পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেল ২৫ জন কিশোরী

রক্ষা পেয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নগরবাড়ি ও সুজনকাঠী গ্রামের চার স্কুল ছাত্রীসহ অন্যান্য স্থানের আরো ২১ জন স্কুল ছাত্রীরা। গতকাল রবিবার ভোর ৬ টায় তারা পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করে ওইদিন বিকেলে বাড়িতে ফিরেছে। এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

জানাগেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার নগরবাড়ি গ্রামের আকবর খানের কন্যা ও সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী আছমা খানম (১৫), একই গ্রামের আবুল হোসেনের কন্যা ষষ্ট শ্রেনীর ছাত্রী নিপা খানম (১৪), ফজলুল হকের কন্যা সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী কাকলী খানম (১৪) ও সুজনকাঠী গ্রামের করম আলীর কন্যা সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী সুলতানা খানম (১৫) শনিবার দুপুর তিনটার দিকে আগৈলঝাড়া সদরের স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমথ্যে একটি মাইক্রোবাসযোগে পাচারকারীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের অপহরন করে।

অপহৃতা সুলতানা খানম জানায়, ওইদিন রাত দশটার দিকে তাদের ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি ফ্লাট বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে অন্যান্য জেলার আরো ২১ জন স্কুল পড়ুয়া সুন্দরী কিশোরীদের অপহরন করে আনা হয়। আছমা খানম জানায়, সেখানে নিয়ে তাদের রাখার পর তারা অন্যান্য স্থানের অপহৃতাদের সাথে আলাপকরে জানতে পারেন গত দু’দিনে দেশের বিভিন্নস্থান ওইসব যুবতী ও কিশোরীদের পাচারকারীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরন করে এখানে এনে রেখেছেন। উপায়অন্তুর না পেয়ে ওইদিন (রবিবার) রাতে আটক এক যুবতীর সাথে থাকা মোবাইল ফোনে আছমা খানম বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের জানায়। রবিবার রাতেই আছমার মামা হালিম জমাদ্দার এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন (যার নং-৪১৭)। পুলিশ তাৎক্ষনিক বিষয়টি মিরপুর থানা পুলিশসহ র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন।

অপহৃতা কাকলী খানম জানায়, রাতে তারা সবাই (২৫ জন) মিলে পাচারকারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য নানা পরামর্শ করেন। রবিবার ভোর ৬ টার দিকে তাদের ২৫ জনের জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে আনুমানিক ৩৫ বছরের এক মহিলা তাদের রুমে প্রবেশ করেন। এসময় অপহৃতা ২৫ কিশোরীরা একত্রিত ভাবে রুমের দরজা বন্ধ করে ওই মহিলাকে মারধর করে তার পরনের কাপর দিয়েই হাত, পা ও মুখ বেঁধে কৌশলে ফ্লাট বাড়ির রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এ সময় পাচারকারীরা বাড়ির অন্যান্য রুমে ঘুমিয়ে ছিলো। বাহিরে এসে অপহৃতারা যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। গাবতলী বাসষ্ঠ্যান্ডে এসে নিপা খানম একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে বিষয়টি তার পরিবারের কাছে জানায়। তাৎক্ষনিক তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গাবতলীতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আগৈলঝাড়ার নগরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আখিউল হাওলাদারকে অবহিত করেন। তিনি (আখিউল) তাৎক্ষনিক গাবতলী বাসষ্ট্যান্ডে পৌঁছে অপহৃতা স্কুল ছাত্রীদের উদ্ধার করে।

আখিউল হাওলাদার জানায়, অপহৃতা স্কুল ছাত্রীদের নিয়ে তাদের কোথায় আটকিয়ে রাখা হয়েছিলো সেখানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হলেও তারা (অপহৃতারা) সঠিক কোন বাড়ির বর্ননা দিতে পারেনি। অবশেষে অপহৃতাদের রবিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আগৈলঝাড়ায় নিয়ে আসা হয়। এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি (ভারপ্রাপ্ত) এস.আই জসিম উদ্দিন জানান, প্রাথমিক তদন্তে স্থানীয় দু’যুবক অপহরনের সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ও অপহৃতাদের সাথে গভীর আলাপ করে অপহরনের সাথে জড়িত স্থানীয়দের গ্রেফতার পূর্বক অপহরকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।