যোগাযোগমন্ত্রীর গুছানো ঘরে অশনি সঙ্কেত!

ঘরে অশনি সঙ্গেত দেখা দিয়েছে। পৌর ও ইউপি নির্বাচনের ফলাফল এই অশনি সঙ্কেত বয়ে এনেছে। ওই ঘর থেকে জন্ম নিয়ে একটি শক্তি ক্রমেই যৌবন পাচ্ছে। পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটের মাধ্যমে সতর্ক বার্তা এবং তৃতীয় শক্তির উত্থান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির নেতা শেখ শহিদুল ইসলাম ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল প্রর্যন্ত কালকিনিতে থাকাকালে তার মাধ্যমেই রাজনীতির ধারা প্রবাহিত হত ও একক আধিপত্য বিস্তার করেছিল তার দল। কালকিনিতে তার পতন হলে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে বিএনপি পিছিয়ে পড়লেও সৈয়দ আবুল হোসেনের দৃঢ়তায় আওয়ামীলীগ ঘাড় তুলে দাঁড়ায়। দ্রুত শক্ত সাংগঠনিকতায় আওয়ামী লীগ প্রধান দলে উপনীত হয়। কালকিনি তার একটি সাজানো-গুছানো ঘরে রপ নেয়। ১৯৯১সাল থেকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের ব্যানারে সৈয়দ আবুল হোসেনের রাজত্ব। সেই থেকে প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তার আমলে এখন প্রর্যন্ত কোন প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্ধিতাই গড়ে তুলতে পারেনি। ভোট গ্রহনের আগে ৪/৫দিনের বেশী তার নির্বাচনী প্রচারণার প্রয়োজন হয়না। তার এ আমলে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যানারে যে কেউ প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছে। তার বিচক্ষণ ও দানশীলতায় অন্যান্য দলে অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অবস্থা এমনই যে এলাকার উন্নয়ন বা সাধারণ মানুষের পাশে থাকা না থাকার বিষয়টি কখনোই নির্বাচনে প্রভাব পড়েনি। সারাদেশে কালকিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিতিতা পেয়েছে। বর্তমানে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এর আগে তিনি ১৯৯৬সালে এলজিইডি ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

সূত্র জানায়, সৈয়দ আবুল হোসেনের ২০বছরের রাজত্বেও কালকিনি উপজেলা যোগাযোগসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিছয়ে রয়েছে। তাছাড়া তিনি নির্বাচন ছাড়া তেমন কালকিনিতে আসেন না। ভোট হলেই প্রয়োজন হয় কালকিনিবাসীর এমন ধারণা জন্মেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সাধারণ মানুষ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে ক্ষোভের জবাব দিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে তাকে। পরিবর্তনের সময়ে নড়েচড়ে বসেছে সবাই। শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকেই। পৌরসভা নির্বাচনে সৈয়দ আবুল হোসেনকে চ্যালেঞ্জ ছুরে দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র হিসেবে জয়ী হয়ে এনায়েত হোসেন তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকির হোসেন সিকদার কয়ারিয়া ইউপিতে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মোঃ আবদুল মান্নান চরদৌলত খাঁ ইউপিতে, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি কাঞ্চন তালুকদার বাশগাড়ি ইউপিতে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মনিরুজ্জান ডাসার ইউপিতে, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সিরাজ মৃধা শিকারমঙ্গল ইউপিতে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও বিভিন্ন ইউপিতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। এই নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে না হলেও এসব ইউপিতে সৈয়দ আবুল হোসেনের সমর্থণ বলে আওয়ামীলীগ নেতারা প্রচার করেছিল।

উপজেলা নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পারাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুল হাসান দুদুল ও পৌর মেয়র এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত অধিকাংশ চেয়ারম্যান এদের সমর্থক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৌফিকুজ্জামান শাহীনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি পৌরসভা ও অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে নিজের দখলে রাখার চেষ্টা করছেন।