শাহীন হাসান, বরিশালঃ শেবাচিম হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় মানসিক রোগী রাজিয়া লিপি (২১) এর জীবন বিপন্ন হতে যাচ্ছিল। দেরীতে হলেও ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় গতকাল বিকেলে উদ্ধার করা হয় তাকে।
সূত্রমতে, ১৬ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনেটে শেবাচিমের সিসিইউ-তে ভর্তি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে রেফার্ড করে দেয় বরিশাল নথুল্লাবাদ এলাকার রাজিয়া লিপিকে। দুপুর ১২টার সময় রোগী ফিমেল মেডিসিন (৪তলা ৫নং) ওয়ার্ডের বাথরুমে যায়। এরপর বাথরুম দীর্ঘক্ষন পর্যন্ত আটকানো দেখে তার মা ডাকাডাকি শুরু করলে কর্তব্যরত নার্স এবং এমএলএসএসরা খোঁজাখুঁজি করে দেখে বাথরুমের ভাঙা ভেন্টিলেটর দিয়ে বের হয়ে ৪তলার ছোট্ট কার্নিশে (সানছেটে) বসে আছে। উদ্ধারের জন্য হাসপাতালের পরিচালক ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে প্রায় ১ঘন্টা পরে তাদের দেখা মেলে।
অসংখ্য উৎসুক প্রত্যক্ষদর্শী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উক্ত ঘটনার জন্য শেবাচিম হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাই বহুলাংশে দায়ী। রোগীর স্বজন ও আগত দর্শনার্থীদের প্রশ্ন-এতোদিন ধরে বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভাঙা ছিলো অথচ কর্তৃপক্ষ সে দিকে কোনো নজর দেয় কেনো? ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকাকালীন কর্তব্যরত নার্সরা রোগীর মানসিক অবস্থা খারাপ দেখেও কেনো মানসিক ওয়ার্ডে প্রেরণের উদ্যোগ নেয়নি? উপস্থিত পরিচালক এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেন, পি ডব্লিউডির জন্য আজকে এ অবস্থা। তাদের কাজের অনিয়ম, ধীরগতি, দুর্নীতির কারণে রোগীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আর বদনাম হয় হাসপাতালের। তাদেরকে অনুরোধ করতে করতে আর সহ্য হয়না। তারা যদি প্রতিষ্ঠানটিতে কাঠামোগত এ কাজগুলো ঠিকমতো করতো তাহলে ভেন্টিলেটর সহ অন্যান্য অবকাঠামোগুলো ঠিক থাকতো। অপরদিকে উপ-পরিচালক তৈরী করলেন আরেক বিস্ময় তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো ভর্তিরত ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স ডাক্তাররা তাদেরকে কেন মানসিক ওয়ার্ডে পাঠালো না তখন তিনি বলেন, এখানে কোন মানসিক ওয়ার্ড নেই। অথচ নিচতলায় জরুরী বিভাগের সাথেই মানসিক ওয়ার্ড দ্বায়িত্বে আছেন ডা:তপন কুমার সাহা।
সরেজমিন সূত্রে, ফায়ার সার্ভিস দেরিতে আসলেও তাদের এ্যাসিটেন্ট পরিচালক আসতে দেরি হওয়াতে উদ্ধার কাজের কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। ততক্ষনে শুধু দৃশ্য উপভোগ করা মাত্র। এভাবে প্রায় ৫০ মিনিট পরে একটি এয়ার প্যাড আনা হয় প্রায় একতলা সমান উঁচু। জানালা কেটে উদ্ধার করতে গেলে যদি পড়ে যায় তাহলে যেন এয়ার প্যডের উপর পরে আহত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম শেবাচিমের ৪ তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে জানালার গ্রিল কেটে কার্নিশ থেকে রোগীনীকে টেনে ভিতরে এনে উদ্ধার করে। এরপর কর্তব্যরত ইএমও মানসিক ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেয়। মানসিক ওয়ার্ডের দায়িত্বরত ডাক্তার তপন কুমার সাহাকে পাওয়া যায়নি, খবর নিয়ে জানা গেছে তিনি তার চেম্বারে ব্যস্ত ছিলেন।
পরিচালক জানান, এখন তার ডিউটি নেই তাই তাকে আসতে বলা যাবেনা। তিনি আরো বলেন, এতবড় প্রতিষ্ঠান আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলা করার জন্য কোন ফান্ড বা ব্যবস্থা নেই।