উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন – অতিউৎসাহী বিএনপি – বেকায়দার পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে এক প্রাইমারি শিক্ষক খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশালের গৌরনদীতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ও বিরোধী দলের আন্দোলনের ইস্যু তৈরির জন্য এ হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষে উঠে পরে লেগেছেন বিএনপির অতিউৎসাহী নেতৃবৃন্দরা। ঢাকায় বসে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্রিফিং শুনে অবাক হয়েছেন নিহত শিক্ষকের পরিবারসহ গৌরনদীর সর্বস্তুরের জনগন। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টাকারী বিএনপির র্শীর্ষ নেতাদের মনগড়া এ গল্পকাহিনীর ধিক্কার জানিয়েছেন এখানকার সাধারন জনগন। একজন শিক্ষক খুনের ঘটনাকে রাজনৈতিক ভাবে জড়াতে গিয়ে জনতার সমালোচনায় পরেছেন বিএনপির কতিপয় কেন্দ্রীয় নেতারা। নিহত শিক্ষকের জানাজার পূর্বে তার বড় ভাইয়ের বক্তব্যে দারুন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে জানাজার নামাজে উপস্থিত বিএনপির দু’কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য নেতাদের। এহেন পরিস্থিতিতে মহা বিপাকে পরেছেন স্থানীয় পুলিশ প্রসাশনের সদস্যরা।

সূত্র মতে, গৌরনদীতে দীর্ঘদিনের ঝিঁমিয়ে পড়া বিএনপির অতিউৎসাহী কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থকেরা এ হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ভাবে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পরেন। তারই ধারাবাহিকতায় নিহত শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে তাদের দলের সক্রিয় নেতা দাবি করে খুনের ঘটনাটি সরকারি দল আওয়ামীলীগের কাঁধে চাপানোর চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কারনে গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) হরতাল চলাকালীন সময় বিএনপির দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় দু’নেতা ঢাকায় বসে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রেসব্রিফিং করে বলেন, হরতালের পক্ষে মিছিল করায় আওয়ামীলীগের ক্যাডাররা বরিশাল জেলা উত্তর ছাত্রদলের নেতা ও শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে । তাদের এ বক্তব্যের ধিক্কার জানিয়েছেন নিহত শিক্ষকের পরিবার, উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ গৌরনদীর সর্বস্তরের জনগন। এ হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২৩ সেপ্টেম্বর গৌরনদীতে অর্ধবেলা হরতালের আহবান করা হয়েছিলো । শিক্ষক খুনের ঘটনায় বিএনপির ডাকা হরতাল গৌরনদীবাসী স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে বর্জণ করেছে। ২৪ সেপ্টেম্বর নিহত শিক্ষকের স্মরনে স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে স্মরনসভারও আয়োজন করা হয়। বিএনপির নেতৃবৃন্দের অতিউৎসাহের কারনে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য ও স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এবং ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নিহত শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারের জানাজার নামাজের পূর্বে নিহতের বড়ভাই স্কুল শিক্ষক শাহজালাল জমাদ্দার তার বক্তব্যে বলেন, আমার ভাইয়ের লাশ নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। সে ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছে কিন্তু গত ৮ বছর ধরে সে কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলোনা। তার এ বক্তব্যে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়েছে ঢাকা থেকে জানাজায় শরিক হতে আসা বিএনপির দু’কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের। বিএনপি নেতাদের দাবি, নিহত স্কুল শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দার সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও চাঁদশী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক।

অপরদিকে শিক্ষক খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নয়ন শরীফকে। ঘটনারদিন (২২ সেপ্টেম্বর) পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শরীফ, তাদের এলাকার দু’জন জনপ্রতিনিধিসহ ওই এলাকার ৮/১০জন ব্যক্তি সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত গৌরনদী পৌরসভার মেয়র হারিছুর রহমান হারিছের দিয়াশুর মহল্লার বাসভবনে একটি জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন। মেয়র হারিছুর রহমান সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত তার বাসভবনে নয়ন শরীফের উপস্থিতিতে জরুরি সভার সত্যতাও স্বীকার করেছেন। সেখানে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্কুল শিক্ষকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা শুনে ছাত্রলীগ নেতা নয়নসহ অন্যান্যরা তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গৌরনদী থানার এস.আই শাহজালাল খলিফার সাথে ছাত্রলীগ নেতা নয়নের দেখা হলে তার (এস.আই’র) ব্যবহৃত মটরসাইকেলে উঠে নয়ন ঘটনাস্থলে যান। পৌর মেয়রের উপস্থিতিতে তার নিজ বাসভবনে জরুরি সভায় উপস্থিত থেকেও মামলা থেকে রেহাই পায়নি ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শরীফ।

মামলার বাদি শাহজালাল জমাদ্দার জানান, সম্প্রতি সময়ে বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা প্রাইমারি ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলার সময় ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শরীফের সাথে শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারের বাকবিতন্ডা হয়েছিলো। এ ঘটনার জেরধরে ছাত্রলীগ নেতা এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দার গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্কুলে যাওয়ার পথে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় । এ ঘটনায় ওইদিন রাতে নিহতের বড়ভাই স্কুল শিক্ষক শাহ জালাল জমাদ্দার বাদি হয়ে গৌরনদী থানায় ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শরীফ, কাজল হাওলাদারসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম জানান, মামলাটি নিখুঁত ভাবে তদন্তের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডের মূলরহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনো তা গোপন রাখা হয়েছে। খুনীরা যতো বড়ই দুর্ধর্ষ হোক না কেন আইনের হাত থেকে কেহই রক্ষা পাবেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অপরদিকে রাজনৈতিক ভাবে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করে প্রকৃত খুনীদের চিহ্নিত করতে পুলিশ প্রসাশনকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করার জন্য গৌরনদী বাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস। তিনি আরো বলেন, খুনী যেই হোক না কেন, বিচার তাকে পেতেই হবে। এ জন্য প্রয়োজন আগে প্রকৃত খুনীদের চিহ্নিত করা।