ওডেস্কে জব মার্কেট প্লেসে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থতে: ম্যাট কুপার

প্রিয় টেকঃ ইন্টারনেটে তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার একটা বড় জায়গা বা অনলাইন মার্কেট প্লেস হলো ওডেস্ক। বিশেষ করে, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার ওডেস্ক থেকে কাজ নেন, সেটা সম্পন্ন করেন এবং গ্রাহককে জমা দেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ই-এশিয়া মেলা উপলক্ষে ঢাকায় এসেছিলেন ওডেস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট অব অপারেশনস ম্যাট কুপার। ঢাকায় তিনি ই-এশিয়ায় একটি এবং এর প্রাক্কালের বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত কয়েকটি সেমিনারে বক্তব্য দেন।

মার্কিন নাগরিক ম্যাট কুপার অর্থনীতিতে স্নাতক। পরে তিনি ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৯৮ সালে তিনি জেপি মরগানে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০২ সালে নিজে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। ২০০৭ সালে তিনি ওডেস্কে যোগ দেন। ঢাকায় তাঁর সঙ্গে কথা হয় আউটসোর্সিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। ১ ডিসেম্বর বেসিস কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পল্লব মোহাইমেন
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং কাজের সঙ্গে জড়িত বা এ কাজে আগ্রহী, তাঁদের কাছে ওডেস্ক খুব পরিচিত এক নাম। ওডেস্ক সম্পর্কে কিছু বলুন।

ম্যাট কুপার: ওডেস্ক হলো একটি গ্লোবাল মার্কেট প্লেস। ২০০৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় এর যাত্রা শুরু হয়। ইন্টারনেটভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি পেশাজীবী এবং কাজদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতুবন্ধ ঘটিয়ে দেয়। অনেক কাজ আছে, যেগুলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে করা যায় না। যদিও করানো যায় তবে তার খরচ অনেক বেশি পড়ে এবং কখনো কখনো সময়ও বেশি লাগে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো তখন ওই কাজগুলো বাইরে থেকে করিয়ে নেয়। এটাই হলো আউটসোর্সিং। যেসব দেশে শ্রমমূল্য অপেক্ষাকৃত কম, সেসব দেশের পেশাজীবীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজগুলো করে দেন। ভৌগোলিক কারণেও অনেক সময় অন্য দেশ থেকে কাজ করালে সুবিধা পাওয়া যায়। ওডেস্কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কাজগুলো তুলে ধরে। পেশাজীবীরা সেই কাজ করে দেওয়ার জন্য নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেন। পোর্টফোলিও দেখে প্রতিষ্ঠান তখন তাদের কাজটা পেশাজীবীকে দিয়ে দেয়। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ জমা দিলে পারিশ্রমিকের অর্থ পাওয়া যায়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে ওডেস্কের ওয়েবসাইটে। ওডেস্ক প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী দুই পক্ষের জন্যই বড় একটা জানালা খুলে দেয়।

কতটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ওডেস্কের মাধ্যমে আউটসোর্স করাচ্ছে, আর কতজন পেশাজীবীই বা কাজ করছেন?

ম্যাট কুপার: দুই লাখ ৫০ হাজার কোম্পানি ওডেস্কে তাদের কাজ দিচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমানে ১৮ লাখ পেশাজীবী ওডেস্কে আউটসোর্সিং কাজের জন্য নিবন্ধিত। অনলাইন মার্কেট প্লেসের যে বাজার আছে, তার ৫৫ শতাংশ এখন ওডেস্কের দখলে।

ওডেস্কের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?

ম্যাট কুপার: কাজ করার পর পারিশ্রমিক বা অর্থ পাওয়ার গ্যারান্টি আমরা দিই। আবার কোম্পানিকেও এ গ্যারান্টি দিই যে তাদের কাজ নির্ধারিত সময়ে চুক্তিমতোই সম্পন্ন করবেন আমাদের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সাররা। একজন ফ্রিল্যান্সার কাজ পাওয়ার পর সেই কাজ সাধারণত ৩০, ৬০ ও ৯০ দিনে শেষ করবেন, কোম্পানির সঙ্গে এমন চুক্তি হয়ে থাকে। সেই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করলেই ফ্রিল্যান্সার তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পারিশ্রমিকের টাকা পেয়ে যান।

এখন কোন কোন দেশ ওডেস্কে কাজের দিক থেকে এগিয়ে আছে?

ম্যাট কুপার: আমাদের সাইটে আউটসোর্সিংয়ের কাজে শীর্ষস্থানে এখন আছে ফিলিপাইন। এর পরই আছে ভারত। তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র, চতুর্থ স্থানে আছে বাংলাদেশ। পঞ্চম স্থানটি পাকিস্তানের দখলে।

তাহলে তো বলতে হয়, ওডেস্কে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো?

ম্যাট কুপার: অবশ্যই। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা খুব ভালো কাজ করছেন, দ্রুত তাঁদের উন্নতি হচ্ছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কাজ পাওয়ার হার উল্লেখ করার মতো কিছু ছিল না। মাত্র দুই বছরে ওডেস্কে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে গেছে। এটা খুব বড় ধরনের উন্নতি।

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা কী ধরনের কাজ বেশি করেন?

ম্যাট কুপার: সবচেয়ে বেশি যে কাজটি হয়, সেটি হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)। এর পরই আছে ডেটা এন্ট্রি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।

ওডেস্কে কি শুধু তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিং কাজ পাওয়া যায়?

ম্যাট কুপার: না। অন্যান্য কাজও আছে ওডেস্কে। এখানে মোটামুটি ৫৫ শতাংশ কারিগরি কাজ এবং ৪৫ শতাংশ সাধারণ কাজ থাকে।

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটা বড় সমস্যা হলো কাজ করে পাওয়া টাকা দেশে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসা। এ কারণে তাঁদের একটা প্রধান দাবি হলো বাংলাদেশে পেপ্যাল সেবা চালু করা। এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবেন?

ম্যাট কুপার: বিদেশ থেকে অনলাইন পেমেন্ট সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের সেবা চালু আছে। এর মধ্যে পেপ্যাল, পেপেইড ইত্যাদি সেবা আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে আছে। এই সেবা থাকলে অর্থ দ্রুত এবং সহজে পাওয়া যায়। পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হলে তা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুবিধাজনক হবে। আমরা ওডেস্ক থেকে ২০১২ সালের মধ্যে মুঠোফোনে কাজের বিনিময়ে পাওয়া অর্থ পাঠানোর সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এটা হলে অনেক সুবিধা হবে বলে মনে করছি।

নবীন ফ্রিল্যান্সারদের উদ্দেশে কিছু বলুন?

ম্যাট কুপার: শুরুটা করে দিতে হবে। প্রথমে একজন গ্রাহক, তারপর আরেকজন। এভাবে কাজ বাড়তে থাকবে। আউটসোর্সিংয়ের জন্য অনলাইন যোগাযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের পোর্টফোলিওটা ভালো হতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। একবার কোনো কাজ সময়মতো ও সঠিকভাবে করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে ওই ফ্রিল্যান্সারের কাজ পেতে সমস্যা হবে। এ জন্য খুব বেশি স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিটি কাজ করে যেতে হবে।

-সৌজন্যে- প্রথম আলো