যুবলীগের নিজাম বাহিনী কর্তৃক ৫ মানবাধিকার কর্মীকে লাঞ্চিত

কেন্দ্র (আসক)’র ৫  কর্মীকে লাঞ্চিত করেছে মহানগর যুবলীগের আহবায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম ও তার সহযোগীরা। এর আগে সেখানে এক ব্যাক্তি সম্পত্তি বিক্রি করে। কিন্তু যুবলীগ নেতা নিজাম বিক্রেতার নিকট ৫ লাখ টাকা দাবী করে। নির্ধারিত চাঁদার টাকা না দেয়ায় যুবলীগ নেতা ওই ব্যাক্তির বিক্রিত সম্পত্তি দখলে রেখেছে।

জানাযায়, ক্রেতাকে জমির বুঝ দিতে না পারায় বিক্রেতা ডাঃ হুমায়ুন কবির যুবলীগ নেতা নিজামের দখল সন্ত্রাসের বিষয়টি আইন সহায়তা কেন্দ্রকে অবহিত করে। এরইপরিপেক্ষিতে রাজধানী ঢাকা থেকে মঙ্গলবার বিষয়টির তদন্তে আসকের ৫ সদস্যের একটি টিম বরিশালে আসে। দুপুর ২টার দিকে মানবাধিকার কর্মীরা পুলিশের হেডকোয়াটারস ও বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার অনুমতি নিয়ে ফকির বাড়ি রোডে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। এসময় মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে কোতোয়ালী পুলিশও উপস্থিত ছিল। মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন রাশেদুল হক রাসেদ,মুরাদ,আলম,শফিকুল বাশার ও আদিল হাওলাদার। বিক্রিত ভবনে মানবাধিকার কর্মীদের পরিদর্শনে যাওয়ার খবর পেয়ে নিজামের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী মানবাধিকার কর্মীদের উপর হামলে পড়ে। তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও গুরুত্বর্পর্ন কাগজপত্রও লুটে নিয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডে জড়িয়ে পড়ে নিজাম। তারা কোন অধিকারে এখানে পরিদর্শনে  এসেছে এভাবে হুঙ্কার ছুড়ে দিয়ে নিজাম তাদেরকে দেখিয়ে দেয়ার কথা বলে। নিজাম বাহিনীর দাপটে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ মানবাধিকার কর্মীদের  থানায় নিয়ে আসে। বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন গৌরনদী ডটকমকে জানান মানবাধিকার কর্মীরা পুলিশের হেডকোয়াটারসসহ কোতোয়ালী পুলিশের অনুমতি নিয়েই ঘটনাস্থলে গেছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেছে।

মানবাধিকার কর্মী রাশেদুল হক রাশেদ গৌরনদী ডটকমকে বলেন আইনগতপন্থায় পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসী স্টাইলে যুবলীগ নেতা নিজাম ও তার সহযোগীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশকেও তারা আঘাত করেছে। তিনি বলেণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক ব্যাক্তি নিজেকে ইত্তেফাকের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমাদের সঙ্গে র্দূব্যবহার করেছেন। তিনি আমাদেরকে ভূযা হিসাবে আখ্যা দিয়ে অশালীন আচরন করেছেন। ইত্তেফাকের পরিচয় দেয়া সাংবাদিকরা হলো এম জহির ও শাহিন হাফিজ। মানবাধিকার কর্মী রাশেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এই যদি হয় সাংবাদিকতা! সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আতাত করে লিটন বাশার মানবাধিকার কর্মীদৈর লাঞ্চিত করেছে। তাদের সঙ্গে ন্যাক্কারজনক আচরনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহে রয়েছে বলে তিনি জানান।

জমির ক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান এই যুবলীগ নেতা নিজামের কারনেই তিনি জমি কিনেও ভোগ দখল করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন। তিনি জানান নিজামের নির্ধারিত চাঁদার টাকা দিলে এরকম ঝামেলা করত না। কিন্তু চাঁদাবাজ নিজাম যতই শক্তিশালী হউক না কেন তাকে কোন চাঁদা দেয়া হবে না। তিনি এ ব্যাপারে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী’র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এলাকার প্রতিটি সম্পত্তির ক্রয় বিক্রয়ে নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রেফকো কোম্পানীর সম্পত্তি বিক্রিতেও তিনি এক ব্যাক্তিকে সম্পত্তি কিনে দেয়ার কথা বলে উৎকোচ গ্রহন করে। পরবর্তীতে সেই সম্পত্তি অন্য জনের নিকট থেকে বেশি উৎকোচ নিয়ে রেফকো কর্তৃক তাকে কিনে দিয়েছে। এছাড়া নিজামের অত্যচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসায়ী ফকির বাড়ি রোডের নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি জাসদ,জাতীয় পার্টি শেষে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে  আ’লীগে যোগদান করে। অভিযোগ রয়েছে অন্য দলে থাকাবস্থায় তিনি তৎকালীন সময়ে সহযোগীদের নিয়ে কালিবাড়ি রোডের সরস্মতী স্কুলের সামনে আ’লীগের  নৌকা প্রতীক প্রকাশ্য পুড়িয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত গত বছরের ১১ অক্টোবর  ডাঃ হুমায়ুন কবির নগরীর ফকির বাড়ি রোডের ০.০৭ শতাংশ জমি চরকাউয়া এলাকার  মৃত্যু এছাহাক আলীর পুত্র আমিনুল ইসলাম মুন্সীর নিকট বিক্রি করেন। সম্পত্তিতে তিন তলা ভবন রয়েছে। যার নিচ তলায় দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সম্পত্তি বিক্রির সময় চুক্তিতে বলা হয় দাতা ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে সম্পত্তি গৃহীতাকে বুঝিয়ে দিবে। চুক্তিনুযায়ী দাতা হুমায়ুন কবির ভাড়াটিয়াদের ভবন ত্যাগ করতে তিন মাসের সময়সীমা বেধে দেয়। কিন্তু সম্পত্তি বিক্রির নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম হলেও ভাড়াটিয়ারা ভবন ত্যাগ করছেন না। সম্প্রতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নগরীর পৌর সুপার মার্কেটের অফিসে এক বৈঠকে বসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ক্রেতা আমিনুল ইসলাম মুন্সী,বিক্রেতা হুমায়ুন কবির, যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম ও কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান হিরু, কালীবাড়ি রোডের ব্যবসায়ী মাহেদুর রহমান সুমন। বৈঠকে নিজাম ও হিরু বলেছে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনও আমাকে না জিজ্ঞাসা করে এই এলাকার জমি ক্রয় বিক্রয়ের কোন সিদ্ধান্ত নেন না। তিনি বলেন জমি’র ক্রেতাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। নির্ধারিত টাকা না দেয়া পর্যন্ত জমির দখল নিতে দেয়া হবে না। গত বছরে কোটি টাকার টেন্ডারের ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে কয়েক  যুবলীগ নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে রাজধানী ঢাকায় নিজামুল ইসলাম নিজামকে মারধর করে।