কোন পাগলের অধীনে নির্বাচন চান?

আন্দোলন করছিলেন,খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন, শিশু কিংবা পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।সম্প্রতি সুপ্রীম কোর্ট কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণার পর শেখ হাসিনা সেটি লুফে নিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া হরতাল ডেকেছেন।সঙ্গত কারণেই হাসিনা খালেদাকে জিজ্ঞেস করেছেন, কোন পাগলের অধীনে নির্বাচন চান? সুপ্রীম কোর্টের রায়ে অবশ্য পরামর্শ রাখা হয়েছে পরবর্তী দুটো নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হতে পারে, এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ।বিএনপি সংসদে গিয়ে সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শের প্রসংগটি তুলতে পারতো।সেটা না করে সেই হরতালের কাসুন্দিতে ফিরে গেল।আমজনতার ভোগান্তির আবার শুরু। রাজনৈতিক সংস্কৃতি্র এই পুনরাবৃত্তিতে আমরা ক্লান্ত।

কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাটি উদ্ভট তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।কাজেই সার্বভৌম নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনই গণতান্ত্রিক সুস্থতার লক্ষণ।কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সেই সুস্থতার চর্চায় এখন পর্যন্ত প্রস্তুত নয়। দুটি দলের মধ্যে চরম আস্থাহীনতা গণতন্ত্রের নির্বাচনকালীন প্রসব বেদনায় একজন কেয়ার টেকার ধাত্রীমাতার প্রয়োজনটিকে টিকিয়ে রেখেছে। যে কারণে ইয়াজুদ্দীনের অধীনে নির্বাচনে যায়নি আওয়ামী লীগ, একি কারণে জিল্লুর রহমানের অধীনে নির্বাচনে যাবেনা বিএনপি।আওয়ামী লীগ ইয়াজুদ্দীন ঠেকাতে যেমন লগি বৈঠা নিয়ে নেমেছিল, বিএনপিও তেমনি কাস্তে হাতে রাজপথে নেমে যাবে বলাই বাহুল্য।এরকম সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি এক এগারোর প্রেক্ষিত তৈরী করে।এক এগারোর অপমানজনক পরিস্থিতি থেকে যা শিক্ষণীয় ছিল মাত্র আড়াই বছরে দুই দলই তা ভুলে গেছে। রাজনীতিবিদদের চিন্তার ঐক্য তৈরী না হলে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব হয়, এক এগারোর পরে তা শিশু এবং পাগলেরাও বোঝে। শুধু বোঝেন না ক্ষমতার জন্য মরিয়া দুই নেত্রী।

শেখ হাসিনা ওয়েস্ট মিন্সটার পদ্ধতিতে যেতে চান ক্ষমতায়, খালেদা জিয়া চান কেয়ারটেকার বা পাগল পদ্ধতিতে।এই নিয়ে কচলাকচলির পরে শেখ হাসিনা সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী এযাত্রা কেয়ারটেকারে রাজী হলে খালেদা জিয়া তখন নিয়ে আসবেন সুপ্রীম কোর্টের আরেক পরামর্শ যেখানে সাবেক বিচারপতি নয় সংসদের কাছে গ্রহণযোগ্য অন্য কাউকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান করতে বলা হয়েছে।এই দরকষাকষি সংসদে এবং মিডিয়ায় চলতে পারে। কিন্তু বিএনপির পছন্দ রাজপথ।আমজনতার ভোগান্তি তাদের বিবেচনার বিষয় নয়। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া।

শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কটি এখনি কেন নিয়ে এলেন তা বোধগম্য হলোনা। বিএনপিতো শিশুদের মতো ইস্যু খুঁজছিল। এখন তা পেয়েও গেল।নির্বাচনের বছর খানেক আগে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতো। এখন আড়াই বছর ধরে চলবে দড়ি টানাটানি।অবশ্য এবিষয়ে যা সিদ্ধান্ত হবার তা একটি রাজনৈতিক সরকারের সময়ে হওয়াই ভালো।এক এগারোর পুনরাবৃত্তি আমজনতা চায়না।পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগামী দুবছরের মধ্যেই করে ফেলা ভালো যাতে বিষয়টা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মতো ঝুলে না থাকে।

নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সবারই কাম্য। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনায় সিভিল প্রশাসনের ভূমিকা থাকে। রাজনৈতিক সরকারের সময় সিভিল প্রশাসনের রাজনীতিকরণ বা দলীয়করণ ঘটে।সেকারণেই বিরোধীদল চাইছে কেয়ারটেকার সরকার।ভারতের নির্বাচন কমিশনের মতো সামর্থ্য অর্জন রাতারাতি সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ঋদ্ধ হয়।আমাদের নির্বাচন কমিশন কতটুকু সার্বভৌম সেটা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ওয়েস্ট মিন্সটার পদ্ধতিতে যাওয়া সম্ভব নয়।

গত তিনটি নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে সরকারে থেকে ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে বিরোধী দলে থেকে ক্ষমতায় যাওয়া সহজ। ক্ষমতাসীন সরকারের পারফরমেন্সে অখুশী হয়ে ভাসমান ভোট বিরোধী দলে চলে যায়। তাই কথার খই না ফুটিয়ে কাজে মনোযোগ দেয়া জরুরী। আগামী নির্বাচন নিয়ে বচসায় সময় নষ্ট করার সময় নেই সরকারের।আদালতের রায়ে কেয়ারটেকার সরকার অবৈধ, কিন্তু রায়ের পরামর্শগুলো উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এতে অযথা সময় ও শক্তিক্ষয় হবে। জনমানুষের জীবন কুশলতা অর্জনে সাহায্য করতে না পারলে, আমজনতাকে খুশী করতে না পারলে শুয়ে বসে বিরোধীদল ক্ষমতায় চলে যাবে।সেটা ঠেকাতে গেলে দিন বদলের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা জরুরী।ভারতের কংগ্রেস যেটা পেরেছে। তৃণমূলের আমজনতাকে খুশী করেই ক্ষমতায় টিকে গেছে কংগ্রেস।মনমোহন সিং বা সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে কিছুটা শেখারতো আছেই। সম্ভবত খানিকটা বিনয়…

Priyo.com