জিয়া পরিবারের ভাবমুর্তি!

সেটা শতভাগ সত্য হলেও মূল ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দলীয়  অর্বাচীনরা নির্লজ্জভাবে বলতে শুরু করবে, ‘এসব সর্বৈব মিথ্যা। অন্যায়ভাবে জিয়া পরিবারকে ধ্বংস এবং হেয় প্রতিপন্ন করাই এর উদ্দেশ্য। রাজনৈতিকভাবে জিয়া পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে এসব করা হচ্ছে।’

প্রশ্ন হলো, তাদের ব্যাপারে কেউ কিছু বললে কিংবা সমালোচনা করলেই তাদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়ে যাবে কেন। তারাতো হিন্দু ধর্মের অস্পৃষ্যতার মতো ছুঁয়াচে ব্যাপার নয় যে ছুলে কিংবা বিধর্মীর ছায়া পড়লেই জাত যাবে। আসলে জিয়া পরিবারের ভাবমুর্তিটা কি? মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের পরিচিতি বা ভাবমুর্তি যাই বলুন, আরো দশজন সেনা সদস্যের মত সেনাবাহিনীর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেনাবাহিনীর বাহিরে জিয়াকে কেউ চিনতো জানতো না। জানার কথাও নয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করায় স্বাভাবিকভাবে তাঁর একটা পরিচিতি এবং ভাবমুর্তি গড়ে ওঠে। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তীতে ক্ষমতার হীন উচ্চাবিলাস চরিতার্থ করতে গিয়ে জিয়া একজন খলনায়ক হিসেবে পরিগণিত হন। সেনানিবাসে বসে সেনাবাহিনীর মধ্যে চক্রান্তের জাল বুনেছেন। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য নায়কের ভূমিকা পালন করে জাতীয় বেঈমানরূপে আখ্যায়িত হয়েছেন। চক্রান্তের এক পর্যায় ফেসে গিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কর্ণেল তাহের তাঁর প্রাণ রক্ষা করেন। অথচ পরক্ষণেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সেই তাহেরকেও ছাড় দেননি। তাঁর প্রতি সামান্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ দেখাননি। অধিকন্তু প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর বদান্যতার প্রতিদান দেন। ক্ষমতা নিরাপদ করতে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতার অংশীদার করে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত তার ভাবমুর্তিকে কলঙ্কিত ও বিতর্কিত করেন। যার ফলে রাজনৈতিক, সামাজিক ও জাতীয়ভাবে জিয়া চরম সুবিধাবাদী, ক্ষমতার উচ্চাবলিাসী, অকৃতজ্ঞ, খুনী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চক্রান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত। সুতরাং জিয়াউর রহমানের এমন কোন ভাবমুর্তি অবশিষ্ট নেই যে কারণে জিয়া বা জিয়া পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন অথবা হেয় প্রতিপন্ন হতে পারে। বরং দেশ ও জাতির স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য চরম শাস্তি পাওয়ার দাবি রাখে।

অপরদিকে জিয়া জীবিতকালে কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবী করেননি। আসলে তোষামোদকারী চাটুকাররা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা এবং অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্যই স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চলছে। জিয়া পরিবারের ভাবমূর্তি গেল গেল রব তোলা হচ্ছে। জিয়ার কবরকে বানানো হয়েছে মাজারখানা। এদিকে এই কবরের লাশ নিয়েও রয়েছে চরম বিতর্ক। আর জিয়াউর রহমান খুন-হত্যার হোলি খেলার ভেতর দিয়ে পাহাড় সমান অখ্যাতি-কুখ্যাতির কলঙ্কজনক অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে এক পর্যায় নিজেও খুন  হয়েছেন। কৃতকর্মের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগও মেলেনি। শুনেছি হিন্দু ধর্মের পুরাণে বর্ণিত আছে কুখ্যাত ডাকাত বাল্মিকী তপস্যা করে রাম নাম জপে জপে এক পর্যায় মহা ঋষিরূপে পরিণত হয়েছিলেন। জিয়া সে তপস্যারও সময় সুযোগ পাননি। সুতরাং জিয়ার মাজার জিয়ারত করে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, অবৈধ ক্ষমতা দখল, খুন-হত্যার অনুপ্রেরণা বা আশির্বাদ ছাড়া অন্য কিছু পাওয়ার আছে? তবে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা যেহেতু জিয়ার অনুসারী তারা জিয়ার মাজার জিয়ারত করে দোয়া প্রার্থী হবেন এটাইতো স্বাভাবিক।

