বিএনপির রাজনৈতিক ঐক্য ও ইফতার পার্টি সর্বত্রই উপেক্ষিত বহিষ্কৃত ও সংষ্কারবাদিরা

মিত্র জামাত, ইসলামী ঐক্যজোট, বিজেপির পাশাপাশি সমমনা ৮ দলের বাইরেও সমমনা নয়, কিংবা নীতি আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন দলকে জোটে আমন্ত্রন জানালেও দলের সংষ্কারবাদি বলে পরিচিত ও বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো উদ্দোগ নিচ্ছেনা। এমনকি এদের সঙ্গে দলীয়ভাবে কোনো যোগাযোগও রক্ষা করা হচ্ছে না।

দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, দল থেকে বেড়িয়ে গিয়ে এলডিপি গঠন করা কর্নেল অলি আহমদ, দলের নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন রাজনৈতিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী কিংবা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আবদুর রব, কল্যান পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিমসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।

এ ক্ষেত্রে মহাজোটের অন্যতম দল এরশাদের জাতীয় পার্টি, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের জাকের পার্টি, ফেরদৌস কোরেইশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মতো দলের নাম শোনা যাচ্ছে।

কিন্তু দল থেকে বহিষ্কৃত স্থায়ী কমিটির এক সময়ের প্রভাবশালী সদস্য  চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সংষ্কারবাদী গ্রুপের নেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, সাবেক তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন, নজির হোসেন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ আবুল হোসেন, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাহজাহান, খুলনার সাবেক মেয়র শেখ তৈয়বুর রহমান, সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল, সাবেক এমপি রুস্তম আলী ফরাজীসহ অসংখ্য নেতাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছেনা। এসব নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও দলে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি দলে ফিরে আসতেও এসব নেতারা কোনো যোগাযোগ করছেন না।

এ ব্যাপারে বহিষ্কৃত সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে দলের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। দলীয় পর্যায়ে কোনো যোগাযোগ হচ্ছেনা। ইফতার পার্টির দাওয়াত পাননি। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রশ্নই আসেনা। দল ফিরিয়ে নিতে প্রস্তাব দিলে কি করবেন এর জবাবে বলেন, তখন দেখা যাবে।

রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, এখনও আগের মতোই ক্ষমতায় থাকতে ও ক্ষমতায় যেতে যা করা দরকার তাই হচ্ছে। গুনগত কোনো পরিবর্তন রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। নতুন দল করার বিষয়ে বলেন, আপাতত নয়, করলে আপনাদের জানিয়েই করবো।

সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেনে বসে আছি। যারা সংষ্কারের নেতৃত্ব দিলে তাদের দলে নেয়া গেলো, ভালো পদে বসানো হলো, তাদের কোনো দোষ নেই, সব দোষ আমার। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনে ভয়ে ভিত সন্তস্ত হয়ে সংষ্কার সংষ্কার করেছি। দল প্রয়োজন মনে করে ডাকলে যাবো, না হলে বসে থাকবো। দল না ডাকলে তো যাওয়া যায়না। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রয়াত আবদুল মান্নান ভুইয়া, আশরাফ হোসেন ও মফিকুল হাসান তৃপ্তি ছাড়া আর কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। বাকিরা সবাই দলে রয়েছেন। বহিষ্কৃতদের দলে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দলের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। মোশারফ হোসেন শাহজাহান, শাহ আবুল হোসেন ও শহিদুল হক জামাল প্রসঙ্গে বলেন ওনারা আমাদের দলে রয়েছেন কেউ নির্বাহী কমিটিতে কেউ প্রাথমিক সদস্য হিসেবে রয়েছেন। সরদার শাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, জেড এ খান, শেখ রাজ্জাক আলী, শেখ তৈয়বুর রহমান প্রসঙ্গে বলেন ওনারা আমাদের সঙ্গে নেই। তাদের ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ আপাতত নেই। তাদের ইফতারেও দাওয়াত দেয়া হয়নি।

বহিষ্কৃত ও সংষ্কারবাদি পরিচয়ের কারণে দলের কমিটি থেকে বাদ দেয়া নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনতে দলের মধ্যে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেই। তবে তলে তলে দলের কেউ কেউ তাদের দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যোগাযোগ রাখছেন। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।

এদের দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডের ইঙ্গিত থাকলেও এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রত্যেকের নির্বাচনী এলাকার দলীয় প্রতিদ্বন্ধিরা এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দলীয় কার্যালয়সহ দলের সভা সমাবেশে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য কিংবা শ্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি এদের প্রতিকুলে নিয়ে যায়। এ অবস্থার উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত দল জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। তবে এরা আশাবাদি বি চৌধুরী কিংবা কর্ণেল অলির মতো খুব শীঘ্রই ডাক পড়বে তাদের।