সন্ত্রাস দমন, নারী শিক্ষা ও সক্ষমতা উন্নয়নে তার অসামান্য অবদান ও কৃতিত্বের জন্য নিউ জার্সি সিনেট সর্বসম্মতভাবে রিজ্যুলিউশন পাশ করে সম্বর্ধনা জানায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফররত সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্য সিনেটের (উচ্চ কক্ষ) প্রেসিডেন্ট স্টিফেন সুইনীর (Stephen M. Sweeney) বিশেষ আমন্ত্রনে ২৩মে সোমবার নিউজার্সি সিনেট অধিবেশনে যোগদান করেন। উল্লেখ্য নিউজার্সি সিনেটে এখন চলছে বাজট অধিবেশন।
নিউইয়র্ক থেকে ৬৫ মাইল দূরে গার্ডেন ষ্টেট হিসাবে খ্যাত নিউজার্সি রাজ্যের রাজধানী ট্রেনটনে এসে খালেদা জিয়া পৌছান দুপুরে। নিউজার্সি ষ্টেট হাউজের ভিআইপি গেটে পৌছলে ৭৬ বছর বয়স্ক সিনিয়র সিনেটর লরেটা ওয়েনবার্গ এবং নিম্নকক্ষ এসেমব্লির ডেপুটি স্পীকার উপেন্দ্র চিভুকুলা (Upandra J. Chivukula) ফূলসহ দুটি শিশুকে নিয়ে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। সেখান থেকে মিসেস জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় “মিট এন্ড গ্রিট” এর জন্য নির্ধারিত কক্ষে। সেখানে খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেনেসিনট প্রেসিডেন্ট স্টিফেন সুইনী। একে একে পরিচিত হন এবং ছবি তোলেন হয় সিনেটে সরকারীও বিরোধী দলের সিনেটররা। এরপরে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় সিনেট অধিবেশন কক্ষে।
প্রারম্ভিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেগম জিয়ার সম্বর্ধনার কার্যক্রম শুরু হয়। সিনেট প্রেসিডেন্টের আহবানে প্রথমেই সিনেটে সেক্রেটারী কেইন্ট হিকস খালেদা জিয়ার জীবন বৃত্তান্ত ও কৃতিত্ব সিনেটে উপস্থাপন করেন। এরপরে সিনেট প্রেসিডেন্ট খালেদা জিয়ার অবদান ও কৃতিত্বের প্রশংসা করে ও অভিনন্দন জানিয়ে একটি বিল উপস্থাপন করেন। বিলটির ওপরে বক্তব্য রাখেন প্রভাবশালী ডেমোক্রেট সিনেটর জিম হুইলেন, সংখ্যাগরিষ্ট দলের প্রধান বারবারা বুনো, ও সিনিয়র সিনেটর লরেটা ওয়েনবার্গ। সিনেটর বুনো বেগম জিয়ার কর্মকান্ডের প্রমংসা করেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষা উন্নয়নে বেগম জিয়ার কর্মকান্ডেকে অনুকরনীয় বলে উল্লেখ করেন, I salute you. তারা বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের বিষয়ে গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেন। বারবারা আলোচনা শেষে বিলটি সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয। সিনেট প্রেসিডেন্ট আসন থেকে নেমে আসেন এবং সদ্য পাশ হওয়া রিজলিউশনটি খালেদা জিয়ার হাতে হস্তান্তর করেন, এবং ফটো সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটররা সকলে দাড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করে। এ সময় সিনেট অধিবেশনে উপস্থিত শত শত দর্শকও মুহুর্মুহ করতালেতে সামিল হয়। অতঃপর সিনেট প্রেসিডেন্ট খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানান তার ভাষণ দেয়ার জন্য। সিনেটের মেজরিটি দলের প্রধানের আসনে বসা খালেদা জিয়াকে অভূতপূর্ব সম্মান দেখিয়ে সিনেট সেক্রেটারীর মাইক থেকে ভাষণ দিতে দেয়া হয়। খালেদা জিয়া নিউ জার্সি সিনেটের এ উষ্ঞ অভ্যর্থনা ও সম্বর্ধনা জানানোর জন্য সিনেট প্রেসিডেন্টসহ সিনেটরদের ধন্যবাদ জানান।
মিসেস জিয়া তার ভাষনে বেগম জিয়া গণতন্ত্র, সন্ত্রাস দমন, মানবাধিকার, সুশাসন, ও জনগনের জীবনমান উন্নয়নে তার এবং দলের ও বাংলাদেশের আগ্রহ ও প্রচেষ্টার পুর্নব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু উন্নয়নশীল দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বেগম জিয়া। নিউ জার্সিতে বসবাসরত হাজার বাংলাদেশী-আমেরিকানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের কথা স্মরণ করেন মিসেস জিয়া। তিনি তাদের মূলধারার সাথে একাত্ব হয়ে দেশের ও নিজেদের জন্য কাজ করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠান শেষে মিসেস জিয়াকে বিদায় জানান সিনেট প্রেসিডেন্টের পক্ষে সিনেটার ওয়েনবার্গ। বিদায়ের আগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নিউজার্সি ডেমোক্রেট পাটির পক্ষে সোলায়মান সেরনিয়াবাদ, গিয়াসউদ্দিন, দিদার, মিসেস নার্গিস প্রমুখ খালেদা জিয়ার এ বিরল সম্মান লাভের জন্য ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানায়।
নিউ জার্সি সিনেটের অধিবেশনের এ অনুষ্ঠানে বেগম জিয়ার সফরসঙ্গী সাবেক মন্ত্রী ডঃ ওসমান ফারুক, রাষ্ট্রদুত শমসের মবিন চৌধুরী, ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, নাজিমউদ্দিন আলম, শামসুল আলম, মতিউর রহমান লিটু প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরকঃ আশিক ইসলাম, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব।