শাহীন হাসান, বরিশালঃ শাসনের সুরে কোনদিন আর সন্তানদেরকে কিছু বলবেন না, অনুরোধ করবেন না নাতি-নাতনী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের বেড়াতে আসার জন্য। সবাইকে কাঁদিয়ে নিরবে শুইয়ে আছেন মো. আনোয়ার হোসেন নামের এই ব্যক্তিটি গোরস্তানের মাটিতে। চির বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ শত শত জনতার বিবেককে গতকাল যেন আরেকবার জাগ্রত করিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি। ভাল মনের এই মানুষটির নূরানী মুখমন্ডল শেষ দর্শন করতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সরকারি ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী সহ সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্বভাবতই নগরীর সদর রোডের রাজপথে বইতে থাকে শোকাহত মানুষের আর্তনাদে শোকের মাতম। জানাজার নামাজের পূর্ব মুহূর্তটুকু সরকারি ও বিরোধী দলের মিলন মেলায় শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক বাধার প্রাচীর যেন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে গতকাল।
নিয়তির নিষ্ঠুরতার ধারাবাহিকতায় আনোয়ার হোসেনের ন্যায় প্রত্যেকের মরণ স্বাদ গ্রহণের ভাবনায় মন বিচলিত হয়ে সদর রোডের আকাশ-বাতাসে যেন সৃষ্টি হয় মৃত্যু শঙ্কা। শোকে শোকাহতদের উপস্থিতিতে রাজপথ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। হিংসা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দদের আকস্মিক মুখোমুখিতে জানাজায় ঠিক ৫ মিনিট পূর্বে পরস্পর মিলিত হয় আলীঙ্গন ও করমর্দন পর্বে। অবাক দৃষ্টিতে যা অবলোকন করছিল জানাজা নামাজে অংশগ্রহণকারী শত শত মানুষ। যে পর্বের চমকে ছিল আ’লীগের সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুচ, হাসানাতের উত্তরসূরী ছাদেক আব্দুল্লাহর সাথে বিরোধী দলীয় নেতা বরিশাল বিএনপির সাংসদ এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মহসিন উল ইসলাম হাবুল, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি আবুল কালাম আজাদের কুশল বিনিময়-কোলাকুলি ও করমর্দন।
আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে ঘটে যাওয়া এই আন্তরিকতার ধারাবাহিকতা সর্বদাই দেখতে চায় বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ। সকাল সোয়া ১০টার দিকে শুরু হয় মরহুমের জানার নামাজের ২য় জামাত। সকাল ১০টার পূর্বেই দরদী মানব মরহুম আনোয়ার হোসানের জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত হয় বারেকগঞ্জের সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ আ. রশিদ, জেলা আ’লীগের দপ্ত সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুচ, মরহুমের বড় পুত্র হাইকোর্টের বিচারপতি এম.আর.এম নাজমুল হাসান মিজান, মেঝ পুত্র দৈনিক বাংলার বনে’র বার্তা সম্পাদক সিএইচ মাহবুব, ছোট ছেলে কালের কণ্ঠ’র তৌফিক মারুফ, দৈনিক বাংলার বনে’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, আ’লীগ নেতা তারিক বিন ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত, সম্পাদক আ. রাজ্জাক, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সম্পাদক ওয়াসীম দেওয়ান সহ বরিশাল আদালতপাড়ার অসংখ্য আইনজীবী। জানাজা নামাজ সম্পন্নের পর মরহুমের লাশ মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হয়। এর পূর্বে সকাল ৯টায় কাউনিয়া এ.কাদের চৌধুরী স্কুল মাঠে মরহুমের প্রথম জানাজার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি মানবেন্দ্র বটব্যাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল, আজকের বার্তা’র এস.এম ইকবাল, সমন্বয় পরিষদের এ্যাড. নজরুল ইসলাম চুন্নু, গণফোরামের জেলা সভাপতি হিরণ কুমার দাস, অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়ালের খাদেম উল কায়েস, শিল্পপতি সায়দুর রহমান রিন্টু ও এ্যাড. গিয়াস উদ্দিন কাবুল প্রমুখ।