তসলিমা নাসরিন মিডিয়ার ‘প্রস’

সম্পাদক মিনার মাহমুদ বলেন, তসলিমা একজন মিডিয়ার প্রস। সে মেরেও জিততে চায়, কেঁদেও জিততে চায়। একজনকে এক জায়গায় জিততে হবে, কিন্তু সে দু’জায়গায় জিততে চায়। মিডিয়া পাবলিসিটির প্রতি তার ভীষণ দুর্বলতা। তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তসলিমার দেশে ফিরতে কোন বাধা নেই। দাউদ হায়দারও দেশে ফিরতে পারেন। তাদের দেশে ফিরতে কোন অসুবিধা দেখছি না। দেশের মানুষ তসলিমা নাসরিনের কথা ভুলে গেছে। সে কী লিখেছে, এ নিয়ে আর কারো মধ্যে কৌতুহল নেই। তসলিমা মিনার মাহমুদদেশে ফিরলে ইমিগ্রেশনে আটকে গেলে সে আমাকে ফোন করতে পারে। আমি নিশ্চিত সরকার তাকে দেশে ফিরতে বাধা দেবে না। দেশে ফেরা নিয়ে ইস্যু তৈরি করে সে অহেতুক খবরের জন্ম দিতে চায়। গত বুধবার দুপুরে নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথাগুলো বলেন মিনার মাহমুদ।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে লাভ হয় শেখ পরিবারের। আওয়ামী লীগ যখন হারে, তখন পুরো দেশ হারে। কারণ, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক দল। আবার বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জিয়ার পরিবার ও বিএনপি’র সংশ্লিষ্টরা লাভবান হয়। বিএনপি হারলে দেশ জিতে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে রাজনীতিবিদ হবার ক্ষেত্রে একটা ধারাবাহিকতা ছিল। একজন ছাত্র রাজনীতি করে পরে রাজনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত হতেন। এই অর্থে আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতিবিদের জন্ম হতো, এখন চেম্বার অব কমার্স থেকে রাজনীতিবিদের জন্ম হচ্ছে।

বাংলাদেশের মিডিয়া প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মিনার মাহমুদ বলেন, যারা খবরের বিষয়বস্তু, তারাই এখন মিডিয়ার অথরিটি। তারা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা মিডিয়া দস্যু। এই মিডিয়া দস্যুরা বড় রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতাও পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দেশে সাংবাদিকতা পেশা এখন গ্লামারস পেশা। আগে এই পেশায় কেউ আসতো চাইতো না। যে কিছু করতে পারতো না, সে সাংবাদিক হতো। এখন তা পাল্টে গেছে। দেশে এখন প্রায় সাংবাদিকরা গাড়ি নিয়ে ছুটেন। আমিই একমাত্র সম্পাদক, যার গাড়ি নেই। ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার গ্রাসে প্রিন্টিং মিডিয়ার ভয়ের কিছু নেই। বরং ইলেট্টনিক্স মিডিয়ার বিজলীবাতির ঝলকে সাধারণ মানুষের মধ্যে খবর জানার আরো আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা আরো বেশি তথ্য জানতে প্রিন্টিং মিডিয়ার শরণাপন্ন হচ্ছে। তথ্যের চাহিদা পূরণ করে প্রিন্টিং মিডিয়া। এই প্রিন্টিং মিডিয়ার গুরুত্ব কখনও কমবে না। এর চাহিদাও ফুরাবে না। তাই ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সঙ্গে প্রিন্টিং মিডিয়ার বিরোধ সৃষ্টি হবার সুযোগ নেই।

এখনকার তরুণরা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে, দেশ নিয়ে ভাবে না। সবাই দ্রুত উপরে উঠার সিঁড়ি খোঁজে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। আগে দেখতাম ৫জন আড্ডা দিলে সেখানে ৩জন ধূমপায়ী, এখন ধূমপায়ীর সংখ্যা কমে গেছে। দেশের মেধাবীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক মেধাবী দেশ ছেড়ে দেন। এটা অপরিসীম উচ্চাঙ্খার কারণে হয়। আমি মনে করি, এটা ঠিক নয়। আমিও দেশ ছেড়ে দিয়েছিলাম ১৯৯১ সালে। গণতন্ত্রের শুরুতে দেশ ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে রয়েছেন, তারা ৯ ডিজিটের নম্বর (স্যোসাল সিকিউরিটি নম্বর) নিয়ে। অথচ তারা নিজের দেশে একেকজন ব্যক্তিত্ব। আমি আগেও বলেছি, প্রবাস জীবন দেয়াল ও তালাহীন এক কারাগার। এখনও আমার তাই মনে হয়। আমরা যে শ্রম বিদেশে দেই, এ রকম শ্রম দেশে দিলে দেশের চেহেরাই বদলে যেত। বাংলাদেশ অপারচুনিটির কান্ট্রি, সপক্ষে উদাহরণ টানতে গিয়ে বলেন, এফবিসিসিআই এর সভাপতি এবং হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান (দৈনিক সমকাল পত্রিকার মালিক) এ. আজাদ শুন্য থেকে বড় শিল্পপতি হয়েছেন। এমন অনেকে আছেন, ব্যবসা করে শিল্পপতি হতে পেরেছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আনুপাতিক হারে বাড়েনি, তবে মুষ্টিমেয় ব্যক্তিদের কাছে কোটি কোটি টাকা চলে গেছে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা গুনতে হলে কোটি পেরিয়ে যাবে। মুদ্রা স্ফীতির সুযোগ নিয়ে একটি গ্রুপ শত শত বা হাজার কোটি টাকা করায়ত্ব করেছে। ধনী হবার এই অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশ অপরচুনিটি কান্ট্রি। এই দেশে সকালে এক হাজার কোটি বিনিয়োগ করে বিকেলে এগার কোটি টাকা বানিয়ে ফেলা যায়। শেয়ারবাজের তাই হয়েছে। শেযারবাজার একটা ফটকাবাজির বাজার। আগে কালো টাকা বিনিয়োগ হতো ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে, এখন কালো টাকা বিনিয়োগ হয় শেযারবাজারে।

১৮ বছর পর নতুন করে বিচিন্তা’র প্রকাশনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৮ বছর পর প্রকাশনায় ফিরে গিয়ে সাপ্তাহিক ‘বিচিন্তা’কে বাংলাদেশের বাজার জয় করতে হয়নি। প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিচিন্তা আগের মতো পাঠক সমাদৃত হয়েছে। বিচিন্তা এখন দেশের সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক। যেখানে অন্যান্য সাপ্তাহিক ৯৬ পাতার দাম (রঙিন প্রচ্ছদ) ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, সেখানে বিচিন্তা পুরানো স্টাইলে ৩২ পাতার সাপ্তাহিকটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। উল্লেখ্য, স্বৈরাচারি সরকার এরশাদের শাসনামলে মিনার মাহমুদের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক বিচিন্তা পাঠকমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে মিনার মাহমুদ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। ২০০৯ সালে তিনি আবার দেশে ফিরে যান এবং ১০ অক্টোবর ২০১০ থেকে দ্বিতীয় দফায় বিচিন্তার প্রকাশনা শুরু হয়।

সূত্র: বেঙ্গলি টাইমস