বরিশালে ঝুঁকিতে শতবর্ষের প্রাথমিক বিদ্যালয়

এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ প্রায় শতবর্ষ পূর্বে প্রতিষ্ঠিত নগরীর আখতারুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ধসে পড়ে  যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের একটি ডোবা মসজিদ ও ঈদগাহ গিলে খেয়ে বিশাল পুকুরে রূপ নিয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু স্কুলটিকে গিলে খাওয়া। পুকুরের এই রাক্ষুসে রূপ দেখে হতবাক স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা। পুকুর ভরাটের উদ্যোগ নিলেও মামলা জটিলতায় তা থমকে যায়। ফলে ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বিদ্যালয়ের এই দ্বিতল ভবনে উপস্থিত হতে হয়।

নগরীতে হাতে গোনা যে কয়টি শতবর্ষের স্কুল রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম।  ১৯৫২ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের ফুপু আখতারুন্নেছা বেগম তার ব্যক্তি মালিকানাধীন  জমিতে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময়ে বিদ্যালয়ের সন্মুখভাগে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষাসহ খেলাধুলার জন্য একটি মাঠও রাখা হয়েছিলো। ঐ মাঠের পাশেই ছিল একটি মসজিদ ও একটি ঈদগাহ।

আখতারুন্নেছা শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা নগরীর উত্তরাংশের শিশুদের শিক্ষার জন্য এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে টিনসেড ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলতো। শুরু থেকেই চরম অবহেলার শিকার এ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর  ১৯৮৭ সালে ভবন নির্মাণ করা হয়। তখন পর্যন্ত সেখানে কোন পুকুর ছিল না। মাঠের অদূরে মসজিদ সংলগ্ন ছোট একটি কূপ ছিল।

দ্রুত নগরায়নের ফলে আশেপাশে বাসা-বাড়ি তৈরি করতে ঐ ডোবা থেকে কেটে নেয়া হয় মাটি। সরকারি জমি থেকে প্রভাবশালীদের মাটি কাটার প্রতিযোগিতায় ডোবাটি এক পর্যায়ে পুকুরে পরিণত হয়। প্রতিবছর বর্ষায় পুরো এলাকার পানি এসে জমে এই পুকুরে। তখন দীঘির রূপ পেরিয়ে পুকুরটি রূপ নেয় ছোট খাটো নদীতে।

পানির চাপে ভাঙ্গতে থাকে পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ ও মসজিদ। এ সব  কিছুর এখন চিহ্ন পর্যন্ত নেই। পুকুর এখন স্কুলের মূল ভবনটি গ্রাস করার অপেক্ষায় রয়েছে। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয়রা আশংকা করছেন যে কোন সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই  ভবনের নিচের অংশ ধসে গেছে। বিভিন্ন অংশে বৃহতৎ আকারে ফাটল ধরেছে।

গত বছর এ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাসের সফলতা অর্জন করে। এ স্কুলে ভাটিখানা এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশত কোমলমতি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ তো দূরের কথা পুকুর ছাড়া আর কিছুই নেই। নেই কোন টিওবয়েল। পানির উপর প্রায় ভাসমান অবস্থায় থাকা এ বিদ্যালয়ের শিশুরা বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহায়।  স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামিমা আক্তার জানান, ক্লাস রুমে শুধু ভাল পাঠদান আর পরীক্ষায় ভাল ফলাফলই শিশু শিক্ষার জন্য যথেষ্ঠ নয়।  শিশুদের বেড়ে উঠার জন্য শারীরিক ও মানসিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাসহায়ক যেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা  দরকার তা শতবর্ষের পুরনো এই স্কুলে নেই। তিনি জানান, তিন বছর পূর্বে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এ পুকুর ভরাটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। প্রতিবেশী এক ব্যক্তি জমির  মালিকানা দাবি করে  আদালতে মামলা দায়ের করেন। সেই থেকে এ পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারছে না বলে প্রধান শিক্ষক জানান।

স্কুলের প্রবীণ শিক্ষিক নারগিস সুলতানা জানান, তিনি এ স্কুলে ১৯৯০ সালে যোগদান করেন। তখন স্কুলের সন্মুখভাগে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য একটি মাঠ ছিলো। মাঠের পার্শ্বেই ছিলো মসজিদের ঈদগাহ ও একটি কূপ। সেই কূপ ক্রমে ক্রমে খনন করে বড় করা হয়, এতে ঈদগাহ ও খেলার মাঠ জুড়ে এখন বিশাল পুকুর হয়ে গেছে।

স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা ডালিয়া পারভিন জানান, স্কুলের সামনে পুকুর থাকায় ক্লাস বাদ দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের  রক্ষায় শিক্ষকদের পালা করে পাহাড়া দিতে হয়। যাতে কোন শিশু পুকুরে ডুবে মারা না যায়।