ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বরিশালের অর্ধশত ভবন

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ বরিশাল নগরীর প্রায় অর্ধশত ভবন ভ’মিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এক ডজন ভবন গত বছর ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বরিশাল সিটি করপোরেশন । কিন্তু ভবনগুলোর মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকায় এক বছরেও তা ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। ভূমিকম্পে এসব ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে নগর বিশেষজ্ঞরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর দেড়শ বছরের পুরনো ভবন রয়েছে ১৫টিরও বেশি। এসব ভবনের মধ্যে নগরীর বগুড়া রোডের মহালয় নিবাস, ওবায়েদ মঞ্জিল, সদর রোডের ব্রাহ্ম সমাজের বাড়ি, শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাস, বিএম কলেজের ছাত্রী হোস্টেল দেবেন্দ্র ভবন, মহিলা কলেজের গোড়াচাঁদ রোডের ছাত্রী নিবাসের মূল ভবন, জেলেবাড়ির পোল সংলগ্ন আইনুদ্দিন হাওলাদারের বাড়ি ও বটতলা হোমিওপ্যাথিক কলেজ সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করছে অসংখ্য মানুষ। এসব ভবনে বসবাসকারী ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর সদর রোডের শহীদ মিনারের বিপরীত দিকে ব্রাহ্ম সমাজের বাড়িটির বয়স দেড়শ বছর। সেখানে একটি সংগীত বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ ভবনের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা। বটতলা হোমিওপ্যাথিক কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে জরাজীর্ণ একটি ভবনে বসবাস করছে কয়েকটি পরিবার। ভবন মালিকের হদিস না মিললেও যারা বংশ পরম্পরায় ঐ ভবনে বাস করছেন তারা জানান, তারা শত বছর যাবত্ ভবনের দখলে আছেন।  প্রাণহানির আশংকা থাকা সত্ত্বেও নিম্নবিত্ত কয়েকটি পরিবার সেখানে বসবাস করছে। একই ভাবে কাউনিয়া প্রধান সড়কের এ কাদের চৌধুরী স্কুলের বিপরীত পার্শে¦র বাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে একাধিক পরিবার। এ সব ভবনের অধিকাংশেরই মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এছাড়া সরকারি দেবোত্তর সম্পতিতে গড়ে উঠা কিংবা বহু বছর আগে ফেলে রেখে দেশান্তরি হওয়া মানুষের বাড়ি-ঘর ছিল এগুলো। গোড়াচাঁদ দাস রোডের ঝুঁকিপূর্ণ যে ভবনে মহিলা কলেজের ছাত্রীরা বসবাস করছে সেই ভবনটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিলো বলে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান। এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানান, গত বছর জুলাই মাসে নগর ভবনের পর্যবেক্ষক দল নগরীর প্রায় অর্ধ-শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অনুসন্ধান চালিয়ে ১২টিকে  ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা ও বসবাসের অনুপযোগী চিহ্নিত করে  চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এর মধ্যে নগরীর বগুড়া রোডের মহালয় নিবাস, কাউনিয়া সিরাজ মহল, ঈশ্বর বসু রোডের সৈয়দ মঞ্জিল, হাসপাতাল রোডের মান্নান মৃধার ভবন, কালুশাহ সড়কে অবস্থিত জালাল আহমেদ ভবন ও নবগ্রাম রোডের হাতেম আলী হোস্টেলের পুরাতন ভবন, মেডিক্যাল কলেজ লেনের ক্ষণিকা ও বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন চিহ্নিত করা হয়েছিলো। চিহ্নিত ভবনগুলোর মধ্যে শুধু সদর রোডের সমবায় ভবনটি সমিতির পক্ষ থেকেই অপসারণ করা হয়েছে। বাকি ভবনগুলো নগর ভবনের মতই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বরং নগর ভবনের কর্মকর্তারা এখন কথা বলছেন উল্টো সুরে। নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র জানান, গত বছর ১২টি ভবন চিহ্নিত করার সময় সঠিক বিশ্লেষণ করা হয়নি। এ নিয়ে অনেক আপত্তি ও আইনি জটিলতা রয়েছে, যে কারণে করপোরেশন এগুতো পারছে না। ভবন ভাঙ্গার ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা জানান, পুরনো ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থান, নির্মাণ শৈলী বিচার-বিশ্লেষণ করে পুনরায় তালিকা হবে।