উপজাতীয় ছাত্রদের খাবার নিয়ে ঠিকাদারের তেলেসমাতি

৭৫ জন দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীর হোস্টেলের খাবার নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার। প্রতিদিনের খাবার দেয়া হচ্ছে ঠিকাদারের মনগড়া। এক্ষেত্রে হোস্টেল সুপার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের দেখভালের নিয়ম থাকলেও তারা অজ্ঞাত কারণে চুপ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত খাবার মেন্যু অনুযায়ী সোমবার দুপুরে খাবারে তরকারির আইটেম ছিল মাছ। গত সোমবার দুপুরে খাবারের সময় এ প্রতিবেদকসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান টিপু আলীকদম উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখতে পান, ছাত্র-ছাত্রীদের খাবারে দেয়া হয়েছে আলু ও ডাল।

নির্ধারিত মেন্যু অনযায়ী কেন মাছ দেয়া হয়নি জিজ্ঞাসা করলে সংশ্লিষ্ট বাবুর্চিরা জানান, ঠিকাদার কর্তৃক তাদেরকে যা সরবরাহ করা হচ্ছে সেইমতেই রান্না হয়ে থাকে। মাছের বদলে শুধুমাত্র আলু কেন দেয়া হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে আবাসিকের ছাত্ররা জানায়, তারা জানেনা। তবে ছাত্রদের দাবী, সোমবার দুপুরে তাদের খাবার মেন্যুতে ছিল মাছ। নির্ধারিত খাবার মেন্যু অনুযায়ী তাদের খাবার পরিবেশন করা হয় না।

জানা গেছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত সাপ্তাহিক খাবার মেন্যু মতে, প্রতিদিন সকাল ও রাতের খাবারে সব্জি থাকার কথা। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুরে মাছ, মাংস ও ডিম থাকার কথা রয়েছে। অধিকন্তু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার হোস্টেল সুপার ও শিক্ষা অফিসের সাথে আঁতাত করে মেন্যু অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। খাবারে উন্নতমানের পাইজাম চাল রান্নার নিয়ম থাকলেও মোটা চালই রান্না হয়। প্রতিবেলা জনপ্রতি ৪০ গ্রাম মসুর ডাল রান্নার নিয়ম রয়েছে।

সিডিউল মতে ৭৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩ কেজি মসুর ডাল রান্নার নিয়ম থাকলেও রান্না হয় ১ কেজির নীচে। মাছ জনপ্রতি ১১০ গ্রাম ও মাংস ১০০ গ্রাম দেয়ার কথা থাকলেও তার অধিকাংশই চলে যায় ঠিকাদারের পকেটে। অধিকাংশ সময়ই কম দামের পাঙ্গাস মাছ রান্না করা হয় বলে ছাত্ররা জানায়। প্রতিমাসের খাবারের বিলের কাগজে আবাসিকের দু’জন ছাত্রের স্বাক্ষর নেয়ার নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গত নভেম্বর থেকে ছাত্রের স্বাক্ষর জাল করে চলেছে বলে জানা গেছে। অভিযোগে প্রকাশ, মূল ঠিকাদার কোনদিনই অত্র আবাসিকে আসেননি। তিন হাত বদল করে জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমেই খাবার সরবরাহ করায় এহেন অনিয়ম ও কারচুপি হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের সরেজমিন যা দেখেছেন তার বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষার অফিসার নাসরিন সুলতানা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামানকে জানানো হলে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার বাসুদেব কুমার সানার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় যাচ্ছি, এ অনিয়মের সংবাদটি জেলা শিক্ষা অফিসারের আমলে দেয়া হবে।

হোস্টেল সুপার আপ্রু মং মার্মা জানান, সোমবার তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নিয়ে চকরিয়া যাওয়ার কারণেই ঠিকাদার ঠিকভাবে খাবার সরবরাহ করেনি। ঠিকাদার প্রতিনিধি রবিদয় তঞ্চঙ্গ্যা প্রু জানান, তিনি ওইদিন বান্দরবান জেলা সদরে যাবার কারণেই দুপুরে মাছ রান্না হয়নি। পরে তিনি তা পুষিয়ে দিবেন।