তামাক চাষ বন্ধ করায় হুমকীর মুখে বন কর্মকর্তারা

মুখে রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পাহাড়ি ভিলেজাররা ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে নানা ধরণের রবিশস্যেও চাষ করলেও সাবেক ভিলেজার হেডম্যানের নেতৃত্বে একটি মহল বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নিয়ে বিভ্রান্তিকর সৃষ্টি করছে। তামাকের করালগ্রাস থেকে বের হয়ে আসতে পেরে বন ভিলেজার ও উপজাতীয় জুম চাষীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, মাতামুহুরী রেঞ্জের ১ লক্ষ প্রায় ৩ হাজার একর বন ভূমিতে ২ শতাধিক ভিলেজার ও কয়েক সহস্রাধিক জুমিয়া পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারকে অধিক লাভের লোভের ফাঁদে ফেলে পুঁজিবাদী তামাক কোম্পানী ও স্থানীয় ভিলেজার হেডম্যান গত দেড় দশকের বেশী সময় ধরে সরকারী বন ভূমিতে তামাক চাষের বিস্তার ঘটায়। বন এলাকায় স্থাপন করা হয় সাড়ে তিন শতাধিক তন্দুর। প্রতি তামাক মৌসুমে এতে হাজার হাজার মন রিজার্ভের গাছ পোড়ানো হতো।

গত বছরের এপ্রিলে বান্দরবান জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, মাতামুহুরী রেঞ্জসহ সরকারী বন ভূমিতে তামাক চাষ করতে দেয়া হবেনা এ সিদ্ধান্তের পর লামা বন বিভাগীয় কর্মকর্তা ও মাতামুহুরী রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে গত সেপ্টেম্বর থেকে তামাক চাষ বিরোধি অভিযান পরিচালনা করা হয়। বন বিভাগের তরফ থেকে বলা হয়, তামাকের পরিবর্তে রবিশস্য চাষ করার জন্য। চাষীরা বন বিভাগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তামাক চাষ বর্জন করতে শুরু করলে এর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগে যায় ওই রেঞ্জের তথাকথিত ভিলেজার হেডম্যান ও তামাক কোম্পানীর লোকজন। ইতোমধ্যে এ স্বঘোষিত ভিলেজার হেডম্যানের ইন্ধনে মাতামুহুরী রেঞ্জের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে মিথ্যা অভিযোগ সৃজন করেছে।

আলীকদমের মিরিংপাড়া বাসিন্দা কেংক মুরুং, জানালী পাড়ার বাসিন্দা পাচুয়া মুরুং, মহেশখালী ঝিরির বাসিন্দা ক্রিওয়াই মুরুং ও বড় ভিলার বাসিন্দা ক্রংলিং মুরুং এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা তামাক চাষ বর্জন করতে পেরে খুশি। কিন্তু স্থানীয় ভিলেজার হেডম্যান তাদের পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে চালাচ্ছে। কালাইয়ছড়া বলুঝিরির বাসিন্দা পুভাস ত্রিপুরা ও সুভাষ ত্রিপুরা জানান, ভারপ্রাপ্ত ভিলেজার হেডম্যান উক্যজাই তাদের পাড়ায় গিয়ে পাড়ার লোকজন থেকে পুনর্বাসন তালিকায় নাম দেয়ার নামে জনপ্রতি পাঁচশ’ টাকা হারে আদায় করেন। পরে ওই তালিকা দিয়েই মাতামুহুরী রেঞ্জের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সৃজনের কাজে ব্যবহার করেছে।

মাতামুহুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশীদ জানান, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে মাতামুহুরী রেঞ্জের সরকারী বনভূমি থেকে তামাক চাষ উচ্ছেদ করায় তারা এখন হুমকী মুখে পড়েছেন। এ রেঞ্জের সাবেক ভিলেজার হেডম্যান উক্যজাই এর নেতৃত্বেই সরকারী বনভূমিতে তামাক চাষ হতো। এখন তার হুমকীর মুখেই তিনি বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন।

 

মমতাজ উদ্দিন আহমদ
আলীকদম প্রতিনিধি