নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার জন্যই ২১ আগস্ট মামলা সাজানো হয়েছে -বিএনপি

বলে আশংকা প্রকাশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, এ মামলাটি সাজানো হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার জন্য। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

বিচার শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আদালতকে প্রভাবিত করেছেন বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল  সম্পূরক অভিযোগপত্রটি প্রত্যাহার এবং মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন।  

ফখরুল বলেন, এ মামলায় তারেক রহমানসহ দলীয় নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে জড়ানো হয়েছে। বিচারের আগে প্রধানমন্ত্রী ঘটনার সঙ্গে বিএনপি জড়িত বলে বক্তব্য দিয়েছেন। একটি বিচারাধীন ‘সাবজুডিস’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে আদালতকে সরাসরি প্রভাবিত করেছেন। তাই আমরা আশংকা করছি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় পূর্ব নির্ধারিত হয়ে আছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরণের নজির নেই যে মামলা চলাকালে সরকার প্রধান ওই মামলা নিয়ে কথা বলেন। কথা বলে প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রমাণ করলেন তিনিই বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রধান। একটি চলমান মামলা তার এহেন বক্তব্য বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে এটাই স্বাভাবিক। এটা আদালত অবমাননা কিনা তা বিচারকগণ দেখবেন। তবে প্রমাণিত হয়ে গেলো তারেক রহমানসহ অন্য নেতাদের জড়ানো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আর একটি দৃষ্টান্ত। তিনি এ মামলা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে বলে জানান।

তিনি অভিযোগ করেন, ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এতো তাড়াহুড়া করে মামলাটি করা হয়েছে। তারেক রহমান জামিন নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। এরকম অবস্থায় আইনি লড়াইয়ের সুযোগ দিচ্ছে না বলে আমরা মনে করি। তারেক রহমানসহ নেতাদের আগামী নির্বাচনে আযোগ্য ঘোষণা করতে এই মামলাটি তাড়াহুড়া করে শেষ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

একইভাবে সরকার বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার অংশ হিসেবে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ‘নীল নকশা’ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

২১ আগস্ট মামলার আসামী মুফতি হান্নানের আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দির সাক্ষাৎকার গণমাধ্যম ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সম্প্রচারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কিভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ হলো, তার আমরা ব্যাখ্যা চাই। অতীতে কখনোই এরকম জবাববন্দি প্রকাশের নজির নেই।

২১ আগস্টের মামলা বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা এই মামলা সম্পর্কে যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা নিন্দনীয়।  প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এটা প্রমাণ হয়, তিনি বিচার বিভাগকে সরাসরি প্রভাবিত করছেন। যে মামলাটি শুনানি এখনো শুরুই হয়নি। সেখানে তিনি বলে দিচ্ছেন, রায় কার্যকর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এই মামলার প্রশাসনিক রায় দিয়ে দিয়েছেন বলে আমরা মনে করি। ২১ আগস্টের মামলায় তারেককে জড়ানো সরকারের সুদূরপ্রসারী নীল নকশার ষড়যন্ত্র বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

ফখরুল বলেন, আমরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। আসল দোষীদের বের করতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে। সম্পূরক অভিযোগপত্র থেকে তারেকসহ দলীয় নেতাদের নাম প্রত্যাহার করতে হবে। এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তিনজন পুলিশের মহাপরিদর্শককে জড়ানো হয়েছে। তাদের ওপর চাপ দিয়ে তারেক রহমানের নাম বলানো চেষ্টা হয়েছিলো। তারা বলেননি বলে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার সপ্তম বার্ষিকী উপলক্ষে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য- বিএনপি-জামাত জোট সরকারের মদদ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না।’

তিনি বলেন, আমরা ২১ আগাস্ট ঘটনার সময় ক্ষমতায় ছিলাম। ওই ঘটনায় আমরা নিন্দা জানিয়েছি। এর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইকে তদন্ত করতে ঢাকায় আনা হয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ ওইসব তদন্ত টিমকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি। তারা মামলার তদন্তে অসহযোগিতা করেছে।

তিনি বলেন, এই মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের জবানবন্দি যেভাবে মিডিয়ায় প্রচার করা হলো তাতে প্রমাণ হলো এই মামলার রায় পূর্ব নির্ধারিত। ১৪ বার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। মুফতি হান্নানকে দিয়ে মিথ্যা জবাববন্দি দেয়ানোর জন্য তাকে ২০০ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত দলীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে এসব করানো হয়েছে।

তিনি বলেন, মিডিয়াতে গোয়েবলসীয় কায়দায় যেভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে তাতে মনে হয় সরকারের প্রভাবশালী মহল চাপ দিয়ে মিডিয়াগুলোকে এই প্রচারণা চালাতে বাধ্য করছে।

তিনি বলেন, অবিলম্বে এই মামলা থেকে তারেক রহমানের নাম বাদ দিয়ে আসল আসামিদের খুঁজে বের করুন। বিএনপি সব ধরণের সহযোগিতা করবে। অন্যথায় জনরোষে পড়লে পালিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবেন না।