তীব্র পানি সংকটে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার

মামুনুর রশীদ নোমানী, বরিশালঃ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর। দীর্ঘ দেড় বছররাধিককাল একমাত্র পাম্প মেশিনের মটর বিকল হয়ে পড়ে আছে। আনুমানিক দেড় হাজার হাজতি কয়েদির জন্য সাড়ে পাচঁ হাজার বর্গফুটের একটি পুকুর নিত্য দিনের ব্যবহার্য কাজে গোসলসহ সকলকে ব্যবহার করতে হচ্ছে যা অমানবিক এবং কষ্টকর। জেল খানার অভ্যন্তরে যে ৬ টি চাপকল বা টিউবঅয়েল আছে তার মধ্যে ব্যবহারের উপযোগী ৩টি বাকী ৩টির পানি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এমতবস্থায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে মানুষ নামের এ প্রানিদের জীবন চিত্র কতটাই অমানবিক এবং কষ্টের যা চোখে না দেখলে অনুধাবন করা যাবেনা। দেখে মনে হয় জেলের ভিতরে আরেক জীবনের বিপরীত দ্রোহ যা জেলের সংজ্ঞাকে আরো নতুন করে সংজ্ঞয়িত করেছে। বরিশাল জেলে বর্তমানে ১২০০ শত থেকে ১৫০০ শত হাজতি-কয়েদির বসবাস। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অব্যন্তরে কোন পানি সাপ¬াইয়ের ব্যবস্থা নেই। জেল খানার প্রতিষ্ঠা লঘেœ বসানো একমাত্র পানির পাম্পটি বিকল ও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অপরদিকে ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুন হাজতি ও কয়েদিদের জন্য একমাত্র পুকুর যেখানে সকলকে গোসল, কাপড় ধোয়া, বিপুল সংখক লোকের নিত্য দিনের রান্নাবানার কাজ সারতে হয়। তাও আবার সাইনবোর্ড লাগানো ‘পুকুরে সাবান ব্যবহার করা নিষেধ’। কাপড় ধোয়া এবং শরীরে সাবান দেওয়ার জন্য পুকুরের দক্ষি পাড়ে একটি চৌবাচ্চা থাকলেও তার ব্যবহার হয়না, সেখানে বালতি বা কোন পাত্রে পানি নিয়ে সাবান ব্যবহার করে ধোয়া এবং গোসলের কাজ সাড়তে হয়। আপরদিকে পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে আনুমানিক ৭ ফুট দৈর্ঘ একটি মাত্র বাধানো পাকা ঘটলা যা একই সময় দেড় হাজার মানুষকে ব্যবহার করতে। জেল খানার কঠোর নিয়ম নীতির মধ্যে সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত এবং বিকাল  ৩ টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই পুকুরের ঘটলা ব্যবহার করা যায়। এসময় এখানে মানুষের মিছিল দেখা গেছে। দেখে মনে হয় কোন তীর্থ যাত্রীরা পূণ্য স্নান করতে প্রতিযোগীতায় মরিয়া হয়ে উঠছে। এমন দৃশ্য চোখে না দেখলে বুঝানো সম্ভব নয়।আরপদিকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গ ফুটের এই পুকুরের পানি দেখে মনে হয় পানির প্রকৃত রুপ অনেক আগেই বিকৃত হয়ে নীলাভ সবুজাকৃতি ধারণ করে আছে। চর্ম চোখে অবলোকন করে কোন রুচিবান মানুষ এ পানি ব্যবহার করতে দারুন অসম্মতি প্রকাশ বা কোন ইচ্ছা না করলেও কোন উপায় যে নেই বন্দীদের। পানির অপর নাম জীবন আর এই পানি যদি হয় অপ্রতুল বা ব্যবহারের অনুপযোগী তাহলে তার চেয়ে কষ্টের বা দুর্ভোগের চিত্র অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা চলে না। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরের বসবাসকারী এই অসংখ্য বনিআদম যাদের দুর্ভোগের চিত্র বড্ড বিভীষিকাময়। এক মাত্র পুকুরের ব্যবহার অনুপযোগী পানি বাধ্য হয়ে ব্যবহার করে প্রায়ই হাজতি এবং কয়েদিদেরকে আক্রন্ত হতে হচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগে। খুজলি-পাচড়াসহ পানিবাহিত চর্মজাত অনেক রোগে আক্রান্ত জেল খানার বাসিন্দা বন্দীরা। বরিশাল জেল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে সহকারী জেলার মোঃ ফখরুদ্দিন বলেন, অফিসের পক্ষ থেকে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে পানির প্াম্প সমস্যসহ সাপ¬াই ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে এবং এর প্রতিকারে যথা সম্ভব দ্রুত পদক্ষে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধও করা হয়েছে। কিন্ত অদ্যবধি এর কোন সুরাহা না হওয়ায় এই পানি সমস্যা নিয়েই আমাদের জেলাখানার কয়েদি হাজতিদের বসবাস। স্থানীয়ভাবে বরাদ্ধ না থাকায় আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারছিনা। এদিকে চরম কষ্ট ও ভোগান্তির স্বীকার হাজতি ও কয়েদিরে আকুতি যাতে অতি দ্রুত পানি সমস্যার সমাধান হয় এবং তারা যাতে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পায় তার জন্য সকলের সদয় দৃষ্টি কামনা করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ’র আবেদন করেছে।