রাতের আঁধারে সরকারি মালামাল সরিয়ে নেয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক

মো. আনোয়ার হোসেন ও সরকার দলীয় সমর্থকদের কারচুপি ও অনিয়মের মাধ্যমে ৪০ লক্ষ টাকার সরকারি সম্পদ মাত্র ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬ শত ৫০ টাকায় নিলাম বিক্রি করেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি এর সত্যতা পাওয়ার পর নিলাম বিক্রির কার্যাদেশ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা টেন্ডার কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। টেন্ডার কমিটির নির্দেশ অমান্য করে ঠিকাদার শনিবার গভীর রাতে সরকারি সম্পদ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় গৌরনদী থানা পুলিশ মালামাল আটক করে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও সবকার দলীয় সমর্থকদের মধ্যে তোলপার শুরু হয়েছে।

সংশিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর-আগরপুর-সরিকল-হোসনাবাদ নলগোড়া সড়ক। ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে বরিশাল এলজিইডি অধিদপ্তর স্বল্প ব্যয় প্রকল্পে এ সড়কের ১১০৬ চেইনেজে ২৩ মিটার ,১৮৪১ চেইনেচে ২৭ মিটার ,২৫৫৯ চেইনেজে ২৭ মিটার দৈর্ঘ তিনটি আয়রন ষ্ট্রাকচার আরসিসি ব্রিজ নির্মান করেন। ব্রিজ তিনটি ভেঙ্গে নতুন করে পোনে তিন কোটি ব্যায়ে তিনটি গাডার ব্রিজ নির্মান করার প্রকল্প গ্রহন করেন। নিলাম প্রাপ্ত ঠিকাদার লাভলু মিয়া জানান, ১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকায় নিলাম পাইয়ে দেয়ার জন্য গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব ধরনের ঝামেলা মোকাবেলা করার জন্য তার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহন করেছে।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসন জানান, প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন তিনটি ব্রিজ নিলাম দেয়ার সিদ্বান্ত ও নিলাম কমিটি মে মাসের রেজুলেশনভূক্ত না করা হলে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত হবে তাকে জানিয়ে বিষয়টি রেজুলেশন ভুক্ত করার অনুরোধ জানান। একই কথা বলে প্রকৌশলী নিলাম কমিটির সদস্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায় করেন। উপজেলা প্রকৌশলী স্ব উদ্যেগী হয়ে কাগজপত্র তৈরী করে লাভলু মিয়াকেকে নিলাম পাইয়ে দেন। পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশের পর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও ঠিকাদারদের মধ্যে তোলপার শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন টেন্ডার কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন  মোটা অংকের উৎকোচ নেয়ার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমান মিলেছে। গত শুক্রবার সকালে নিলাম কমিটির দুই সদস্য ও ঠিকাদারকে মুখোমুখি করে এক বৈঠক করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্তি জনৈক সদস্য জানান, উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, মেসার্স লাভলু মিয়াকে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকায় নিলাম পাইয়ে দিতে ৪ লক্ষ টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে গ্রহন করেছেন। ঠিকাদার লাভলু মিয়া জানান, মো. আনোয়ার হোসেন এলজিআরডির বরিশাল নির্বাহী প্রকৌশলীর জন্য ৫০ হাজার, গৌরনদী ইউএনওর নামে ১ লক্ষ টাকা, নিজে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকাসহ মোট ৪ লক্ষ টাকা তার (ঠিকাদারের) কাছ থেকে গ্রহন করে একাই তা আত্মসাত করেছেন। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের একজন উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, চতুর প্রকৌশলী মো.আনোয়ার হোসেন এসব ব্যাক্তিদের নামে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংশি¬ষ্টদেরকে জানিয়েছেন জরুরি ভাবে এ কাজটি করার জন্য উপরের নির্দেশ রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলা টেন্ডার কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এলজিইডির উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিতসহ নিলাম বিক্রি বাতিলের জন্য গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিলাম পাওয়া ঠিকাদারের কাছে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেন।

শনিবার টেন্ডার কমিটি নিলাম বিক্রির কার্যাদেশ বাতিল করে ঠিকাদারকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন। ব্রিজের মালামাল সরিকল ইউনিয়ন পরিষদে জমা রাখার জন্য লিখিত ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদার আওয়ামীলীগ নেতা লাভলু মিয়া টেন্ডার কমিটি নির্দেশ অমান্য করে শনিবার গভীর রাতে ব্রিজের মালামাল পরিবহন যোগে সরিয়ে নেওয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গৌরনদী বাসষ্টান্ড এলাকা থেকে আটক করে। গৌরনদী থানার উপ-পরির্দশক শাহজালাল খলিফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সবকারি মাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে মালামাল আটক করি। পুলিশের উপস্থিতির টের পেয়ে মালের সাথে থাকা লোকজন গা-ঢাকা দেয়। সরকারি সম্পদ চুরি অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার আওয়ামীলীগ নেতা লাভলু মিয়া বলেন, আমি টেন্ডার কমিটি নির্দেশমতে মালামাল উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ মালামাল জব্দ করেন।

অনুরুপভাবে গত ১৬ মে প্রকৌশলী মো.আনোয়ার হোসেন ঠিকাদারের কাছ থেকে ৮৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পুরাতন আয়রন ব্রিজের প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মালামাল ১৪ হাজার ৭শত টাকায় নিলাম দেখিয়ে জনৈক ঠিকাদার লিটন বেপারীর কাছে নিলাম বিক্রি করেছে। ঠিকাদারের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাক ঘুষ নেয়ার অভিযোগের ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কিছু ভুল আছে, তবে পুরো অভিযোগ সঠিক নয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন তার বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও নিলাম কমিটিসহ উপজেলা টেন্ডার কমিটির নাম ভাংঙ্গিয়ে ঠিকাদের সাথে অনৈতিক লেনদেও করেছে এবং সরকারী রাজস্ব বিনষ্ট করে নিজেই আত্মসাত করেছেন।