পূজার চাঁদা না দেয়ায় এক শিক্ষক পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে গ্রাম্য মাতুব্বররা

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পূজার চাঁদা না দেয়ার অভিযোগে গত ১৪দিন ধরে বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার টরকীরচর এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাতুব্বররা অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে একঘরে করেছে। এলাকার একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় মাতুব্বররা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি দিয়ে গালিগালাজ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় বসবাসকারী ৪০টি হিন্দু পরিবারের একাংশের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে হিন্দু সম্পদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী পৌরসভার টরকীরচর এলাকার বাসিন্দা ও টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক বিরাজ ভূইয়া (৬১) গত ২ বছর পূর্বে বিরাজ ভূইয়া ব্রেনষ্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। গত চৈত্র মাসে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিরাজ ভূইয়া অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তার স্বজনেরা তাকে ঢাকা মর্ডান ক্লিনিকে ভর্তি করেন। এসময় টরকীরচর সার্বজনিন কালী মন্দিরে বার্ষিক কালী পূজা উপলক্ষে পূজা উদ্যাপন কমিটি রোগাক্রান্ত বিরাজ ভূইয়াকে ১ হাজার টাকা পূজার চাঁদা ধার্য্য করেন। তখন সে (বিরাজ ভূইয়া) ঢাকা মর্ডান ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকায় তার বড় ছেলে বিপ্লব ভূইয়া কালীপূজার ধার্য্যকৃত চাঁদা দিতে ব্যর্থ হয়।
 

এদিকে ওই এলাকার গোপাল ভূইয়ার স্ত্রী সুমতি রানী (৫৫) পরলোকগমন করেন। গত ১১ নবেম্বর তার শ্রাদ্ধনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গত ৮ নবেম্বর রাতে গোপাল ভূইয়ার বাড়িতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাতুব্বর কাশিনাথ মন্ডল, হিরালাল, নিরাঞ্জন ও সমীর মন্ডলের উপস্থিতিতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কালীপূজার ধার্য্যকৃত ১ হাজার টাকা চাঁদা না দেয়ার কারনে ওইসভায় মাতুব্বররা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিরাজ ভূইয়ার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে বিয়ে ও শ্রাদ্ধসহ সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন।

টরকীরচর রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক কালীপদ ভূইয়া সুমতি রানীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিরাজ ভূইয়া ও তার পরিবারের ৪ সদস্যকে দাওয়াত দেয়। ওই অনুষ্ঠানে বিরাজ ভূইয়া ও তার স্ত্রী প্রভাতি রানী মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেয়। সমাজচ্যুত ওই পরিবারের দু’সদস্যকে মধ্যাহ্নভোজে দেখে ৮/১০ জন মাতুব্বররা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান বর্জন করে। মাতুব্বরদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সমাজচ্যুত পরিবারকে দাওয়াত দেয়ার কারনে ওই মাতুব্বররা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান বর্জন করে। এসময় অনুষ্ঠান বর্জনকারী মাতুব্বরদের সমর্থকেরা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিরাজ ভূইয়া ও তার স্ত্রী প্রভাতি রানীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শন করে।

সমাজচ্যুত পরিবারের গৃহকর্ত্রী প্রভাতি রানী জানান, পূজার ধার্য্যকৃত চাঁদা শ্রাদ্ধের দিন সন্ধ্যায় মাতুব্বরদের কাছে দিতে গেলে কাশিনাথসহ ৩ জন মাতুব্বর টাকা না রেখে গালিগালাজ করে তাকে তাড়িয়ে দেয়। মাতুব্বররা তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে একঘরে করে রেখেছে। মাতুব্বরদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে প্রভাবশালী মাতুব্বর কাশিনাথ মন্ডল জানান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিরাজ ভূইয়ার পরিবারকে মাতুব্বররা সমাজচ্যুত করেনি। সামাজিক কোন আলোচনা সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ ও চাঁদা না দেয়ার কারনে বিরাজের পরিবারকে শ্রাদ্ধে দাওয়াত না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মাতুব্বররা।