শেবাচিমের সেবা বিভাগে বছরে ২৫ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

শাহীন হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শেবাচিমে চিকিৎসাসেবার মাত্র ৬ টি বিভাগে সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে বছরে প্রায় ২৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা সরাসরি রোগীর পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়। নেপথ্যে রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমএলএসএস রা। প্রতিষ্ঠানটির অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬০ শতাংশ চিকিৎসাসেবা ফি পরিশোধ করতে হয় রোগীদেরকে। জরুরী বিভাগের ভর্তি ফি থেকে শুরু হয়ে, ট্রলিম্যান, লিফটম্যান, ওয়ার্ডে সিট বাণিজ্য, প্যাথলজি এবং এক্সরে বিভাগসহ রোগীদের পকেট থেকে বিভিন্নভাবে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন থেকে চলমান এ অর্থনৈতিক দুনীর্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ রোগীরা। কিন্তু নেই কোন পরিবর্তন কিংবা প্রশাসনিক কোন ফলপ্রসু পদক্ষেপ। ভর্তি রেজিস্টার সূত্রে, প্রতিদিন গড়ে ২শ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়। সেই হিসেবে, জরুরী বিভাগে সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফি’র বাইরে কতিপয় ব্রাদারদের উপরি কামাইর বাণিজ্য বেশ রমরমা। সরাসরি রোগীদের পকেট থেকে দৈনিক ৩ হাজার, মাসে ৯০ হাজার এবং বছরে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ভর্তি টিকেট ছোট ১০ টাকা, রোগী কল্যান সমিতির ১ টাকা এবং বড় টিকেট ১৫ টাকাসহ মোট ২৬ টাকা। দৈনিক ২ শ রোগীর প্রায় ৬০ জন রোগী বিভিন্ন পরিচিতি, অজ্ঞাত, দুস্থ: মিলিয়ে ফ্রি ১০ জন এবং আরো ৩০ জন রোগী শহুরে ও সচেতন হওয়াতে নির্ধারিত ফি রাখতে বাধ্য হয়। কিন্তু বাকী ১ শ জন রোগী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হওয়াতে তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি ২৬ টাকা র পরিবর্তে ৩০ থেকে ৫০ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। ট্রলিম্যানরাও বেশ বেপরোয়া উপড়ি ইনকামে। ভর্তিকৃতদের মধ্যে ১ শ ২০ জন রোগী নিজ নিজ স্বজনরদের সহযোগীতায় হেটে, আড় কোলে চড়ে, বাকী ৮০শ জন রোগীকে বাধ্য হয়ে ট্রলিতেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও কেবিনে যেতে হয়। এসুযোগে ওয়ার্ডে পৌছামাত্রই ট্রলিম্যানরা জন প্রতি রোগীর কাছ থেকে ২০/৩০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে ৮০ জনের কাছ থেকে দৈনিক ১ হাজার ৬ শ, মাসে ৪৮ হাজার এবং বছরে ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় উক্ত ট্রলিম্যানরা। সবসময় ৩/৪টি ট্রলি জরুরী বিভাগ থেকে রোগী নিয়ে ওর্য়াডগুলোতে যাওয়া আসা করে। এ পথে থেমে নেই লিফটম্যানরাও। প্রতিদিন লিফট অপারেটররা রোগী ও ভিজিটরদের কাছ থেকে ২ শ ৫০ টাকা, মাসে ৭ হাজার ৫শ এবং বছরে ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতিষ্ঠানটির অফিস সূত্রে জানা যায়, দৈনিক প্রায় রোগী ও ভিজিটর মিলিয়ে ৮শ জন বিভিন্ন কেবিন এবং ওয়ার্ডে যায়। ১০ টি লিফট  থাকলেও দিনে রাতে চালূ থাকা ৫/৭ টা লিফটে প্রায় ৪ শ ভিজিটর এবং রোগী উঠা-নামা করে। সরেজমিন সূত্রে আরো দেখা যায়, এদের মধ্যে ২ শ জনের মতো শহুরে ও স্থানীয় হওয়াতে লিফটম্যানরা টাকা নিতে সাহস করেনা। আরো ১ শ জন বিভিন্ন পরিচিতিতে, ১৫ জন গরীব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হওয়াতে লিফটে টাকা না দিয়ে উঠা-নামা করে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় ৫০ জন টাকা না দিয়ে রেহাই পায়। কিন্তু বাকী ৫০ শ জনকে অবশ্যই লিফট অপারেটরদেরকে জন প্রতি ৫ টাকা করে দিতে হয়। টাকা দিতে না চাইলে নামিয়েও দেয়া হয়। শেবাচিম হাসপাতালের প্যাথলজি এবং এক্স-রে বিভাগে কর্মচারীদের রির্পোট বাণিজ্যর উপরি কামাই চলছে হরদম। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ২ শ, মাসে ৩ হাজার ৬ শ এবং বছরে প্রায় ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি রেজিষ্ট্রার সূত্রে দৈনিক গড়ে ২শ রোগী ভর্তি হয়। সরেজমিন পর্যবেক্ষণে, ৪০ জন রোগী কোন প্রকার টেস্ট বা এক্সরে ছাড়াই সুস্থ্য হয়ে ওঠে। আরো ৬০ জনকে বাহিরের ক্লিনিকে যেতে হয় ডাক্তারদের নির্দেশে এবং হাসপাতালের নিম্নমানের জন্য। কিন্তু প্রায় ৯০ জন রোগীকে বিভিন্নধরণের টেষ্ট করাতে রক্ত পরিসঞ্চালন এবং এক্সরে বিভাগে যেতে হয়। এরমধ্যে ৪০ জন রোগী শহুরে, সচেতন এবং বিভিন্ন পরিচিতিতে নির্ধারিত ফি দিয়েই টেষ্ট করাতে সক্ষম হয় এবং ১০ জন দুস্থ্য ও গরীব রোগী থাকায় ফ্রি করতে হয়।  কিন্তু ঝোপ বুঝে কোপ মারার পদ্ধতিতে তারা অন্তত গড়ে ৪০ জন রোগীর কাছ থেকে প্রায় প্রতি টেষ্টে এবং এক্সরেতে ৩০/৫০ টাকা বেশি নেয় সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে। এদিকে শেবাচিম হাসপাতালে বেড বাণিজ্য আরো বেপরোয়া। প্রতিদিন প্রায় ২০ জন রোগীর কাছ থেকে ৮ শ টাকা, মাসে ২৪ হাজার এবং বছরে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বেড বাণিজ্যের করে সরাসরি রোগীদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কন্টাক্ট সার্ভিসের আয়া-বুয়া, ওয়ার্ড বয় এবং অণ্যান্যরা। রোগী নিয়ে ওয়ার্ডগুলোতে যাওয়া মাত্র রোগী ও স্বজনদেরকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ঐ আয়া-বুয়ারা বলে ৪০/৫০ টাকা দিলে বেড পাবেন। ভর্তি রেজিস্টারসূত্রে, ভর্তিকৃত গড়ে ২শ জন রোগীর মধ্যে মাত্র ৫০ জন কেবিনে ১ শ জন নিয়মমতো বেড পায়। ৩০ জন রাজনৈতিক এবং পেশাগত ও আত্মীয়তার পরিচয়ে বেড বাগিয়ে নেয়। বাকি ২০ জন রোগীকে প্রতিদিন আয়া-বুয়াদের ঘুষ দিয়ে সরকারি বেড কিনে তবেই হাসপাতালে থাকতে হয়।