বরিশালে ভুয়া নিলামের কার্যাদেশ দেখিয়ে স্টীলের ব্রীজ চুরি

সাইদ মেমন, বরিশাল ॥ বরিশাল জেলা পরিষদের একটি স্টীল ব্রীজ ভুয়া নিলামের কার্যাদেশ দেখিয়ে চুরি করেছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার ব্রীজটি চুরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম।

তিনি বলেন, স্থানীয় লোকের মাধ্যমে খবর পেয়ে ব্রীজের মালামাল উদ্ধারের জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার লবনসারা এলাকার হালিমা খাতুন মহিলা মাদ্রাসারা সামনে এই ব্রীজটি পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব-পশ্চিম লবনসাড়া গ্রামের ভেতর থেকে বয়ে চলে খালের ওপর স্থাপন করা হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী। এই সেতুর পাশে আরেকটি সেতু নির্মান হওয়ায় ষ্টিলের ব্রীজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিলা। কিছুদিন পূর্বে কতিপয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্রীজটি নিলামে বিক্রির জন্য তার (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) কাছে আবেদন করেছিলো। জেলা পরিষদের সভায় বিষয়টি তোলা হলে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ব্রীজটি নিলামে বিক্রি না করে অন্যত্র স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী ব্রীজটি বানারীপাড়ার শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের বাড়ির পাশে বয়ে চলা খালের উপর স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম বলেন, মঙ্গলবার সকালের দিকে ৪-৫ জন শ্রমিক সেই লোহার ব্রীজটি খুলে নেয়ার চেষ্ঠা করেন। এসময় এলাকাবাসী তাঁদের বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক রাহাত আহমেদ ননী ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তিনি নিজেই স্থানীয়দের লোহার সেতু বিক্রির জেলা পরিষদের কার্যাদেশে দেখান। এরই ফাঁকে শ্রমিকরা সেতুটি খুলে ট্রলারে করে সেখান থেকে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতেই সেতুর মালামাল বরিশালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে মালামাল বরিশাল শহরের হাটখোলার একটি ভাঙ্গারীর দোকানে রয়েছে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম আরো বলেন, নিলামের যে কার্যাদেশ দেখানো হয়েছে তাতে বিক্রয় মুল্য ৬৮ হাজার ১ শত টাকা দেখানো হয়েছে। কার্যাদেশে গত ১৩ এপ্রিলের ৮২৬ নম্বরের যে স্মারক উল্লেখ করা হয়। ওই তারিখে সর্বশেষ স্মারক নম্বর ছিলো ১৯৯।  বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউপির রাজার চর গ্রামের মোঃ হোসাইন আহম্মদ নামে এক ব্যক্তির মেসার্স তুহুরিয়া এন্ড রাফি এন্টারপ্রাইজের নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়দাতা দেখানো হয়েছে। সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, ৭০ ফুট দৈঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্তের এই ব্রীজটির মুল্যে ধরা হয়েছিলো ১লাখ ৩২ হাজার ৯৩২ টাকা।

হাটখোলার ‘গাজী কালু স্টোর্স’র মালিক মোঃ মন্টু মিয়া জানান, বানারীপাড়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাওলাদ হোসেন সানার ভাই ননীর কাছ থেকে ব্রীজটি ৬৮ হাজার ১০০ টাকায় কিনেছেন। মঙ্গলবার শ্রমিকরা গিয়ে ব্রীজটি খুলে নিয়ে এসেছে। কাগজপত্র সম্পর্কে বলেন, তারা দরপত্র দাখিলের মাধ্যমে টেন্ডার পেয়েছেন। তার কাগজ ননী দেখিয়েছেন। কাগজপত্র দেখেই তিনি ব্রীজটি কিনেছেন। ভূয়া কাগজ বলে তিনি বিষয়টি জানতেন না। উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক রাহাত আহমেদ ননী সাংবাদিকদের বলেন, সেতু খুলে নেয়ার সময় স্থানীয় সৈয়দ জাকির হোসেন ও আওয়ামী কর্মী মিলন মুন্সি উপস্থিত ছিলেন। তাদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে শ্রমিকদের কাছে কাগজপত্র দেখতে চাই। এ সময় তারা জেলা পরিষদের কার্যাদেশ দেখিয়ে সেতু খুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর লবনসাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই রফিকুল ইসলাম আমার বাড়িতে এসে বিষয়টি জানতে চান। আমি তাকে সেই কার্যাদেশের কাগজ দিয়েছি। সেটি ভূয়া কিনা জানিনা। এমনকি এ ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত নন।

উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে লোহার সেতু চুরির বিষয়টি জানানো হয়। সে অনুযায়ী ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই সেতুর লোহা খুলে নেয়া হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি স্বীকার করলেও কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা বলতে চাচ্ছেন না। সে ভাবেই পুরো ঘটনাটি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তাদের নির্দেশ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।