আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে -খালেদা জিয়া

খোন্দকার কাওছার হোসেন : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। তার আগেই এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহর নেতৃত্বে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ বেশকিছু সংখ্যক নেতার বিএনপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে এ যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল ও সদস্য যোগদানকৃত জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব এ বি এম খালিদ হাসান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।  

খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ ও জনগণের স্বার্থে কিছুই করেনি। তারা যা কিছু করেছে, সম্পূর্ণ দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে, নিজেদের স্বার্থে। কেবল আজীবন একটি পরিবারকে ক্ষমতায় রেখে দেয়ার জন্য এবং বংশানুক্রমিকভাবে ক্ষমতা ভোগ দখলের জন্য একের পর এক দেশের স্বার্থ বিরোধী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জাতীয়তাবাদী শক্তি নাম দিয়ে রাজনীতি করে ঘরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তাদেরকে আর সময় দেওয়া যায় না। দেশের জনগণই আর সময় দিতে চায় না। সকলকে এক জায়গায় এনে আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে।

২৭ সেপ্টেম্বর ঘোষিত কর্মসূচিতে সকলকে যোগদান করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ কমসূচি দেশকে রক্ষা করা ও স্বৈরাচারকে বিদায় করা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার কর্মসূচি। এ কর্মসূচির পরই শুরু হবে ফাইনাল খেলা, আপনারা প্রস্তুত হোন। এ খেলায় জিতবে বিএনপি। আর ঠকবে যারা দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, সরকার দলের যে নেতা যাই বলুক, কেয়ারটেকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, হবে না, হবে না। আগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। আগামিতেও হবে।

তিনি বলেন, আমার জীবনে পাওয়ার কিছু নেই। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। দেশের যেখান থেকেই নির্বাচন করেছি জনগণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এখন শুধু একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ দেখে যেতে চাই। নতুন প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে যেতে চাই। তারা যেন সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। দেশ স্বাধীনের পর ক্ষমতায় বসেই তারা সকল রাজনৈতিক দল, সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেছিলো। তারা লুটেরা, খুনি। তারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করে। আসলে তারা দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। এদের দিয়ে দেশের উন্নতি, মানুষের কল্যাণ গণতন্ত্র রক্ষা হবে না।

তিনি বলেন, সংসদ, বিরোধী দল, মন্ত্রিসভা, নিজের দলের নেতা কাউকে কিছু না বলে, একজন ব্যক্তি ও পরিবারের স্বার্থে বিদেশের সঙ্গে গোপন চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়।

খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার হয়েও তারা কিভাবে গোপনে চুক্তি করেছে। করিডোর হলে দেশের কি ক্ষতি সেটাও তারা জানে। কিন্তু তারপরও তারা করিডোর দিয়েছে।  মনে করেছে কিছু দিন পর দেশের মানুষ সব ভুলে যাবে।

তিনি বলেন, সারা দেশে এখন বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন হচ্ছে। কোথাও বিদ্যুতের জন্য, কোথাও গ্যাসের জন্য, কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কোথাও রাস্তাঘাটের দুরাবস্থার জন্য আন্দোলন হচ্ছে। আমাদের উচিত হবে সকলকে এক সঙ্গে করে আন্দোলন গড়ে তোলা।  

আবু নাসের রহমাতুল্লাহর বক্তৃতার জের ধরে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষ আর এক বছর সময় দিতে রাজি নয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। তার আগেই সরকারকে বিদায় করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ২৭ তারিখে পল্টনে জনসভা করতে চেয়েছিলাম সরকার করতে দেয়নি। জনসভাকেও ভয় পায় সেজন্য পোস্টার লাগাতে দেয়নি। মাইকিং করতে দেয়নি। বিভিন্ন যায়গায় বাস রেল থামিয়ে নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ মানুষদেরও আটকিয়ে রেখেছে। ঢাকা শহরে সারারাত অপারেশন চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। তারপরও দেখেছেন কি বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়েছে। তারা বুঝতে পারেনি জনসভাকে সফল করার জন্য মানুষের কত সদিচ্ছা ছিলো।  

তিনি বলেন, আগামি দিনের সকল আন্দোলনে শুধু বিএনপি নয় সবাই যোগ দিবে বলে আমরা আশা করবো। দেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই। সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এই কর্মসূচি। এখন মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। খবর কাগজ খুললেই দেখা যায় মানুষ আতঙ্কে আছে।

খালেদা জিয়া বলেন, জয়নুল ফারুক একজন এমপি তাকে কিভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। হরতালের দিন একজন পথচারীকে কিভাবে পুলিশে বুটের চাপায় পিষ্ট হতে হয়েছে। জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল ও একজন তারা রাজনীতি করে। তারা যদি কোনো অপরাধ করে তার শাস্তি হবে। কিন্তু তাদের ডান্ডাবেরি পড়িয়ে কোর্টে আনা হয়েছে। যারা এসব করছেন তারা কি ভুলে গেছেন এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে।

খালেদা জিয়া বলেন, একটি বিশেষ জেলার পুলিশরা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায়। এই বিশেষ জেলার পুলিশরা আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না। আমাদের কাছে সব রেকর্ড আছে। কেউ রক্ষা পাবেন না।
তিনি বলেন, তিন জন আইজি, একজন জেনারেল, একজন ব্রিগেডিয়ারকে জেলে রাখা হয়েছে। যারা এসব করছেন তারা ভুলে যাবেন না। সময় বেশি নাই। একদিন আপনাদেরও এই অবস্থা হতে পারে। মিথ্যা মামলা কিংবা সাজানো মামলা দিয়ে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।  তিনি বলেন, সাত হাজার মামলা উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। তাতেই সব শেষ হয়ে যাবে না। আপনারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।

তিনি বলেন, জীবনধারণ আজ কঠিন হয়ে পড়েছে। বেতন দিয়ে চলে না। বাড়ি ভাড়া, অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে হবে। গ্যাসের অভাবে শিল্প কারাখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে গ্যাস বিদ্যুত বন্ধ রাখা হচ্ছে। নতুন যেসকল পাওয়ার প্লান্ট করা হয়েছে সেগুলিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আর এই ঋণের বোঝা বহন করতে হবে সাধারণ জনগণকে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আবু নাসের রহমাতুল্লাহ সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পেরেছেন বিএনপি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে তুলে ধরে রেখেছেন।

তার এই যোগদান বিএনপির বড় একটি সাফল্য। আর সময় নেই। এই সরকার দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করে চলেছে। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করে তুলেছে। সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে পরনির্ভরশীল একটি দেশে পরিণত করে তুলেছে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপিতে শুধু যোগ হবে বিয়োগের সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগে বিয়োগের সময় এসেছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের পতন অবশ্যম্ভাবী।

সভাপতির বক্তৃতায় আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, কোনো শর্ত নাই দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি।
 
যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।