আদম ব্যাপারির প্রতারনার শিকার গৌরনদীর পাঁচ দুঃস্থ নারী

দেশে ফিরে এসেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পাঁচ দুঃস্থ নারী। তারা আদম ব্যাপারিকে দেয়া টাকা উত্তোলনের জন্য প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আদম ব্যাপারি প্রতারনায় সর্বস্ত্র খুঁইয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ারা হলেন-উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের ভ্যানচালক ছাদেক বেপারীর স্ত্রী মাসুদা বেগম (৩২), উত্তর ধানডোবা গ্রামের দিনমজুর কবির সরদারের স্ত্রী মাহিনুর বেগম (৩৪), নন্দপট্টি গ্রামের হাসমত আরা লিপি (৩৫), মঞ্জুয়ারা বেগম (৩০) ও চেঙ্গুটিয়া গ্রামের চম্পা বেগম (২৮)। এরা সকলেই হালিম খান নামের এক আদম ব্যাপারির প্রতারনার শিকার হয়েছেন।

ওমান ফেরত ওই পাঁচজন নারীর দেয়া অভিযোগে জানা গেছে, নন্দপট্টি গ্রামের আক্কেল আলী খানের পুত্র হালিম খান (৪৫) ও তার স্ত্রী (ওমান প্রবাসী) আছিয়া বেগম (৩৫) মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অধিক বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ওইসব নারীদের ওমান পাঠিয়েছিলো। সেখানে ওইসব নারীদের ভাগ্যে জোটে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন। এমনকি পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাদের সকলকে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাসুদাকে ওমান থেকে ফিরতে হয়েছে মাত্র আড়াই মাস পরে। ৪ মাস ২০ দিন পরে ফিরেছে মাহিনুর। হাসমত আরা লিপি ফিরেছেন দেড় মাস পর। ৬ মাস পরে ফিরেছেন মঞ্জুয়ারা বেগম ও নয় মাস পর চম্পা বেগম দেশে ফিরে এসেছেন।

মাসুদা বেগম জানান, ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আদম ব্যাপারি হালিম খান গত ২৪ ফেব্র“য়ারি তাকে ওমান পাঠায়। বিদেশ যাওয়ার পূর্বে আদম ব্যাপারির দাবিকৃত টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় মাসুদার ব্যবহৃত একটি রঙ্গিন টেলিভিশন নিয়ে যায় আদম ব্যাপারি হালিম। মাসুদা আরো জানান, ওমান পৌঁছার পর আদম ব্যাপারি হালিমের স্ত্রী আছিয়া বেগম তাকে চারটি বাসার গৃহস্থলির কাজে নিযুক্ত করে। মাসুদাকে পালাক্রমে কাজ করতে হতো ওইসব বাসায়। কারনে অকারনে ওইসব বাসার লোকজন মাসুদাকে অমানুষিক নির্যাতন করতো। প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেরে যেতো। আছিয়ার কাছ থেকে মাসুদাকে কিনে নিয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ওইসব বাসার লোকজনে মাসুদাকে দিয়ে হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রমসহ চালায় পাশবিক নির্যাতন। আড়াই মাসে তাকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৭ হাজার টাকা। গত ৯ মে কোন কিছু না বলেই তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। একই পন্থায় জনপ্রতি ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে আদম ব্যাপারি হালিম ওমান পাঠিয়েছিলো ধানডোবা গ্রামের মাহিনুর বেগম, নন্দনপট্টি গ্রামের হাসমত আরা লিপি, মঞ্জুয়ারা বেগম ও চেঙ্গুটিয়া গ্রামের চম্পা বেগমকে। তারা সকলেই শারিরিক ও পাশ্ববিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শূণ্য হাতে দেশে ফিরেছেন।
হাসমত আরা লিপি জানান, তাকে হাসপাতালে চাকুরি দেয়ার প্রলোভনে ওমান পাঠিয়েছিলো আদম ব্যাপারি হালিম। সেখানে হাসপাতালের পরির্বতে তাকে বাসায় কাজ দেয়া হয়। শূণ্য হাতে দেশে ফিরে প্রতারিতরা আদম ব্যাপারির সরনাপন্ন হলে উল্টো তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। উপায়অন্তুর না পেয়ে ওই পাঁচ নারী ব্র্যাকের নিরাপদ অভিবাসন সহায়তা প্রকল্পের গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরাম ও গৌরনদী থানায় আদম ব্যাপারি হালিম খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আদম ব্যাপারি হালিম খানের কাছ থেকে প্রতারিত নারীদের টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। ইতোমধ্যে আত্মগোপনে থানা হালিম খানকে আটকের জন্য পুলিশের অভিযান শুরু করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আদম ব্যাপারি হালিম খানের প্রতারনার শিকার হয়ে ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে পরেছেন। ইতোমধ্যে হালিম খান আত্মগোপনে থেকে বিদেশে পাড়ি জামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।