গৌরনদীতে নবীন-প্রবীনদের মিলন মেলা

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ “নবীন শিক্ষার্থীদের বরন করে নেয়ার জন্য এই সর্বপ্রথম এমন একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সত্যি আজ কেন যেন আবার কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছে করছে। আমাদের সময় নবীনবরন উপলক্ষে সর্বোচ্চ একটি রজনীগন্ধা ফুলের ষ্টিক ধরিয়ে দেয়া হতো। এরপর এই কলেজসহ অন্যান্য কলেজের অনেক অনুষ্ঠান দেখেছি। কিন্তু নবীনবরন উপলক্ষে এরকম জমকালো অনুষ্ঠান আর কোথাও দেখিনি। এখানে সব কিছুতেই ব্যতিক্রমের ছাঁপ। আয়োজকদের ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই”। কথাগুলো বলছিলেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমান জাতীয় সংসদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি। একথাশুধু তার একারই নয় একইভাবে বললেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শাহ আলম খান, ভাইসচেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরীসহ অনেকেই।

শত কর্মব্যস্ততার মাঝে দীর্ঘদিন পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের পুরনো সহপাঠীদের কাছে পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পরেছেন। একে অপরকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছেন তাদের কলেজ জীবনের স্মরনীয় কিছু স্মৃতি ও স্থানের কথা। এ যেন পুরো কলেজ প্রাঙ্গন জুড়ে বসেছে নবীন-প্রবীনদের মিলন মেলা। এমনই একটি আনন্দ ঘন মুহুর্তের অবতারনা ঘটেছিলো গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পর্যন্ত। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নিরব স্বাক্ষী ঐতিহ্যবাহি সরকারি গৌরনদী কলেজের নবীন বরন উপলক্ষে নবীন-প্রবীনদের (নতুন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের) সমন্ময়ে আয়োজন করা হয়েছিলো একটি জমকালো অনুষ্ঠানের।

১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালো রাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনয়িাবাতের স্মরনে কলেজ মাঠে নবনির্মিত “শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত মঞ্চ”-এর উদ্বোধন করা হয় ওইদিন সকাল দশটায়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে শুরু হয় নবীন ও প্রবীনদের নিয়ে আলোচনা সভা।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমান জাতীয় সংসদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শাহ আলম খান, গৌরনদী পৌরসভার মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ, গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম। বক্তব্য রাখেন কলেজের উপাধ্যক্ষ ও আয়োজক কমিটির আহবায়ক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সুমন সেরনিয়াবাত, গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মাহবুব আলম, আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভূঁইয়া, সহসভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান দ্বিপ, নবীন শিক্ষার্থী সৈয়দা শ্রাবনী আক্তার, মোঃ রাসেল আহম্মেদ প্রমুখ।

শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশপাশি কন্ঠের যাদুতে উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন দেশের ঝড়তোলা যাদুকরী কন্ঠ শিল্পী কাজী শুভ ও ক্ষুদে গানরাজ পড়শি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সনে যুদ্ধচলাকালীন সময় পাক সেনারা সরকারি গৌরনদী কলেজে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে এতদাঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনা করে। কলেজের ক্যাম্পে বসে পাক সেনারা চালায় জুলুম, অত্যাচার ও পাশ্ববিক নির্যাতন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হলেও এখানে বসবাসরত পাকসেনাদের সাথে স্থানীয় মুক্তিবাহিনী, মুজিব বাহিনী ও হেমায়েত বাহিনীর সদস্যদের দীর্ঘদিন যুদ্ধ শেষে ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর পাকসেনারা আত্মসমর্পন করেছিলো। সরকারি গৌরনদী কলেজের এ যুদ্ধই ছিলো দেশের মধ্যে শেষ যুদ্ধ। যে কারনে স্বাধীন দেশের সর্বশেষ বিজয় পতাকা উড়েছিলো গৌরনদীতে।