দ্বিতীয়তঃ জিয়া পরবর্তীতে স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং পুত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রেও কোন ব্যতিক্রম হয়নি। খালেদা জিয়া রাজনীতি ও দেশ শাসনে স্বামীর পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন। ফলে ধারাবাহিকভাবে অখ্যাতি-কুখ্যাতি আর কলঙ্কের সকল ঘৃন্য অপবাদ আরো বেশি করে পরিবার এবং নামের সাথে যুক্ত হয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল জিয়া অন্যকে লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছেন নিজে অবাধ লুটপাট করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেননি বলে অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু খালেদা জিয়া নিজে এবং পুত্রদ্বয়,আত্মীয়স্বজন ও দলীয় অনুচরদের জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পদ অবাধে লুণ্ঠনের সুযোগ করে দিয়েছেন। জিয়ার রেখে যাওয়া ছেড়া গেঞ্জি আর ভাঙ্গা সুটকেস পুত্রদের জন্য আলাদ্দিনের চেরাগের মতো কাজ করেছে। গুণধর পুত্ররা মায়ের আর্শিবাদ পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশের ব্যাংকে জমা করেছে। দেশের অভ্যন্তরে কোটি কোটি টাকার বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছে। লুটপাট ও ক্ষমতা নিরাপদ করতে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে খুন ও হত্যার সাথে জড়িত থেকেছে। খালেদা জিয়া অনাথ শিশু হিসেবে পুত্রদের পড়াশুনার জন্য রাষ্ট্র থেকে অনুদান নিয়েছেন। সেই অনুদানে খালেদা জিয়া স্বামীর আদর্শে পুত্রদের যথার্থ শিক্ষাই দিয়েছেন। পিতার আদর্শ তথা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, খুন-হত্যা আর লুটপাঠে তারা যথার্থই পারদর্শী হয়ে উঠেছে। এই গুণধর পুত্রদের চুরি, লুঠপাট আর ঘুষ কেলেঙ্কারীর  খতিয়ান এখন বিশ্ব ব্যাংকের বইতেও স্থান পায়। বিদেশের কোর্ট কাছারী কাঠগড়ায় উঠছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন তথ্য প্রমাণে এরা চোর হিসেবে প্রমাণিত। অথচ তারপরও তাদেরকে চোর বলা যাবেনা, কারণ তাতে নাকি জিয়া পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।

খালেদা জিয়া তত্বাবধায়ক সরকারের সময় চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে অর্জিত বিরাট অংকের কালো টাকা সাদা করেন। তাঁর বিলাসবহুল জীবন যাপন ফিলিপিনের মার্কোসের স্ত্রী ইমেলদা মার্কোসের বিলাসিতাকেও হার মানায়। গরীব দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর ৬৭ জন চাকর এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? অথচ এটাই বাস্তব। যে দেশের ৩৮ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কি এই খালেদা জিয়া এ প্রশ্নও মানুষ করেছে। নিজে এবং ছেলেরা লুটপাটের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে আছেন। ইতিমধ্যে জার্মানীর সিমেন্স এজি এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার অধিক অর্থ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কোর্টের রায়ে ছোট ছেলে কেকোর ৬ বছরের জেল ও বিরাট অংকের টাকা জরিমানা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল এই ৫ বছরে খালেদা জিয়ার শাসনামলে সরকারের প্রচ্ছন্ন ছত্রছায়ায় বিএনপি-জামাত জোটের ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচারে হত্যা-নির্যাতন-খুন-ধর্ষণ করেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ প্রথম সারির দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের চারণক্ষেত্ররূপে পরিণত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন চরম পর্যায় পৌছায়।

এসব ঘটনা থেকে বাঁচতে এখন জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। জনগণ ভোট দিয়েছে তাদের দাবি দাওয়া, সমস্যা নিয়ে সংসদে কথা বলার জন্য। অথচ খোড়া যুক্তি ও অজুহাতে অব্যাহতভাবে সংসদ বর্জন চলছে। আবার সংসদে না গিয়ে সাংসদ হিসেবে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করা হচ্ছে। সংসদে দেশের মানুষের সমস্যা, অন্যায়, অবিচার, ভাল মন্দ নিয়ে আলোচনা, কথাবার্তা, তর্কবিতর্ক হবে এজন্যই তো সংসদ। সুতরাং বিএনপির শাসনামলে চুরিচামারি, খুন-খারাবি, লুটপাঠের ঘটনা থেকে থাকলে সেটা নিয়ে সংসদে কথাবার্তা উঠতেই পারে। এবং উঠাইতো স্বাভাবিক। কিন্তু না, কোটি কোটি টাকা চুরি করে, লুটপাঠ করে ধরা পড়ে তথ্যপ্রমাণে প্রমাণিত হলেও চোরকে চোর বলা যাবে না। কারণ চোরদেরও নাকি ভাবমূর্তি আছে।