মির্জা ফখরুলকে ঠেকাতে একটি অংশের দৌড়ঝাঁপ

বা দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে যাতে তাকে নিয়োগ দেয়া না হয় এ প্রচেষ্টায় বিএনপির একটি অংশ সক্রিয় রয়েছে। তারা যেকোনো মূল্যে মির্জা ফখরুলকে ঠেকাতে জোটবদ্ধ হয়েছেন। এ প্রক্রিয়ায় দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংঠনের কেন্দ্রীয় কয়েকজন সিনিয়র নেতা দৌড়Ñঝাঁপ করছেন।

বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বত্র একই প্রশ্ন কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী মহাসচিব। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পর আনুষ্ঠানিকভাবে মির্জা ফখরুলকেই মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেবেন নাকি অন্য কাউকে নিয়োগ করবেন, কিংবা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মাধ্যমেই দল চালাবেন এ প্রশ্ন এখন দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। অবশ্য ইতিমধ্যেই দলের গঠনতন্ত্রে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কোনো পদ নেই বলে স্পস্টই বলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ। তার সুরে সুর মিলিয়েছেন আরো কয়েক নেতা।

বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পরে মহাসচিব প্রশ্নে জোরালো কোনো কথাবার্তা না ওঠলেও গত ২০শে মার্চ চিকিৎসার জন্য সৌদি আরব যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের মাধ্যমে মির্জা ফখরুলকে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান।   তার এ নির্দেশই জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে দলটিতে। মির্জা ফখরুল মহাসচিব না ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব না মহাসচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভায় নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্যে এ নিয়ে বাক বিতণ্ডাও হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রতিটি প্রেস রিলিজে তাকে মহাসচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলে সম্মোধন করা হয়। আবার দলের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন সভা সেমিনার কিংবা প্রেস ব্রিফিংয়ে তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে সম্মোধন করা হচ্ছে। কেউ কেউ তাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবেও সম্মোধন করছেন।

চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলের ভেতরে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক গ্র“পিং ও লবিং। নিজ গ্র“পের পক্ষে সমর্থন আদায়ে সিনিয়র থেকে মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে চলছে দৌড়-ঝাঁপ। কেউ মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল যাতে নিয়োগ পান সে চেষ্টায় রত। কেউ রয়েছেন যেকোনো মূল্যে মির্জা ফখরুলকে ঠেকাতে হবে।

যারা মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব হিসেবে দেখতে চান তাদের যুক্তি হলো, তিনি বিনয়ী ও মার্জিত আচরণের অধিকারী, তার রয়েছে স্বচ্ছ ইমেজ, তিনি শারীরিকভাবে সক্ষম ও সুস্থ্য, দলের হাইকমাণ্ডের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে তার প্রতি। এছাড়া দেশী বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে তার রয়েছে অত্যন্ত সুসম্পর্ক। যারা তার বিরোধীতা করছেন তাদের যুক্তি হচ্ছে, নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার তেমন একটা যোগাযোগ নেই, সংগঠন পরিচালনায় তার তেমন দক্ষতা ও অভিক্ষতা নেই। এছাড়া তিনি আমলাতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন মানুষ। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তিনি নীরব অবস্থান নিয়েছিলেন।

মির্জা ফখরুল প্রশ্নে বিএনপি নেতারা এখন স্পষ্ট ২টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক পক্ষের যুক্তি দলের দুঃসময়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় অভিজ্ঞ ও ত্যাগী কাউকেই মহাসচিব করা হোক। যার সঙ্গে কাজ করতে কেউ বিব্রত হবেন না। অন্য পক্ষের যুক্তি চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য তারুণ্যের প্রয়োজন।

এ ইস্যূতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চেয়ে নেতারা এখন পরস্পরের বাসা-বাড়িতেই ছুটছেন। অংশ নিচ্ছেন একের পর এক গোপন বৈঠকে। প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার বিরোধীরা মির্জা ফখরুলের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকে মেনে নিতে চাচ্ছেননা দেলোয়ার সমর্থকদের একটি অংশ। তারা ফখরুলকে ঠেকাতে বিকল্প লোক খুঁজছেন। তাদের তালিকায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার এবং  তরিকুল ইসলামের নাম রয়েছে। জানা গেছে, এম কে আনোয়ার ও তরিকুল ইসলাম এসব নেতাদের কাছে তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তাদের শারিরিক অসুস্থ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন এ পদে আগ্রহী হলেও তার প্রশ্নে হাইকমাণ্ডের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া মহাসচিব মনোনয়নের প্রশ্নে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পছন্দকেই বেশী গুরুত্ব দেবেন। সে হিসেবে দলে বিরোধীতা থাকলেও তারেকের গুডবুকে এখনো মির্জা ফখরুল রয়েছেন। বড় ধরণের কোনো অঘটন না ঘটলে মির্জা ফখরুলই হচ্ছেন দলের পরবর্তী মহাসচিব তা অনেকটাই নিশ্চিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পর দলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় ফয়সালা করবেন। তার  ফেরার পরই জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে আলাপ আলোচনা করে কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেখানে মহাসচিব প্রসঙ্গেও সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। 

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দলে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগীতা থাকাই স্বাভাবিক। তবে চেয়ারপারসন যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দেবেন।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ায় শূন্য হয়ে পড়া মহাসচিব পদ পূরণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।