যাদুকরী ভেষজ উদ্ভিদ ঘৃত কুমারী

মোঃ আহছান উল্লাহ, গৌরনদী ॥ প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীতে রোগ-বালাই নিরাময়ে ও দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাছ-গাছালির ব্যবহার সর্বজনবিদিত। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস এবং কালের বিবর্তনে মানুষ এসব উপকারি ভেষজ উদ্ভিদের নাম ও ঔষধি গুনের কথা ভুলে যাচ্ছে। এক সময় আমাদের দেশের বন-জঙ্গলে অযতœ অবহেলায় যে উদ্ভিদটি জন্মাতো আজ তা আধুনিক বিশ্বে শিল্প ও গবেষনায় স্থান পেয়েছে। ঘৃতকুমারী নামের এ ভেষজ উদ্ভিদটি হচ্ছে আধুনিক সৌন্দর্য বিশারদদের আদরনীয় উপাদান এ্যালোভেরা। আমাদের দেশে প্রায় সারে তিন হাজার টন  ঘৃত কুমারীর চাহিদা রয়েছে। পরিকল্পিত চাষের মাধ্যমে আমরা এর চাহিদা মিটিয়েও বিদেষে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি।আমাদের দেশের আবহাওয়ায় চাষপোযোগী ঘৃত কুমারীর সাশ দিয়ে মুসাব্বার তৈরী হয় যার চাহিদা রয়েছে উন্নত বিশ্বসহ সারা বিশ্বে।

জাপান,থাইল্যান্ড,ফিনল্যান্ড,যুক্তরাস্ট্রসহ পৃথিবীর বহু দেশ এ উদ্ভিদকে পরিনত করেছে রপ্তানি পন্যে অথচ আমাদের দেশে এর অপার সম্ভাবনা থাকা সত্যেও এ ব্যাপারে সরকারের নিতীনির্ধারকদের কোন মাতা ব্যাথা নেই । পরিত্যাক্ত জমিতে ঘৃতকুমারীর বানিজ্যিক চাষ করে ছোট ছোট শিল্প গড়ে তোলে এ শিল্পে লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান করা সম্ভব বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছেন।

মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও রোগ নিরাময়ে ঘৃতকুমারীর পাতার রয়েছে এক আশ্চার্য গুন আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে শিল্পের কাঁচা মাল হিসেবে ঘৃতকুমারীর ব্যাপক ভ্যবহার এখন প্রসাধন শিল্পে। উন্নত দেশ গুলোতে ঘৃকুমারীর আবাদ ও এর ব্যবহার দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। রপ্তানি পন্যের তালিকায় ঘৃতকুমারীর একটি উলে¬্যখযোগ্য স্থান দখলে সক্ষম হতে পেরেছে। সংরক্ষন ও প্রক্রিয়াজাতকরনের মাধ্যমে এই উদ্ভিদ তেকে প্রাপ্ত উপাদান বিভিন্ন দেশ রপ্তানি করছে পাশাপাশি পরিকল্পিত চাষাবাদের মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের ব্যাবস্তা হচ্ছে। আমাদের দেশে অতি সহজেই এর আবাধ সম্ভব হলেও আজও আমাদের দেমে এর কোন পরিকল্পিত আবাদ হচ্ছেনা। আধূনিক ও পরিকল্পিতভাবে ঘৃতকুমারীর আবাদ ও সংরক্ষন.প্রক্রিয়াজাতকরন সম্পর্কে বেকার যুবকদের এর প্রশিক্ষন দিয়ে  গ্রামভিত্তিক খামার তৈরি করা হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে তেমনি সৃস্টি হবে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান। ঘৃতকুমারীর চাষ হতে পারে লাভজনক  কৃষিপন্য ও শিল্প উপাদান। আমাদের দেশে প্রায় সারে তিন হাজার  টন ঘৃতকুমারীর উপাদান ব্যাবহৃত হচ্ছে বিবিন্ন শিল্পে। সাবান লোশন,ক্রিম,শ্যাম্পু,হেযারডাইসহ অধিকাংশ প্রসাধন সামগ্রী তৈরির অন্যতম উপাদান হচ্ছে ঘৃতকুমারী। এ ছাড়াও আধুনিক চিকিৎসায় ইউনানী,আয়ুর্বেদিক.লোকজ ও হেমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঘৃতকুমারীর ব্যাপক ব্যাবহার হচ্ছে।ঘৃতকুমারীর রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে এনথ্রাকুইনোন, গ¬াইকোসাইড,অ্যালোইন, এমোডিন, ক্রাইসোফ্যানিক এসিড, এলোইমোডিন, ইউরোনিক এসিড ও বিভিন্ন্ এানজাইম। এছাড়াও ঘৃতকুমারীতে রয়েছে রেজিন, স্টেরলট্রাইটরপেনস, কুডমারিনস, স্যাপোনিনস, কার্বোহাইড্রেটডস, এমিনোএসিড ও বিটামিন যা ওষুধ প্রস্তুতে মুল্যবান উপাদান। ঘৃতকুমারীর ইংরেজী নাম এ্যালোভেরা নামে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। এর কাজ হচ্ছে ত্বকের লাবন্যতা রক্ষা করা ও চুলের পুষ্টি যোগান দেওয়া। এছাড়া গরমে প্রশান্তি দেয়া, প্ল¬ীহা, যকৃত,  কৃমি, বাত সহ  বহু রোগ ও ক্ষুধামন্দা,  বদহজম  এবং বারতি মেদ দুর করতে এর তুলনা নেই। ঘৃতকুমারী থেকে তৈরী অ্যালোমিল্ক স্লীম হওয়ার এক মহৌষধ। ওষুধি গুনাগুন ছাড়াও ঘৃতকুমারী এখন ড্রইংরুমের  সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।  এ উদ্ভিদের নিঃসৃত অক্সিজেনের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি  আর তাই ড্রইংরুমের পরিবেশ করে নির্মল। ঘৃতকুমারী বিভিন্ন নামে আমাদের দেশে পরিচিত যেমন আয়ুর্বেদীক নাম ঘৃত কাঞ্চন, তরুনীলতা। ইউনানী নাম ঘিকোয়ার,  সুবারা। অভিজ্ঞদের মতে ঘৃত কুমারীর  গুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা তবে এর পরিকল্পিত আবাদ গরে তুলতে পারলে আমারা লাভবান হবো।

আর্ন্তজাতিক ভেষজ বিশেষজ্ঞ ভারতের প্রক্ষাত ভেষজবিদ জি এম চৌধুরী বলেন ঘৃতকুমারীর গুনাগুন সম্পর্কে বেশী বলার দরকার নেই একথায় বলা যায় যে সর্বরোগের মহাষৌধ ঘৃতকুমারী এটা শরীরের ভীতরে যেমন কাজ করে তেমনী শরীরের উপরে ও ত্বক লাবন্যের রুপচর্জায় বিশেষ কাজ করে। এছাড়াও ঘৃত কমারি দিয়ে তৈরী করা যায় পোল্ট্রী খাবার মাছ চাষেও ঘৃতকুমারি পরিকল্পিতভাবে ব্যাবহার করা যায় । অভিজ্ঞদের মতে বাংলার ভেষজ সম্পদকে কৃষির উপখাত হিশেবে দেখা দরকার এবং সেভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাজ করা উচিত কেননা বাংলাদেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা এর যথায়থ ব্যাবহার প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে যেমন দেশের বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব তেমনী বৈদেশিক মূদ্রাও আয় করা সম্ভব। এক কথায় বলা যায় বাংলাদেশের পরিত্যাক্ত লতা পাতা আর আবর্জনা হতে পারে দেশের শোনা।