রেজাউলের সিকদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলার রায় বৃহস্পতিবার। আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার ফরেনসিক রির্পোট পেলেই ওই হত্যা মামলার চার্জশীট দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। চাঁদাবাজি মামলার রায় ঘোষনার জন্য খুনী রেজাউলকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বরিশাল কারাগারে আনা হয়েছে।
আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক ফজলুর রহমান জানান, নাদিয়া হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহৃত রক্তমাখা অস্ত্র মামলার আলামত হিসেবে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ওই রির্পোট পেলে খুব শীঘ্রই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চাজর্শীট দাখিল করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অপরদিকে ২০০৮ সনে গৌরনদী থানার একটি চাঁদাবাজি মামলার রায় বৃহস্পতিবার ঘোষনা করা হবে। সে জন্য ওই মামলার প্রধান আসামি খুনী সিকদার রেজাউলকে আজ বুধবার ঢাকা থেকে বরিশাল কারাগারে আনা হয়েছে।
গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম ওই চাঁদাবাজি মামলার এজাহারের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, ২০০৮ সনের ১০ আগস্ট গৌরনদীর টরকী বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ মাওলা সরদারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে রেজাউল সিকদার তার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। রেজাউল তার ক্যাডারদের অব্যাহত হুমকির মুখে ব্যবসায়ী মাওলা সরদার রেজাউলকে দেড় লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য রেজাউল তাকে (মাওলাকে) ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। উপায়অন্তুর না পেয়ে ব্যবসায়ী মাওলা সরদার গৌরনদী থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন গৌরনদী থানার এস.আই মোঃ মাসুমুর রহমান দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ৫ নভেম্বর মামলার প্রধান আসামি রেজাউল সিকদারকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে জেলা জজ থেকে মামলাটি বিচারের জন্য দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে প্রেরন করা হয়। সাতজন স্বাক্ষীর মধ্যে আদালত ৬ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে চলতি বছরের ২১ জুলাই আইনী যুক্তি তর্ক (আগুমেন্ট) অনুষ্ঠিত হয়। ওই আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক চাঁদাবাজি মামলার রায় ঘোষনার জন্য আগামিকাল ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, একাধিক মামলার আসামি হয়ে পুলিশের গ্রেফতার আতংকে সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে বসে তার সাথে পরিচয় হয় বনানী ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও বরিশালের কাউনিয়া এলাকার ধনার্ঢ্য ব্যক্তি মরহুম এডভোকেট রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা কামরুন নাহার নাদিয়ার। একপর্যায়ে পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে নারী লোভী রেজাউল নাদিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে তাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তারা রায়েরবাজারের ৯১ হাতেমবাগের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। এরইমধ্যে নাদিয়া দু’মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পরেন। বিয়ের পর থেকেই নাদিয়ার পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পরে। নাদিয়া হত্যার একমাস পূর্বে রেজাউল তার সহযোগীদের নিয়ে নাদিয়ার পিতার কাউনিয়া এলাকার একটি বিশাল পুকুর দখল করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে নাদিয়ার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। ওই ঘটনার জেরধরে গত ২৪ এপ্রিল পরিকল্পিত ভাবে ঢাকার বসে রেজাউল নাদিয়াকে হত্যা করে। একপর্যায়ে নাদিয়ার লাশ গুমের জন্য রেজাউল তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারযোগে ঢাকা থেকে গৌরনদী আসার পথিমধ্যে ওইদিন রাতে ঢাকার শাহবাগ থানার পুলিশ লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ খুনী রেজাউলকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় হতভাগ্য কামরুন নাহার নাদিয়ার ভাই সজিব আহম্মেদ শাহ্রিয়ার সুজন বাদি হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বর্তমানে আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক ফজলুর রহমানের কাছে রয়েছে। এরপূর্বে গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের ফিরোজ মিয়ার কাপড়ের দোকানের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে দিবালোকে ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার তার পিতা বার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবুল শিকদারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত হাবুল সিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী লিনা রহমান বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের বড়ভাই সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় রহস্যজনক কারনে হাবুল সিকদারের হত্যা মামলাটি নিস্পত্তি হয়ে যায়।