পটুয়াখালী সংবাদদাতাঃ পটুয়াখালীর সর্বত্র চলছে এখন সর্বহারা আতংক। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ও ল্যান্ড ফোনে কল করে লাল বাহিণীর নামে দাবী করা হচ্ছে চাঁদা। সরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাংবাদিকরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেনা। ফোন করে দাবী কৃত টাকা না দিলে সন্তান অপহরন সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকী দেয়া হচ্ছে। পুলিশ এ ধরনের হুমকীর কথা স্বীকার করেছে। গত দু’দিনে (শুক্র-শনি) পটুয়াখালী সদর থানায় এ পর্যন্ত ৪টি জিডি এন্ট্রি হয়েছে এ সংক্রান্ত। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। থানায় জিডিকৃতরা হলেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিপিএমজি, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, কালিকাপুরস্থ নূর ক্লিনিকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ছোবাহান তালুকদার ও পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জী। এ ছাড়াও জেলা মৎস্য অফিসের আলতাফ হোসেন, দু’টি স্থানীয় দৈনিকের সম্পাদক সহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীকে ফোন করে অনুরূপ চাদা দাবী করা হয়। সর্বহারা পার্টির নামে পটুয়াখালীতে আবার মোবাইলে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ করা না হলে সন্তান অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের ভয়-ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে সর্বহারা পার্টির নামধারী চাঁদাবাজরা। এতে শহরবাসির মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে । এ অবস্থায় মোবাইলে অপরিচিত নম্বরের কল আসলেই আঁতকে ওঠেন শহরবাসি। এমন তৎপরতা এক বছর আগেও দেখা দিয়েছিল। জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা ৫৪ মিনিটে বাংলালিংক মোবাইলের ০১৯৪৪৯৬৩১৮২ নম্বর থেকে সর্বহারা পার্টির সদস্য পরিচয় দিয়ে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জেলা শহর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সম্পাদককে মোবাইলে ফোন করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে এবং তাদের লাল বাহিনীর সদস্যরা চাঁদার জন্য গেলে তাদেরকে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এর আগে ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় বাংলালিংক মোবাইলের ০১৯৪৫৩০০৬৮৯ নম্বর থেকে সর্বাহারা পার্টির সদস্য পরিচয় দিয়ে পটুয়াখালী-১ (সদর) আসনের সাবেক এক সংসদ সদস্যকে (পটুয়াখালী জজ কোর্টের আইনজীবী) তার মোবাইলে ফোন করে বলে, ‘আমাদের পার্টির লোক ধরা পড়েছে, তাকে ছাড়িয়ে আনতে টাকার দরকার। তাই আমাদেরকে চাঁদা দিতে হবে। দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ করা না হলে আপনার ও পরিবারের বিপদ হবে’। এর পর পরই একই নম্বর দিয়ে তার সহধর্মিনী অধ্যাপিকাকে ফোন করে বলে, ‘আমাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ না করলে আপনার স্বামী কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারবে না’। এভাবে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে গত ২/৩ দিন ধরে পটুয়াখালীর সরকারি, বেসরকারি, জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর লোকজনকে মোবইলে ফোন করে চাঁদা দাবি করছে। বিষয়টি র্যাব ও পুলিশকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দীক জানান, বিষয়টির ওপর পুলিশের কড়া নজর রয়েছে এবং নম্বরগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। র্যাব-৮ পটুয়াখালী ক্যাম্পের অধিনায়ক লেঃ কমান্ডার মোহাম্মদ নূর-উজ-জামান জানান, মোবাইলে এ ধরণের চাঁদা দাবি করার অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকেও এভাবে মোবাইলে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে জেলার সাবেক এক জেলা প্রশাসকসহ সরকারি, বেসরকারি, জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর লোকজনকে ফোন করে তাদের দেওয়া মোবাইলে মোটা অংকের চাঁদার টাকা পাঠাতে বলেছিল এবং দাবিকৃত চাঁদার টাকা মোবাইলে না পাঠালে সন্তান অপহরণসহ নানা ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়েছিল। এতে ভীতিগ্রস্ত হয়ে কেউ কেউ কথিত সর্বহারা পার্টির দেওয়া মোবাইল নম্বরে টাকাও পাঠিয়ে ছিল বলে সূত্র জানায়।