মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস : প্রসঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা

৩ মে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশেও পালন করা হয়। গণমাধ্যম স্বাধীন হলেই তার সুফল সরকার তথা জনগণই পায়। এবছর ইরানি সাংবাদিক আহমেদ জেইদাবাদি ইউনেস্কো প্রবর্তিত গুইলারমো কানো বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতার পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। লেখার শুরুতে তাকে অভিনন্দান জানাই। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো পূর্বের তুলনায় অনেকটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষানসিক হিসেবে সাংবাদিকতা করেন তাদের সম্মুখীন হতে হয় নানা সমস্যার। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলেই বিশাল মনের কথা মনে হয়। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমারও বিশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ান, যারা পড়েন তারা অনেক বড় মনের অধিকারী হয়ে থাকেন। এখানে যারা আসেন তাদের চিন্তা চেতনাও অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। তারা শুধু নিজের কিংবা পরিবারের জন্য নয়, পুরো দেশের সব মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য লেখাপড়া করেন, দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন বুকে ধারন-লালন করেন। বাংলাদেশে যে কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলোতে দেশের প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত পত্রিকার একজন সংবাদদাতা বা প্রতিনিধি থাকেন। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের খবরাখবর সরবরাহ করেন। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ক বিভাগ নেই। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আছে সেখানে বেশিরভাগ ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই পত্রিকায় শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা যে আজ অনেকটা ঝুকিপূর্ণ তা হারে হারে টের পাচ্ছে সবাই। পত্রিকা খুললে যেমন পড়া যায় অহরহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন-রাহাজানিসহ নানা খবর তেমনি খবরের শিরোনাম হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া কোন শিক্ষানবিস সাংবাদিক নির্যাতন, শোকজ নোটিশ, বহিষ্কার, গ্রেপ্তার এমনকি কোথাও কোথাও পুলিশি মামলাও ঠুকে দেয়া হচ্ছে। পত্রিকায় যারা কাজ করেন তারা এপথ যে বন্ধুর পথ নয় এমনটি জেনেই এসেছেন তাই তাদের ভয়-ভীতি পরোয়া না করেই কাজ করতে হয়। তাদের নিয়মিতই লিখতে হয় চাঁদাবাজি, দুর্নীতি আর অপরাধের খবর। তাতে নাখোশ হয়ে অপরাধীরা। হামলা করে থাকে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের ওপর। এমন খবর সারাদেশের কোথাও না কোথাও হচ্ছে। পত্রিকার প্রতিনিধিরাও রোষানলে পড়েন ক্ষমতাবান ব্যক্তির। হামলা-মামলা যেন পত্রিকার সংশ্লিষ্টদের পেতেই হবে এটা যেন দেশের ঐতিহ্য। বাদ যান না পত্রিকার সম্পাদকও। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের কাদের ভয় থাকবে? এখানে তো কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি থাকে না। তারপরও সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন, নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। পত্রিকার সব সংবাদই শতভাগ তথ্য নির্ভর করার চেষ্টা থাকে সবার। তারপরও কখনো কখনো তথ্যের ঘাটতি থাকে সে জন্য যে কেউ সংবাদের প্রতিবাদ পাঠাতে পারেন। শেষ পর্যায়ে আদালতে মানহানির অথবা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলাও করতে পারেন। একজন নাগরিক হিসেবে তার সব অধিকারই সংবিধান দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে যা ইচ্ছে তাই করা যায় না। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষানবিস সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা বেশ কয়েকবছর যাবত ঘটছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা মিথ্যা মামলার আসামী হয়েছেন। শুধু প্রশাসনের রোষানলের পড়ে। সম্প্রতি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও কোন কিছুর তোয়াক্কা করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে নিয়ে একটি সংবাদ স্থানীয় একটি দৈনিকে পত্রিকায় ছাপা হয়। ওই সংবাদকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ছাত্রকে একবছরের জন্য বহিষ্কার করে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তার আবাসিক হলের কক্ষও ভাংচুর করা হয়। কম্পিউটারসহ মূলবান জিনিসপত্র পুড়ে ক্ষতি হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে যাওয়া কতটা কষ্টের তা ভুক্তভূগীই টের পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক সংবাদের প্রতিবাদ পাঠাতে পারতেন, প্রয়োজনে মামলাও করতে পারতেন কিন্তু তিনি না করে ওই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের আলটিমেটাম দিলেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও শেষ পর্যন্ত বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক নতুন নজির স্থাপন করলেন। ওই সংবাদের ওপর যে তদন্ত কমিটি হয় তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ ও উপদেষ্টা সাংবাদিককে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিলেন বলে জানা গেছে। ভিসি শেষ পর্যন্ত এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে তদন্ত কমিটির সুপারিশ কিছুটা রক্ষা করলেন। ছাত্র কল্যাণ ও উপদেশ পরিচালকের এমন সুপারিশ জেনে কষ্ট লেগেছে এইভেবে যার ছাত্রের পক্ষে কিছু করার ছিল তিনি তা না করে আজীবনের বহিষ্কারের সুপারিশ করলেন! এও জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে কর্তাব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সাংবাদিক থাক তা চান না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকের হামলা মামলা শোনা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সাংবাদিক প্রয়োজন নেই এমনটি শোনা যায় নি। কিন্তু শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এমনটি শোনা গেলো। যে সাংবাদিক বহিষ্কার হয়েছেন তিনি আমার সিনিয়র সহকর্মী। একই সাথে প্রেসক্লাবে বসে সংবাদ পাঠিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো কোন সংবাদ কীভাবে প্রকাশ করা যায় এমনটি নিয়ে আলাপ করেছি কিন্তু আজ কিনা তার শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মুখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা আছে বলেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্য দেশ তথা বিশ্ব জানতে পারছে মুহূর্তের ভেতর। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম তথা দেশেরই ভাবমূর্তি প্রকাশ পায়। সত্যিই অবাক লাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ নেয়ায়। সাংবাদিক হিসেবে নয় একজন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের নিকট আবেদন রাখতে চাই বহিষ্কারাদেশের আদেশটি পুর্নবিবেচনা করার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আর সুখ্যাতি কর্মকাণ্ডগুলো দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সুনাম যারা চারদিকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে তাদের এমন একজনকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিবেন এমনটি প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সব সাংবাদিকের। বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবসে এমনটি কামনা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি। আশা রাখি একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করে অন্ততপক্ষে একটু সদয় হবেন।