হিজলা-মুলাদীর নয়াভাঙ্গুলী নদীর ব্রীজের একি হাল

উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ জমি অধিগ্রহন জটিলতায় এপ্রোস সড়ক নির্মান না হওয়ায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়নি হিজলা-মুলাদীর নয়াভাঙ্গুলী নদীর ব্রীজ। এবিষয়ে এলজিইডি দুষছে জেলা প্রশাসনকে আর জেলা প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা।  বরিশালের হিজলা-মুলাদীর বাসিন্দাদের স্বপ্নের নয়াভাঙ্গুলী সেতু’র নির্মান কাজ এক মাস আগে সম্পন্ন হলেও যান ও জন চলাচলের বিষয়টি আটকে যায়। যে কারনে দীর্ঘদিন এ জনগুরুত্ম পূর্ন ব্রীজ টি  প্রায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে থাকলেও সেদিকে নজর নেই কতৃপক্ষের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে গত সেপ্টেম্বর মাসে সেতুর নির্মান কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সেতুর ঠিকাদার মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ খান বলেন সেতুর কাজ সমাপ্তের পর তা গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই স্থাণীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

হিজলা উপজেলা উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক নূরূল আলম রাজু বলেন, ঠিকাদার ব্রীজের কাজ সম্পন্ন করে তা হস্তান্তর করলেও তা জনগনের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়নি । তিনি বলেন, ব্রীজ নির্মান কাজ চলাকালীন সময়ে হিজলা অংশের এপ্রোজ সড়ক নির্মান কাজ সম্পন্ন হলেও মুলাদী অংশের সড়ক নির্মানে বাধ সাধে স্থানীয়রা । তারা জমির দাম না পেয়ে সড়ক নির্মান করতে বাধাদেয়। তবে এলজিইডির একটি সূত্র জানায়, তারা ঐ জমি অধিগ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসনের এলএ শাখাকে অনেক আগেই টাকা দেয়া হয়েছে। তারা কেন এবং কি কারনে এখনো জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেনা তা এলজিইডিকে অবগত করেনি বলে ঐ সূত্র দাবী করেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়,২০০২ সালে মাত্র ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় এ সেতুর কাজ পায় মেসার্স বেলাল ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ব্যাপক চাঁদাবাজীর কারণে ঐ ব্রীজের কাজ মাঝপথে থেমে যায়। ঠিকাদার কাজ নাকরেই তার মালামাল নিয়ে চলে যায়। পরে ওয়ান ইলেভেনের সময় এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী নতুন করে এর কাজ শুরুর উদ্যোগ নেন এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ খানকে কাজটি সম্পন্নের জন্য বলেন। ১ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৭শ’ টাকা লোকসান দিয়ে প্রথম অংশের কাজ সম্পন্ন করেন হারুন অর রশিদ। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নতুন করে দরপত্র আহবান করে। হারুন অর রশিদ খান রহমান ট্রেডার্সের নামে পুনরায় ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার দ্বিতীয় স্তরের কাজ পায়। এরপরে সে ২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রীজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে তা এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করেন । ৪২০ মিটার দীর্ঘ, সাড়ে ২৪ ফুট প্রস্থ, ফ্রি স্টেজ গার্ডার ৪২টি, পিলার স্পেম ১৪টি ব্রীজের নির্মাণ কাজের অংশ। প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ বলেন, যথা সময়ে ব্রীজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি।

এবিষয়ে আলাপকালে বরিশাল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান বলেন,ব্রীজের কাজ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তা আমরা ঠিকাদারের কাছথেকে বুঝে নিয়েছি । এখন এ প্রোজ সড়ক নির্মানে জটিলতা দেখা দেয়ায় জনগনের চলাচলের জন্য খুলেদেয়া যাচ্ছেনা । আশা করছি খুব শিগ্রই এ জটিলতার নিরসন হবে । এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম আরিফউর রহমান বলেন, জমি অধিগ্রহনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে । একটু সমস্যা ছিল কিছু লোক তাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সরাতে চায়নি । এখন তাদের সরে যেতে হবে কারন জমি অধিগ্রহন কাজ প্রায় চুড়ান্তের পথে । জমি অধিগ্রহন কাজ হলেই ঠিকাদার তার কাজ করতে পারবে।   

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, হিজলা ও মুলাদীর মানুষের স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্নের একমাস পরও তা যাতায়াতের জন্য খুলে না দেয়ায় হিজলা উপজেলার মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব হয়নি বরং এখন দূর্ভোগ বেড়েছে। তারা বলেন এটি খুলে দেয়া হলে জেলা শহর বরিশালে যাতায়াতে উন্নত সুবিধা পাবে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষ। তারা জেলা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।