নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালে মেয়েকে উত্যক্তকারীদের বাঁধা দেয়ায় বখাটের ছুরিকাঘাতে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও স্কুল শিক্ষক জিন্নাত আলী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। মাস শেষে যে টাকা আয় হতো সংসারের ভরন পোষনের পর তা দিয়েই নগরীর মডেল স্কুল এন্ড কলেজে কন্যা তাজরীন জিন্নাত সুপ্তিকে লেখাপড়া করাতো জিন্নাত আলী। তাই সে কোন অর্থই জমা রাখতে পারেননি। তার অকাল মৃত্যুর পর স্ত্রী শিরিন বেগম সংসারের ভরন পোষন ও কন্যার পড়াশুনা ও তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন।
নিহত শিক্ষক জিন্নাত আলীর স্ত্রী শিরিন বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, কন্যা সুচি ও সুপ্তিকে নিয়ে ছিলো তাদের সুখের সংসার। দেড় বছর পূর্বে ধারদেনা করে সুচির বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে জামাতা ততটা স্বচ্ছল নয়। মাঝে মধ্যে কন্যা সুচিকেও সহয়তা করতেন জিন্নাত আলী। এরপর যে অর্থ থাকতো তা দিয়ে ছোট মেয়ে সুপ্তির লেখা পড়ার খরচ ও সংসারের খরচ মেটানো হতো। হঠাৎ করে বখাটেদের ছুরিকাঘাতে তিনি (জিন্নাত আলী) মারা যাওয়ায় পুরো পরিবার নিয়ে শিরিন বেগম এখন মহাদুশ্চিন্তায় পরেছেন।
তিনি আরো জানান, শিক্ষক জিন্নাত আলীর স্বপ্ন ছিলো অবসরের পর পেনশনের টাকা দিয়ে নগরীতে নিজস্ব ভাবে একটি বাড়ি করায়। সারা জীবনই সে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেছেন। ১৯৭১ সনে যুদ্ধ শেষে তিনি (জিন্নাত আলী) বরিশাল বি.এম কলেজ থেকে এম.এ পাশ করেন। এরপর বরিশালের বিভিন্ন বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে ছিলেন। বরিশাল এ.আর.এস বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে স্কুলে তার শিক্ষকতার জীবন শুরু। সেখানে ২ বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর ১৯৮৫ সনের ১ জানুয়ারি বরিশালের রুপাতলীস্থ এ.ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সে থেকেই এ বিদ্যালয়েই তিনি কর্মরত ছিলেন। আর মাত্র দু’বছর পরেই শিক্ষক জিন্নাত আলীর অবসরে যাওয়ার কথাছিলো।
জিন্নাত আলীর মৃত্যুতে তার কন্যা নগরীর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী সুপ্তির আর এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা দেয়া হলো না। নিহত শিক্ষক জিন্নাত আলীর ছোট মেয়ে সুপ্তির ইচ্ছে ছিলো এবারের এইচএসসি’র নির্বাচনী (টেষ্ট) পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পাবে। সে অনুযায়ী বাবা জিন্নাত আলী তার মেয়ের জন্য অতিরিক্ত কোচিং’র ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো। সুপ্তি রিতিমতো স্কুল ও কোচিং’র লেখা পড়াও করতো। গত ৫ দিন ধরে তার আর লেখা পড়া করতে হচ্ছে না। হঠাৎ করে বখাটেদের ছুরিকাঘাতে পিতার মৃত্যুতে তার অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা হয়নি। সুপ্তির মা শিরিন বেগম সংসারের ভরন পোষনের পাশপাশি সুপ্তির পড়াশুনার খরচ কে যোগাবে এ নিয়ে এখন মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।