজায় দাঁড়ানো আমার বন্ধুটি বললো, “কী রে! এই অবেলায়, দিনের বেলায় ঘুমোচ্ছিস? ব্যাপার কী? শরীর টরির খারাপ না তো?”
সম্বিৎ ফিরে পেলাম আমি। এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম! তাহলে এতক্ষণ যা দেখলাম, যা শুনলাম সব স্বপ্ন? দিবা স্বপ্ন? বারবার মনে হলো ঘুমটি ভাঙলো কেন? এত সুন্দর একটি স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেল! এই ঘুম যদি আর না ভাঙতো! এই স্বপ্ন যদি স্বপ্ন না হতো!

কিন্তু কী করবো! প্রকৃতির পরিকল্পনাকে বদলে দেয়ার ক্ষমতা তো আমার নেই। তবে বার বার শুধু মনে হতে লাগলো, ইস! যদি এমন হতো!

 

Source : http://www.rashidjamil.blogspot.com/