বরিশাল বিএনপি রাজনীতির হালচাল

মিছিল, মিটিং, সমাবেশ ও সাংবাদিক সম্নেলন। প্রতিপক্ষ দমনে মরিয়া হয়ে উঠেছে এখানকার সাংসদ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড.মজিবর রহমান সরোয়ার। বিপরীতে জেলা বিএনপির সভাপতির আসন গ্রহন করে বেজায় খুশি বিসিসির সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল। শুরু হয়েছে পার্টি অফিস দখলের নতুন অর্ন্তদ্বন্দ্ব। তবে বিএনপির পার্টি অফিস যাবে কার দখলে এ নিয়ে চিন্তিত দু’পক্ষের নেতা-কর্মীরাই। উভয় নেতার টার্গেট অশ্বিনি কুমার টাউন হল চত্ত্বর সংলগ্ন পার্টি অফিস দখলের। ফলে রাজনীতির ময়দান ছাড়তে নারাজ দু’গ্রুপের নেতা-কর্মীরাই। আর এ কারনেই সাংসদ সরোয়ার সমর্থিতরা কমিটি বাতিলের দাবীতে ২৩জুন থেকেই মিছিল মিটিং কুশপুত্তিলিকা দাহ ও সমাবেশ যেমনিভাবে অব্যাহত রেখেছে ঠিক তেমনি অপরপক্ষ কমিটিকে আমন্ত্রন জানিয়ে চালাচ্ছে পাল্টা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরন। তবে এ কারনে দলের বিভাজন ভূলে সাংসদ সরোয়ারের শিবিরে যোগ দিয়েছেন বিদ্রোহী নেতা এবায়েদুল হক চান, মহসিন মন্টু সহ বেশ কয়েক নেতা-কর্মী।

প্রতিদ্বন্দ্বি এসব নেতাদের রয়েছে আলাদা-আলাদা সমার্থক। এদের স্ব-স্ব গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কেন্দ্রীয় যে কোন প্রোগ্রাম বা কমসূচি পালন করছিল দীর্ঘদিন পর্যন্ত। যার খেসারত দিয়েছেন নজরুল ইসলাম রাজন। জেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক ঘোষনা হওয়ার পর বরিশাল বিএনপির রাজনীতিতে এখন আর তার কোন অস্তিত্বই রইলনা। জেলা বিএনপির সম্পাদক পদে আসীন হওয়ার স্বপ্ন ছিল রাজনের দীর্ঘদিনের। আর এ কারনে বিভিন্ন সময় রাজন নানা চাটুকারিতার পরিচয় দিয়েছিলেন বরিশাল বিএনপির রাজনীতিতে। সাংগঠনিক নেতা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল রাজনকে। কেন্দ্রীয় নেতা হান্নান শাহকে ঘিরে রাজনকে কুপিয়ে আহতও করেছিলেন সাংসদ সরোয়ারের সমর্থনকারীরা। সরোয়ার সমর্থিত সূত্রের দাবী, সেদিন হান্নান শাহকে অর্ভ্যথনা জানানোর কথা ছিল সাংসদ সরোয়ারের। কিন্তু চতুর রাজন হান্নান শাহ’র বরিশালে আসার খবর শুনে তার বরিশাল আসার পূর্বেই ঢাকায় গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে তার সফর সঙ্গি হয়ে বরিশালে আসেন রাজন ও হান্নান শাহ। ঘটনার দিন সকালে হান্নান শাহ’র বরিশালে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও রাজনের চটুকারিতায় তাকে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে পরিস্থিতি সাংসদ সরোয়ারের বিপরীতে নিয়ে যায় রাজন। ফলে ক্ষুদ্ধ হয়ে সাংসদ সরোয়ারের সমর্থিতরা কুপিয়ে আহত করে রাজনকে। ঘটনাটি সরোয়ারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে না ঘটলেও সে মামলার আসামী করা হয়েছে খোদ সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ারকে। এ নিয়ে ঘটনার পর থেকে ৪/৫দিন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি মামলা ও মিছিল-সমাবেশও করা হয়েছিল। এরপর সর্বশেষ ২৩ জুন জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষনা করা হলে শুরু হয় জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীন প্রতিপক্ষদের নব প্রতিক্রিয়া। কমিটি ঘোষনার প্রথম দিনেই বিএনপি নেতা এ্যাড. মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে কুশপত্তলিকা দাহ করা হয় নব জেলা বিএনপি সভাপতি আহসান হাবিব কামাল ও সস্পাদক সাবেক সাংসদ বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনের। পরে ২৪ ও ২৫ জুন সাংবাদিক সম্নেলন করে স্বদ্য ঘোষিত কমিটিকে বাতিলের দাবী জানায় বরিশাল মহানগর বিএনপি সহ কোতয়ালি থানা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। আর এসব কারনে বলা হয় এখানকার রাজনীতিতে বিএনপির বিরুদ্ধে বিএনপি ই যথেষ্ট।

