দেড় লক্ষাধিক টাকা তুলে নিলেন সাময়িক বরখাস্তকৃত মাদ্রাসা অধ্যক্ষ

আবদুস সবুর নিজে বেতন সিট তৈরি করে, ব্যাংকের সাথে যোগসাজসে, আড়াই বছরের বকেয়া বেতন-ভাতা বাবদ দেড় লক্ষাধিক টাকা বে-আইনিভাবে তুলে নিয়েছেন। এছাড়া বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার না হলেও তিনি পূর্নাঙ্গ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়ের করা সরকারি গম আত্মসাৎ মামলা, মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাৎ, অধ্যক্ষ হিসাবে অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা, গভর্নিংবডির সিদ্ধান্তকে বারবার অগ্রাহ্য করা, ৬ বছরের হিসাবপত্র না  দেয়াসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর আবদুর সবুরকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিস্পত্তি হয়নি এবং মামলাগুলোও চলমান রয়েছে। গভর্নিংবডির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবদুস সবুর অবৈধ সুযোগ নেয়ার জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬ জুন নিকটাত্মীয় খলিলুর রহমানকে গভর্নিং বডির সভাপতি করে একটি চিঠি ইস্যু করান। কিন্তু নতুন সভাপতি নিয়োগের ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক কিছুই জানেন না। নিয়ম অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষই ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে সভাপতি চাইবেন। সভাপতি বিধিমোতাবেক এডহক কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। পাশাপশি শিক্ষকদের বিলে স্বাক্ষর করবেন এবং ৬০ দিনের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটি করে আবার বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। কিন্তু  ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নতুন করে সভাপতি দেয়ার জন্য কোন আবেদনই করেননি। বরখাস্তকৃত আবদুস সবুর ৯ জুন দলবল নিয়ে মাদ্রসায় গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন এবং জোরপূর্বক থেকে মাদ্রসার যাবতীয় কাগজপত্র নিজের হেফাজাতে নেন। পরে নিজেসহ অন্য শিক্ষকদের মে মাসের বেতন এবং নিজের বকেয়া বেতন প্রদানের সিট তৈরি করেন। এতে নতুন সভাপতির স্বাক্ষর নিয়ে বরিশাল শহরের রূপালী ব্যাংকে জমা দেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি তাতে কোন কর্নপাত না করে আবদুস সবুরকে টাকা দিয়ে দেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের জানান, ইসলামী বিশ্বাবদ্যালয় থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে, কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা শুধু সভাপতি নিয়োগ দিয়েছেন। যার অনুলিপি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে তার পাওয়ার কথা। বিধিমোতাবেক সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পূর্নাঙ্গ গভর্নিংবডি পর্যালোচনা করবে এবং সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয় কারো সাসপেন্ড আদেশ প্রত্যাহার করে না। এটার জন্য বিধি রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও জানান, বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়ার আগে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় এসে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এডহক কমিটি হলে অবশ্যই তার কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি আসবে। কিন্তু তিনি কোন চিঠি পাননি। তাছাড়া এডহক কমিটির কাজ পূর্নাঙ্গ কমিটি করা। মামলাগুলো নিষ্পত্তির এবং তদন্ত না হওয়ার আগে কীভাবে আবদুস সবুরের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হলো, কীভাবে ব্যাংক থেকে সে টাকা তুলে নিল এবং কীভাবেই বা সে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে তা তার বোধগম্য নয়।