শাবিপ্রবিতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন, শাবি ॥ মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারে তার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছেই। দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠসহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমাগত চলছে এ ষড়যন্ত্র। ধাপে ধাপে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বাস্তবায়িত হচ্ছে এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবীদের প্ররোচণায় নানা কূট কৌশল। গত বছর কয়েকটি বিষয় ব্যতীত সব বিষয়েই ভর্তি হতে পেরেছে মাদরাসা থেকে আগত শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এবার মাত্র দুটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে ভর্তির অযোগ্যতা ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি। শর্তারোপে বলা হয়েছে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যে অর্থনীতি পড়ে তা আসল অর্থনীতি নয়। তাই মাদরাসা থেকে মানবিক বিভাগ থেকে পাস শিক্ষার্থীরাই বঞ্চিত হবে এবছর শাবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়া থেকে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-২০১২ সেশনে মাদরাসা ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ঈদুল ফিতরের ছুটির ঠিক আগের দিন অর্থ্যাৎ ২৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কিছু সদস্যের আপত্তির মুখে বিতর্কিত এই সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ওই সভায় সাত জন সদস্যও নোট অফ ডিসেন্ট দেয়ার কথা জানা গেছে। তাদের আপত্তির পরেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে মাদরাসা থেকে পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের শাবিপ্রবিতে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৯টি বিভাগের মধ্যে শুধু বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া সবগুলোতে ভর্তির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা থেকে পাস শিক্ষার্র্থীদের বিভিন্ন শর্তের বেড়াজলে আটকে বাংলা ও ইংরেজিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে সেখানে শাবিপ্রবি’র প্রশাসন এ দুটো বিভাগেই মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি সুযোগ রাখে। সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য বিভাগে যে শর্তের কথা বলে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করছে তা শুধু অযোক্তিক নয় হাস্যকরও বটে। সিলেটের শাহজালাল (র) এর পূণ্যভূমিতে তাঁরই নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম ও বৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এরকম কোন শর্তারোপ করা হয়নি যাতে মাদরাসা পড়–য়া কোন শিক্ষার্র্থীর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে বাধার সম্মুখীন হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও ২০০৯ সালে মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ওই সব বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ২০১০-১১ সেশনে ভর্তির পরীক্ষার দিন হঠাৎ করেই সামাজিক অনুষদের কয়েকটি বিভাগে (যমন বিবিএ, অর্থনীতি) মাদরাসা ছাত্ররা ভর্তি হতে পারবে না বলে ভর্তি পরীক্ষার কমিটির সদস্যরা জানায়। একাডেমিক কাউন্সিলে পাস না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় হতবাক হয়ে যান কাউন্সিলের সদস্যসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রসমাজ। ২০১০-১১ সেশনে মেধাতালিকায় ভালো ফলাফল করেও কাঙ্খিত বিষয় নিতে পারেনি অনেক মাদরাসা শিক্ষার্থী। এমনকি মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান করেও বিবিএ নিতে পারেনি এমনও খবর জানা গেছে। তাদেরকে শুধু মৌখিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা জানায় মাদরাসায় যে অর্থনীতি পড়ানো হয় সেটি আসল অর্থনীতি নয়। ওই বছর ভর্তি পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. ইয়াসমীন হক। এবছরও ওইরকম অযোক্তিকভাবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের শাবিপ্রবিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণ বন্ধ রাখার জন্যে একাডেমিক কাউন্সিল থেকে এরকম শর্ত পাস করে নেয়া হয়। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অর্থনীতির কথা বলে ভর্তি হওয়া যাবে না এমন কোন শর্ত আমাদের জানা নেই। বাংলা ও ইংরেজি ২০০ নম্বরের কথা ঢাকা, জাহাঙ্গীনগরসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্তারোপ করে তাতে মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা হারায়। কারণ মাদরাসায় বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে মোট ১০০ নম্বর পড়ানো হতো। তবে এ বিষয়টা দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পক্ষে আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় নানা কৌশলে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে দেয়নি। হায়রে দেশ! এটাই সংবিধানপ্রদত্ত দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার? শাবিপ্রবির বর্তমান এমন সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো তার কোন ব্যাখ্যা এখনও জানা যায়নি। প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পরে কেন মাদরাসা ছাত্রদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত? এতবছর যারা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষেদর বাংলা ও ইংরেজিসহ সব বিষয়ে ভর্তি হলেও কেন হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত?কাদের নীলনকশা বাস্তবায়নে নেমেছে শাবি প্রশাসন? সিলেটের ইসলামপ্রিয় মানুষের মনে আজ একটাই প্রশ্ন কাদের স্বার্থে একের পর এক মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে? সিলেট তথা বাংলাদেশের তৌহিদা জনতার দাবি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার জন্য যাতে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হয়। সমানভাবে সুযোগ পেয়ে মেধানুসারে পছন্দমত বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে এমনই প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে। অচিচেরই এমন বিতর্কিত শর্তারোপ তুলে নিয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিবেÑশাবিপ্রবি প্রশাসনের প্রতি এমন অনুরোধ সবার।