বিএনপিতে ২০০৩ সালের সিটি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে অমান্য করে মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মধ্যদিয়ে বিএনপিতে শুরু হয় ফাটলের আলামত। যে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল এবং সাবেক জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন। এ কারনে সেন্ট্রাল বিএনপি তাদের দু’জনকে বহিস্কারও করে। ২০০৯ সালের জুন মাসের ১ম সপ্তাহে আহসান হাবীব কামালের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়। আর এ বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর থেকেই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিএনপিতে শুরু হয়েছে ফাটলের প্রথম পর্ব। ২০১০ সালের ১৫ জুন মেয়াদোর্ত্তীর্ণ সাংগঠনিক কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে বরিশালে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির হাইকমান্ড। সেখানে মহানগরের সম্পাদক পদে আসীন হতে চেয়েছিলেন কামাল। কিন্তু সাংসদ সরোয়ারের কারনে সম্পাদক পদ থেকে ছিটকে পরছেন তিনি। মহানগরের সভাপতি হন সরোয়ার আর সম্পাদক হন কামরুল আহসান শাহীন। এরপরই কামাল টার্গেট করেন জেলা বিএনপির সভাপতি পদে আসীন হওয়া। তবে সম্পাদকের পদে কাকে আসীন করবেন এ নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ছলনার আশ্রয় নিলেন তিনি। কিন্তু শেষ মূহুর্তে প্রকাশ পেয়ে যায় ধূরন্দর এই নেতার ছলনার চিত্র। জেলা বিএনপির সম্পাদক পদে কখনও তিনি এবায়দুল হক চান আবার কখনও নজরুল ইসলাম রাজনের জন্য তদ্বীর করেছেন কামাল। ফলশ্রুতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জৈষ্ঠ পুত্র তারেক জিয়ার কারা মুক্তি দিবস পালনের কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন করেনি কামাল সমর্থকরা। সে সময় কামালের এই প্রতারনা মূলক আচরনের প্রতিবাদ করেছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মোমিন শিকদার, কৃষক দলের জেলা শাখার আহবায়ক হাজী আলতাফ হোসেন, বিএনপি নেতা এ্যাড. মহসিন মন্টু, মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি রুস্তুম মল্লিক, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন শিকদার, যুব দল নেতা মাকসুদুর রহমান, ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ফিরোজ হোসেন সহ ১৪ ,১৫ ১৭, ১৮,২২,৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতিরা। গত বছরের ১৫ জুন মেয়াদোর্ত্তীর্ণ সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দিয়ে বরিশালে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের শুরু থেকেই এখানে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব অতিরিক্তভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সর্বশেষ ধূরন্দর নেতা আহসান হাবিব কামাল ২৩জুন তার নিজের চাহিদা অর্থাৎ জেলা বিএনপির সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়। সাধারন সম্পাদক পদে আসীন করান সংরক্ষিত মহিলা এমপি বিলকিস জাহান শিরিনকে। এ প্রসঙ্গে সে সময়ের এক সাক্ষাৎকারে আহসান হাবিব কামাল জানিয়েছেন, দলের মধ্যে কোন ক্ষোভ বিক্ষোভের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় নি। সম্পাদক পদে তিনি কাউকে সমর্থন দেননি। তিনি আরো বলেন, দলের কর্মসূচী পালনে নেতা-কর্মীরা স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ গ্রহন করছে। সদ্য ঘোষিত কমিটির বিষয়ে সভাপতি আহসান হাবিব কামাল ও সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন জানান, খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া’র নির্দেশনুযায়ী এই কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ রাজনীতির ময়দানে থাকবেই। সাবেক সাংসদ শিরিন জানান, তবে সম্পাদকের দায়িত্ব বলতে যা বুঝায় তা যথাযথভাবে পূরন করাই আমার টার্গেট।