রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীরে একটু দয়া কর

খোকন আহম্মেদ হীরা, উজিরপুর থেকে ফিরে ॥ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গন ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। এখানকার ভাঙ্গন কবলিত অসহায় মানুষদের মুখে এখন এমনটাই আর্তি “ও সন্ধ্যা নদীরে একটু দয়া কর, ভাঙ্গিস না আর বসতভিটা মোগো বাড়িঘর”।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে অসংখ্য পরিবারের বসত বাড়ি, স্কুল, বাজার, ব্রিজ, মসজিদ, পাকা সড়ক ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনরোধে সরকারি ভাবে তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় গত এক সপ্তাহে উজিরপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে শত শত বাড়িঘর, পাকা সড়কসহ প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জনগুরুতপূর্ণ একটি ব্রিজ। গত দু’দিন আগে চতলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল মজিদ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিও যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। নদীর ভাঙ্গনে বিদ্যালয় বিলীন হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও একটি বাজার রয়েছে এখন হুমকির মুখে।

ইতিপূর্বে একাধিকবার ওই এলাকার জনগন ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরিশাল শহরে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করলেও বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গনরোধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চতলবাড়ি ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষ সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে।

সরেজমিনে উজিরপুর উপজেলার সাকরাল গ্রামের ইসমাইল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আদম আলী, সাইফুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদী ইতোমধ্যে বহু পরিবারের বাড়ি-ঘর গ্রাস করে নিয়েছে। দুটি ব্রিজ, সাকরাল গ্রামের হাওলাদার বাড়ি ও চতলবাড়ি জামে মসজিদ, চতলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উজিরপুর-সাতলা সড়কসহ দুটি ব্রিজ রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীর কবল থেকে রেহাই পায়নি। সাকরাল গ্রামের সাকিল মাহমুদ, রোজিনা বিবি, সাহেব আলীসহ একাধিক ব্যক্তিরা নদীর মাঝ বরাবর দেখিয়ে বলেন, ওইখানে যে মসজিদ, বাজার, রাস্তা ও গ্রাম ছিলো তা আজ বোঝার কোন উপায় নাই। চতলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম সিকদার বলেন, স্কুলের একটি পাকা ভবন রমজানের আগে ও অন্যটি গত দু’দিন পূর্বে নদী গ্রাস করে নিয়েছে। চতলবাড়ি বাজার ও চতলবাড়ি আব্দুল মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভাঙ্গনের ছুঁই ছুঁই।

এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গন উজিরপুরের চতলবাড়ি ও সাকরাল এলাকাকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। ওই এলাকায় কয়েক’শ পরিবার তাদের সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসলেও তাদের ভাগ্যে আজো সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগীতা জোটেনি। তিনি বরিশাল ডিসি অফিসের সমন্বয় সভায় উজিরপুরের ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের জানান, চতলবাড়িতে নদী ভাঙ্গনরোধে এক হাজার ২০ মিটার এলাকায় বল্গক ফেলার জন্য একটি ফাইল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রায় ১১ কোটি টাকা প্রকল্পের এ বরাদ্দ পেলেই দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।