টেন্ডারবাজদের দখলে বরিশালের সব দপ্তর – অসহায় সাধারন ঠিকাদাররা

আজকের বরিশাল ডটকম ॥  ওদের দখলেই দপ্তরগুলো। ওরা প্রত্যেকেই টেন্ডারবাজ হিসেবে পরিচিত। রাজনীতির সাইনবোর্ড ব্যাবহার করে কাজ বাগিয়ে নেয়াই ওদের পেশা। বরিশালের প্রতিটি সেক্টর গুছ পার্টির দখলে। সকল সেক্টরেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-পাতির কব্জায়। বিশেষ করে ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে থাকা আ’লীগের শীর্ষ দুই নেতার নেপথ্যে’র অঙ্গুলী হেলনেই চলছে এহেন নৈরাজ্য। পুরোপুরী জিম্মী দশায় প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তারা। কেউ দাপ্তরিক নিয়ম কানুন মেনে চলার চেষ্টা করলে তার আর রক্ষা নেই। ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের লাঞ্চিত কিংবা মারধররের বেশ কয়েক টি অপ্রতিকর ঘটনায়ও ঘটেছে।

এখানকার আ’লীগের বিগ বস দু’ নেতার আর্শিবাদপুষ্টরাই সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রন করে চলছে। গড়ে উঠা এই গুছ পার্টির সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। নগরভবন,এলজিইডি,সিএমএমইউ,স্বাস্থ্য ও কৃষি বিভাগ,ফ্যাসিলিটি বিভাগ, সড়ক ও জনপদ,বিদ্যুত বিভাগ,গণপূর্ত,জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও মৎস অধিদতপ্তর বর্তমানেও গুছ পার্টির দখলে।

আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসীনের পর প্রথম দিকে গ্র“পিং ভাবে কাজ ভাগিয়ে নিত। এতে মধ্যকার কোন্দলে ভাগ বটোয়ারাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি ও সংর্ঘষের রূপ ধারন করায়ন কৌশল গ্রহন করে টেন্ডারবাজরা। গঠনকরে গুছ কমিটি। সেই থেকেই ক্ষেমতাসীন দলের ক্যাডারদের তোপের মুখে এখানকার সাধারন ঠিকাদাররা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখছে গুছ পার্টির কাজ ভাগিয়ে নেয়ার দৃশ্য। নগরীতে আলোচনার ঝড় তুলে বির্তকের জন্ম দিয়েছে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারী জেলা পুলিশের ৮০ লাখ টাকার মেরামত ও পূর্ননির্মান কাজের টেন্ডার প্রভাবশালী এক নেতার নেপথ্যে ভূমিকা। যা দখলে নিয়েছে গুছ পার্টি। তবে সবথেকে বেশী আলোচনার ঝড় তোলে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনে ৩৭ কোটি টাকার কাজ গুছের ঘটনায়। গত ৮ জানুয়ারী দরপত্র জমা দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঠিকাদারার আসলেও গুছ পার্টির সদস্যদের ভয়ে কেউ দরপত্র জমা দিতে পারে নি। প্রভাবশালী আ’লীগের দু’ নেতা কাজটি ভাগিয়ে নিয়েছেন। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজের বিটমানি উঠেছিল ২কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে সময় বিটমানির টাকাও নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে পকেটে পুরে নিয়েছেন। গুছ পার্টির সদস্যদের দৌরাত্ম তখন জেলা পুলিশ সুপার পর্যন্ত গড়িয়েছে।

গুছ পার্টির সদস্যরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জন প্রকৌশলীকে মারধরও করেছে। গত ১১ ফেব্র“য়ারী দুপুরে আ’লীগ ক্যাডার টেন্ডারবাজ মেজবাউল ইসলাম দীপু তার সহযোগী আলাল ওরফে টাক আলালসহ ৬/৭ জন টেন্ডারবাজ গণপূর্ত’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোশারেফ হোসেনের কক্ষে প্রবেশ করে। অতঃপর তারা প্রকৌশলী কে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন ঠিকাদারী কাজ তাদের কথার বাইরে যায় কেন? উভয়ের কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তারা নির্বাহী প্রকৌশলীকে চেয়ার থেকে তুলে নিয়ে মেঝেতে ফেলে বেদম মারধর করে। এর আগে ঠিকাদারী কাজের ফাইল নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ আবরার আহমেদ কে লাঞ্চিত করেছে যুবলীগ ক্যাডার ঠিকাদার তপু ওরফে টারজান তপু। গত ১১ মার্চ বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪ গ্র“পের দেড় কোটি টাকার কাজের লটারী প্রক্রিয়া ঠিকাদার মামুন ও আবুয়াল হোসেন অরুনের তোপের মুখে স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন। দাপ্তরিক নিয়মানুযায়ী লটারী প্রক্রিয়া শুরু করলে গুছ পার্টির মামুন ও অরুন ক্ষেপে গিয়ে প্রকৌশলীর উপর চড়াও হয়েছে। গত ৮ মার্র্র্চ জেলা পরিষদের টেন্ডার লটারীতেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে স্থগিত করা হয়।টেন্ডার লটারী স্থগিত করার প্রতিবাদে সাধারন ঠিকাদাররা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনও করেছে। গত ৯ মার্চ রাতে যুবলীগ নেতা মেজবাহ উদ্দীন জুয়েল ওরফে ভিপি জুয়েল সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবীকৃত একটি কাজ না পাওয়ার ক্ষোভে বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাবুদ্দীন আহম্মেদকে লাঞ্চিত করেছে। একাধিক দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাপের মুখে রয়েছি। দাপ্তরিক নিয়ম কানুন মেনে চলা সম্ভব হয়ে উঠছে না। মিডিয়ায় জানান দিলেও বিপদ।

যদিও বরিশাল সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন বিভিন্ন সময়ে টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী ঘোষনা দিচ্ছেন। টেন্ডারবাজী বা দপ্তরে অপ্রতির ঘটনা ঘটালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু মাঠের চিত্র সম্পূর্ন উল্টো। তা ছাড়া টেন্ডারবাজ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে একই হুশিয়ারী উচ্চারন করেছেন আ’লীগ কর্নধর সাবেক চীফ হুইফ বরিশাল জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।