বাংলাদেশের ২৬১ একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু

আগেই বাংলাদেশের তামাবিল, নলজুড়ি ও লিঙ্কহাট সীমান্তের ২৬১ একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের কোলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি এ খবর জানায়।

পত্রিকাটির দাবি, ভারত দীর্ঘদিন ধরেই মেঘালয় ও আসাম সীমান্ত লাগোয়া এই জমি ফেরত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে বলে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর আগে ক্ষমতায় থাকা কোনো সরকারই বিষয়টির গুরুত্ব দেয়নি। শেখ হাসিনা সরকার কিছু দিন আগে প্রতিবেশী দেশের এই দাবি খতিয়ে দেখতে সীমান্ত এলাকায় জরিপের নির্দেশ দেয়। সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, কয়েক মাস ধরে জরিপ চলার পরে দেখা গিয়েছে ভারতের দাবির সারবত্তা রয়েছে। তার পরেই এই জমি ফেরৎ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, তিন জায়গার মোট ২৬১ একর জমি ভারতকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিএসএফ ইতোমধ্যেই তাদের দিকের সীমান্ত খুঁটি এগিয়ে এনে এই বাড়তি জমির দখল নিয়েছে। তবে সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ‘আসাম ও মেঘালয়ে তামাবিল এলাকায় সীমান্তের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ রয়েছে দু’দেশের মধ্যে। এ নিয়ে বহু বৈঠক হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, ১৯৭১-এর যুদ্ধে ও তার পরে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা তাদের খুঁটি এগিয়ে এনে ভারতের বেশ কিছুটা জমি গায়ের জোরে দখল করে নিয়েছে। ভারত তাদের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সীমান্তে তাদের দিকের জরিপের রিপোর্ট ঢাকার হাতে তুলে দিলেও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা এত দিন তাকে আমলই দেয়নি। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের সাথে সুসম্পর্ককে আরো দৃঢ় করার নীতি নিয়েছে। দেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী জঙ্গিঘাঁটিগুলো উচ্ছেদে গোপনে অভিযান চালানো ছাড়াও গোপনে বেশ কয়েক জন জঙ্গি নেতাকে বিএসএফ’র হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে মাত্র ছয় কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে এত দিনের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তও নেয় সরকার। ভারতের দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখতে জরিপের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই জরিপেই দেখা যায়, সত্যিই ভারতের বেশ কিছুটা জমি বাংলাদেশের দখলে রয়েছে। তামাবিলে ১২৭০-৭১ নম্বর সীমান্ত খুঁটি লাগোয়া ২২০ একর, নলজুড়ি সীমান্তে ১২৭৭-৭৯ নম্বর খুঁটির কাছে ৩৩ একর ও লিঙ্কহাট সীমান্তে ১২৬৩-৬৭ খুঁটির কাছে ৮ একর এমন জমি বাংলাদেশের দখলে রয়েছে, মানচিত্র অনুযায়ী যার মালিকানা ভারতের। এর পরেই বাংলাদেশ সরকার এই জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে।’

জরিপ দলের এক সদস্যের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকাটি জানায়, ‘জাফলংয়ের কাছে তামাবিল ও নলজুড়ির এই এলাকায় ভারতবিরোধী রাজনীতি যথেষ্ট প্রকট। জরিপের কাজ শুরু করার পর থেকেই সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সম্ভবত সেই বিষয়টি বিবেচনা করেই জমি ফেরত দেয়ার এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা খুঁটি সরিয়ে নেয়ার পরে বিএসএফ ইতোমধ্যেই খুঁটি এগিয়ে এনে এই জমির দখল নিয়েছে। কিন্তু সরকারি ভাবে এই কথা স্বীকার করেনি।’