হুমকির মুখে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এক ইমাম

পরেও অগো ভয়ে চাকরি ছাইরা পালাইয়া যাইতে হইতো না। থানায় মামলা করছিলাম। মামলা কইরা কোন সুফলই পাইনি। উল্টো মামলা উত্তোলনের জন্য হামলাকারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। হুমকির মুখে আজ আমি চাকরি ছাইরা চইল্লা যাইতে বাধ্য হচ্ছি”।

আবেগআপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আগরপুর আশরাফুল উলুম কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ও দক্ষিণ-পূর্ব আধুনা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা গোলাম মাওলা। হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৮দিন পর হুমকির মুখে গতকাল শনিবার দুপুরে মাওলানা গোলাম মাওলা মাদ্রাসা ও জামে মসজিদের চাকুরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ নিয়ে ওই এলাকার মুসুল্লীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার চুনখোলা গ্রামের মৃত রেজাউল হকের পুত্র মাওলানা গোলাম মাওলা চট্টগ্রামের হাটহাজারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতো। একই ক্লাশে পড়াশুনার সুবাধে তার সাথে বন্ধুত্বর সম্পর্ক হয় গৌরনদী উপজেলার শাহজিরা গ্রামের মৃত আক্কেল আলী বেপারীর পুত্র আবুল কালাম আজাদের।

মাওলানা গোলাম মাওলা জানান, ১৯৯৯ সনে তিনি মাওলানা পাশ করলেও আবুল কালাম অকৃতকার্য হয়। ১২ বছর পূর্বে গোলাম মাওলা আগরপুর আশরাফুল উলুম কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে ও ছয়মাস পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব আধুনা জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে চাকুরি নেয়।

দু’মাস পূর্বে আবুল কালাম আজাদ জালজালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরি নেয়ার জন্য মাওলানা গোলাম মাওলার কাছে তার মাওলানা পাশের সার্টিফিকেট চায়। এতে অপরাগতা প্রকাশ করায় আবুল কালামের সাথে গোলাম মাওলার বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনার জেরধরে আবুল কালাম গত ২৫ মে গোলাম মাওলাকে এলাকা থেকে চলে যাওয়ার জন্য চিরকুট পাঠায়। এছাড়াও গোলাম মাওলাকে তার রুমের বাহির থেকে একাধিকবার আটক করে রাখা হয়। এ ঘটনায় ২৬ মে মাওলানা গোলাম মাওলা সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি সাধারন ডায়েরী করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৭ মে ফজরের আজান দেয়ার সময় আবুল কালামসহ তার ৩/৪ জন সহযোগীরা মাওলানা গোলাম মাওলাকে গামছা দিয়ে মুখ ও রশি দিয়ে গাছের সাথে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুটে নেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে গোলাম মাওলা জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরে।

স্থানীয় মালেক বেপারী বলেন, ওইদিন ভোরে গাছের সাথে হাত-পা বাঁধা ও গামছা দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় মাওলানা গোলাম মাওলাকে দেখে আমি ডাকচিৎকার শুরু করি। স্থানীয় বাদশা বেপারী, নজির আহম্মেদ বেপারীসহ অন্যন্যারা ডাকচিৎকার শুনে এগিয়ে আসলে জ্ঞানশূণ্য অবস্থায় গোলাম মাওলাকে আমরা উদ্ধার করি। এ ঘটনায় ২৮ মে গোলাম মাওলা বাদি হয়ে আবুল কালাম আজাদসহ আরো অজ্ঞানামা ৩/৪  জনকে আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস.আই আলাউদ্দিন ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। মালেক বেপারী আরো বলেন, মামলা দায়েরের দু’দিন পর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য এস.আই আলাউদ্দিন আসামি ও বাদিকে ডেকে নিয়ে সরিকল তদন্ত কেন্দ্রের মধ্যে বসে সালিশ বৈঠকে বসেন। সেখানে বসেও আসামি আবুল কালাম আজাদ মামলার বাদি গোলাম মাওলাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। সে সময়ও পুলিশ রহস্যজনক কারনে আসামিকে গ্রেফতার করেননি।

এ ঘটনার পর থেকে আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে তার ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে মামলা উত্তোলনের জন্য বাদি গোলাম মাওলাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে মাওলানা গোলাম মাওলা মাদ্রাসা ও মসজিদের চাকুরি ছেড়ে গতকাল বুধবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

স্থানীয় সমাজসেবক জাহিদ হোসেন মৃধা বলেন, ঘটনার পর বীরদর্পে হামলাকারী আবুল কালাম আজাদ ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে রহস্যজনক কারনে গ্রেফতার করছেন না। উল্টো হামলাকারী আবুল কালাম মামলা উত্তোলনের জন্য গোলাম মাওলাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। এ ঘটনায় আমাদের এলাকার মুসুল্লীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।  

এ ব্যাপারে সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস.আই আলাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সালিশ বৈঠকের কথা অস্বীকার করে বলেন, গোলাম মাওলার দায়ের করা মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আসামি প্রকাশে ঘুরে বেড়ানোর পরেও কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না এ প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি আসামি পলাতক বলে জানান।

অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ ঘটনার জন্য মীমাংসায় আগ্রহী। বিধায় ইতিপূর্বে সরিকল তদন্ত কেন্দ্রে সালিশ বৈঠকেও বসা হয়েছিলো।