আগৈলঝাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১০জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥  আগৈলঝাড়ায় স্কুলের শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্কৃল সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির অপর এক সদস্য নিয়োগে অনৈতিকতার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত ১৫দিনের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব চেয়ে সমন জারি করেছে। মামলার এজাহারসূত্রে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী হাইস্কুলে ৬টি শূন্য পদের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ২৬ অক্টোবর ওই স্কুলে নিয়োগ বোর্ড প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে। নিয়োগ বোর্ড ইংরেজী ও খ্রিস্টধর্ম বিষয়ে কোরাম না হওয়ায় অপর ৪টি পদের বিপরীতে নিয়োগ ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ২৭ অক্টোবর ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ১১ সদস্যর মধ্যে ৮জন সদস্য ওই ৪টি পদের মধ্যে শারিরীক শিক্ষা বাদে অন্য পদে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ পুনরায় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহ্বানের জন্য স্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাসের কাছে আবেদন করেন।

নিয়োগ বোর্ড মনোনীত সমাজবিজ্ঞান, গণিত ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদের প্রার্থীদের বিরোধিতা করে তাদের আবেদনের পরেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই সকল পদে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে প্রধানশিক্ষককে চাপের মুখে নিয়োগপত্র প্রদান করেছেন। তাদের মনোনীত অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের বিরোধিতা করে ম্যানেজিং কমিটির অপর সদস্য পরেশ চন্দ্র রায় অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা এবং শুনানীঅন্তে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করেন। বরিশাল সহকারী জেলা জজ আদালতে স্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রীসহ ১০জনকে বিবাদী করে ১৬ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং-৭৪/২০১১। বিজ্ঞ আদালত ১৫দিনের মধ্যে বিবাদীদের প্রতি কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার খবর শুনে তড়িঘড়ি করে ১৬ নভেম্বর বিকেলেই ওই বিতর্কিত নিয়োগবোর্ড প্রার্থীদের ফোন করে ডেকে এনে নিয়োগপত্র প্রদান করেছেন এবং ১৭ নভেম্বর সকালে তারা আদালতের সমন জারি সত্বেও কর্মস্থলে যোগদান করিয়েছেন। এব্যাপারে মামলায় অভিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার প্রশাসনিক প্রভাব দেখিয়ে বিষয়টি আদালতের আওতাধীন বলে কোন রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এযাবৎ বিভিন্ন নিয়োগে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি গোপালগঞ্জের এবং শেখ সেলিমের ঘনিষ্ট লোক হবার সুবাদে অনেক সময় সাবেক চিফহুইপ মহোদয়ের টেলিফোনকেও অবজ্ঞা করে থাকেন। যার প্রমাণ গত এপ্রিল মাসে উক্ত স্কুলে শারিরীক শিক্ষা পদে জনৈক গোপাল ওরফে তপন সমদ্দারের জন্য সাবেক চিফহুইপ মহোদয়ের স্ত্রী মিসেস শাহানারা আবদুল্লাহ্ টেলিফোন করলেও তিনি তার মর্যাদা দেননি। ওই সময়কার (এপ্রিল-২০১১) নিয়োগে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী থাকলেও শিক্ষক নিবন্ধনের কোন কাগজ ছাড়াই তার আত্মীয় গৌরনদীর একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষকের স্ত্রীকে গৌরনদীর ব্যবসায়ী ভোলানাথ পোদ্দারের মারফত আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে তাকে নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়া তিনি আগৈলঝাড়া এসএম গার্লস স্কুলের এসএমসি সভাপতি এবং মোহনকাঠি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতির পদ আঁকড়ে এসমস্ত স্কুলে নিজ জেলার লোকদের আগৈলঝাড়ায় প্রতিষ্ঠিত করার মিশন নিয়ে কাছ থেকে জনপ্রতি কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা করে উৎকোচ নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। সম্প্রতি আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী হাইস্কুলে ৪টি পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভাল ফল করা সত্বেও নিয়োগবোর্ডের সদন্য বরিশাল জেলা গার্লস স্কুলের প্রতিনিধিদের প্রভাবিত করে তার আজ্ঞাবহ এবং উৎকোচ প্রদানকারীদের যাদের মধ্যে তার নিজ জেলা ও আত্মীয়দের নিয়োগ প্রদান করেছেন।

এব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা তার ভয়ে রেজুলেশনের সাদাকাগজে আগাম স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন। তারা সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে সাংবাদিক এবং ওই স্কুলের পার্টটাইম স্টাফ অপূর্ব লাল সরকারের জন্য জোর সুপারিশসহ ওই পদটি দাবি করলেও তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে ঢাকা ইসলামী ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত ২লক্ষাধিক টাকার চেক নিয়ে  তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে এই নিয়োগের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির অপর এক সদস্য পরেশ চন্দ্র রায় আদালতে নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য আবেদন করেছেন। বরিশাল জেলা বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে স্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রীসহ ১০জনকে বিবাদী করে ১৬ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, তিনি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং শেখ সেলিমের ঘনিষ্ট লোক হবার সুবাদে তার সাথে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দূরত্ব থাকার কারণে সাবেক চিফহুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্কেও তাচ্ছিল্য করে থাকেন। তবে এব্যাপারে তাকে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি পরোক্ষভাবে মদদ দেন বলে জানা গেছে। একারণে তিনি একের পর এক অনিয়ম চালিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন।

একটিসূত্রে জানা গেছে, অতি সম্প্রতি তার অন্যত্র বদলীর অর্ডার এসেছে। বদলীর আগে আগৈলঝাড়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মেরুদন্ড ভেঙে আর্থিক লাভবান হয়ে চলে যাবেন। তিনি এসি (ল্যান্ড)-এর দায়িত্ব পালন করায় ভূমি অফিসকে পরিণত করেছেন দুর্ণীতির আঁখড়া হিসেবে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, তিনি এর আগে ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় দায়িত্ব পালন কালীন এরকম দুর্নীতির কারণে সেখান থেকে জনরোষের মুখে পালিয়ে এসেছিলেন।