দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবছর ধুমপানের কারনে ৫ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে

উম্মে রুম্মান,  বরিশাল ॥ শুধুমাত্র ধুমপানের কারনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণাঞ্চলেই প্রতি বছর ৫ হাজারেরও অধিক মানুষ মারা যান। আর এ অঞ্চলে Do not smoleবর্তমানে ধুমপায়ীয়ের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের মধ্যে ৩৫ লাখ মানুষ কোন না কোন রোগে আক্রান্ত। রবিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে তামাক বিক্রির জন্য বাংলাদেশ সরকার যে রাজস্ব পেয়ে থাকে তার দ্বিগুন অর্থ খরচ হয় ধুমপানের কারনে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতির নির্দেশক্রমে প্রথমেই চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের ফলে ৫৭ হাজার মানুষ হৃদরোগ, ক্যান্সার, বক্ষব্যাধি এবং অনেক অপ্রতিরোধযোগ্য রোগে মারা যায়। সে সূত্রে শুধু মাত্র ধুমপানের কারনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণাঞ্চলেই প্রতি বছর ৫ হাজারেরও অধিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে ধুমপায়ীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটিরও অধিক। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগে রয়েছেন ৫০ লক্ষ মানুষ। তাদের মধ্যে ৩৫ লাখ মানুষ কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ধুমপান করার কারনে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৪৩ ভাগ মানুষই তামাক ব্যবহার করে থাকেন। তবে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরের সংখ্যাও কম নয়। তামাক ব্যবহারকারীরা যে পরিমানে ক্ষতির শিকার হন ঠিক একই পরিমানের ক্ষতি হয় ব্যবহারকারীর পাশে অবস্থানকারীদের। তাই বাংলাদেশের তামাক ব্যবহার না করেও ৩০ ভাগ নারীর গর্ভস্থল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরমধ্যে বিভিন্ন কারখানাতে বিড়ি প্রস্তুতকারীরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এখনকার শ্রমিকরাও তাদের ন্যয্যমূল্য বা ঝুঁকি ভাতা পান না। একই সাথে বিড়ি ফ্যাক্টরীর আশেপাশের বাড়ি ঘরের বাসিন্দারাও এর ক্ষতির ভাগ নেয়। পাশাপাশি তামাক চাষের কারনে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। যদি কোন ব্যক্তি একবছর ধরে ধুমপান করেন তার ফুসফুসে আলকাতার মতো কালো পদার্থ হয়ে যাবে। তাই নিশ্চিত মৃত্যু বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত।

এদিকে তামাক বিক্রির জন্য বাংলাদেশ সরকার যে রাজস্ব পেয়ে থাকে তার দ্বিগুন অর্থ খরচ হয় ধুমপানের কারনে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য। তাই পূর্ব থেকেই তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকার যে আইন পাশ করেছিলো তার কার্যকর একেবারেই নেই বললেই চলে। তাই দিনে দিনে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধিই পাচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৬ সনের পর থেকেই তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গুলোতেই সবচেয়ে বেশী তামাকের ব্যবহার হয়ে তাকে বলে ওই সূত্রটির এক জরিপে দেখা গেছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতির নিদেশক্রমে প্রথমেই চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। পেশাজীবি সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন ও এসোসিয়েশ অব ফিজিশিয়ান অব বাংলাদেশ। এ ফোরামের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের তামাক  হ্রাসের জন্য চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে একটি সম্বন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ও যা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন উদ্যোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ নবেম্বর বরিশাল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও শেবাচিম হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ মুহাম্মদ কামরুল হাসান সেলিমের সার্বিক সহযোগীতায় ইউনাইটেড ফোরম এ্যাগেইস্ট টোবাকোর উদ্যোগে বরিশালের চিকিৎসকদের নিয়ে “তামাক মুক্ত বিশ্বের জন্য চিকিৎসকদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস” শীর্ষক এক সচেতনা মুলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এ সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ আব্দুর রশীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেবাচিম হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ অনিল চন্দ্র দত্ত, বরিশাল বিএমএ-র সভাপতি ডাঃ ইসতিয়াক হোসেন, সিভিল সার্জন ডাঃ এটি.এম মিজানুর রহমান।

শেবাচিমের অধ্যক্ষ ডাঃ মাকসুমুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারের তামাক ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরেন ফোরামের অর্গানাইজেশন সম্পাদক ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী, ডাঃ মাহফুজুর রহমান ও ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন, ডাঃ ভাস্কর সাহা, ডাঃ রনজিৎ খান, ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান, ডাঃ এইচ.এন সরকার, ডাঃ অসীম কুমার সাহা প্রমুখ।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, যথাযথ ভাবে সরকারের আইন প্রয়োগ করা, তামাক জাত পণ্যের প্যাকেটের গায়ে ছবি সম্মিলিত সতর্কবানী সংযুক্ত করা, আইন লংঘনে জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করা, তামাকজাত পণ্যের জন্য রাজস্ব হার বৃদ্ধি করা ও সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ধুমপান মুক্ত ঘোষনা করাসহ তামাকের ব্যবহারের ফলে সর্বনাশের কথা তুলে ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পুস্তকগুলোতে অন্তভূক্ত করতে হবে।