শ্রমিক নেতার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি লুটে নিতে মরিয়া মেয়র হিরন!!!

সিটি কর্পোরেশনে মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মিশন মহানগর শ্রমিকলীগের আহবায়ক আফতাব হোসেনের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি লুটে নেয়া কিংবা বাজেয়াপ্ত করা। মিশনের ধারাবাহিকতায় শ্রমিক নেতার  প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙ্গে আজ বুধবার দুপুরে মালামাল লুটে নিয়েছে পুলিশ। এক্ষেত্রে আদালতের কোন ধরনের অনুমতি নেয় নি পুলিশ। মেয়রের ইঙ্গিতেই এসব দখল সন্ত্রাস করা হচ্ছে বলে দাবী করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক নেতা আফতাব। অবশ্য পুলিশ বলছে মামলার আলামতের স্বার্থে মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এতে আদালতের অনুমতি নেয়ার দরকার নেই।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সাইয়েদ উদ্দীন আহমেদ মধু জানান কোন প্রতিষ্ঠান বা বাড়ি ঘরে তল্লাশীর ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি বা কোর্টের অর্ডার নেয়া আবশ্যক। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৩ ধারায় বলা হয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বা নির্বার্হী ম্যাজিষ্ট্রে থেকে অনুমতি নেয়ার পর পুলিশ তল্লাশী করতে পারবে। ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ তল্লাশী কাজ চালাতে পারবে। এর বাইরে কোনভাবেই পুলিশ কোন প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙ্গে তল্লাশী চালাতে পারবে না। জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ সাজু বলেন পুলিশ কোর্টের অনুমতি বা ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতি ব্যাতিত কোনভাবেই কোন প্রতিষ্টানের তালা ভেঙ্গে মালামাল জব্দ করতে পারে না। আইনে এ বিষয়টি পরিস্কার করা বলা হয়েছে। এরকম বিধান ভেঙ্গে পুলিশ যদি মালামাল উদ্ধার করে সেটা হবে সম্পূর্ন অবৈধ।

এর আগে গত ১২ মে  মেয়র হিরন সমর্থিত জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দাবীদার জামাল হোসেন বাদী হয়ে বরিশাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় চার জনকে আসামী করা হয়। তারা হলেন শ্রমিক নেতা আফতাব হোসেন,গোলাম মোস্তফা,নাসির মাস্টার ও জসিম উদ্দীন। অভিযোগে উল্লেখ করেছেন যে শ্রমিক নেতা আফতাব হোসেন জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে ভবন নির্মানের জন্য রড় বালু আত্মসাৎ করেছেন। সেসব তার বাড়ির সামনে কিন্ডারগার্টেনের অভ্যন্তরে রাখা হয়েছে। এরইপরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সেখানকার কিন্ডার গার্টেনের একটি কক্ষের তালা ভেঙ্গে  রড উদ্ধার করে। আদালতের কোন অনুমতি ব্যাতিত কারো প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালিয়ে কোন  রক্ষিত মালামাল উদ্ধারের বিষয়টি রীতিমত দখল সন্ত্রাস বলে মনে করেছেন অনেকেই।

প্রসঙ্গত বরিশালে আওয়ামী রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারে গ্র“পিং রাজনীতির জন্ম দিয়ে সাবেক চীফ হুইফ জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র ভক্ত বা অনুসারীদের নানামুখী হয়রানী করে আসছেন বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন। হাসানাতের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত শ্রমিক নেতা আফতাব হোসেন। এ কারনে আফতাবের রাজনীতির মাঝা ভেঙ্গে দিতে হামলা মামলার শিকার করা হয়। হিরন সমর্থকদের শসস্ত্র মহড়া আর তান্ডবে আফতাব বাধ্য হন বরিশাল থেকে নিরাপদে স্থান নিতে। এখন তার বাড়ি ঘর দখল প্রক্রিয়ারও ষড়যন্ত্র চলছে। ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে মামলা দিয়ে আফতাব ও তার পরিবারের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি লুটে নেয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বুধবার দুপুর ২টার দিকে শ্রমিক নেতা আফতাবের কাশিপুর বাড়ি সংলগ্ন তার প্রতিষ্ঠিত আমিরুল নেছা লিটল ফ্লায়ার কিন্ডার গার্টেনে বিমান বন্দর থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ যায়। সঙ্গে ছিলেন উপ-পরিদর্শক আবুল খায়ের, ৩০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ হোসেন ও ২৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির, কট্রর হিরনপন্থী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। শ্রমিক নেতা আফতাব হোসেন বলেন মেয়র হিরন বাহিনীর এক সদস্যের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে আমার ভাই ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেনের রক্ষিত সম্পত্তি লুটে নিয়েছে পুলিশ। অবৈধ পন্থায় মালামালা লুটে নেয়ার কারনে মামলা দায়ের করা হবে। এতে আসামী করা হবে বিমান বন্দর থানার ওসিসহ অন্যান্যদের। তিনি বলেন পুলিশের ভূমিকা বিতর্কিত। পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতি ব্যাতীত লুটে নেয়া মালগুলোর ক্যাশমেমোও রয়েছে বলে দাবী করেন আফতাব। তিনি আরো বলেন মাস খানেক আগে এখান থেকে রড ইট চুরি হয়েছে। আমার ভাই এ ব্যাপারে থানায় সাধারন ডায়রী করতে গেলে পুলিশ তা নেয় নি।

বিমান বন্দর থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন মামলার আলামত হিসাবে রডগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তালা ভেঙ্গে আলামত উদ্ধার করতে আদালতের কোন অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। বরিশাল মেট্রোপলিটনের বিমান বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক আবুল খায়ের বলেন কিন্ডারগার্টেনের পরিত্যাক্ত এক কক্ষের দরজার তালা ভেঙ্গে রড উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের গত ১ ফেব্র“য়ারী দুপুরে নির্বার্হী ম্যাজিষ্টেট কামরুজ্জামান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহন আটকিয়ে জরিমানা আদায় করতে ছিল। ওই সময়ে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক শাহ আলম জরিমানা কম করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে তেলে বেগুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ভ্রাম্যমান আদালত। এরপরই পুলিশ শ্রমিক নেতা শাহ আলমকে বেদম মারধর করে। এ ঘটনায় শ্রমিক-পুলিশ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। সংর্ঘষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে একটি দ্রুত বিচার আইন ও অপরটি পুলিশ আক্রান্ত আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দুটিতে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আফতাব হোসেন ও সাধারন সম্পাদক শাহ আলমসহ ৩’শ জনকে আসামী করা হয়। ওই দিন বিকেল থেকেই মেয়র হিরন সমর্থকরা টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে আফতাব বিরোধী মিছিল সমাবেশ করে আসছে। তারা আফতাব মুক্ত টার্মিনালের দাবী তোলেন। একপর্যায়ে টার্মিনাল দখলে নিয়ে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটিও গঠন করে হিরন পন্থীরা।