মহাজোট সরকারের আমলেও ভাল নেই জল্লার হিন্দু সম্প্রদায়

শাকিল মাহমুদ বাচ্চু, উজিরপুর ॥ মহাজোট সরকারের আমলেও ভাল নেই বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লার হিন্দু সম্প্রদায়ে। হাজার হাজার নারী, পুরুষ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আসায় নেমে পড়েছে রাস্তা ঘাটে। ফলে আগামী নির্বাচনে মহাজোটের ভোট ব্যাংকে ফাটল ধরবে। এ কথা প্রকাশ্যে বলছেন ওই এলাকার আ’লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘ সময় ধরে

এ অঞ্চল আ’লীগের ভোট ব্যাংক হিসাবে খ্যাত। ওই ভোট ব্যাংকে আঘাত হানতে গত ৪ দলীয় জোট সরকারে আমলে ওই এলাকার সংখ্যা লঘুদের নানা ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি আ’লীগ নেতা জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান অবনি বাড়ৈকে হত্যা করেছে সর্বহারা নামধারী সন্ত্রাসীরা।

গত সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থীকে নৌকা প্রতীকে ৯০ ভাগ ভোট দিয়ে জয় লাভে সহায়তা করেছিল তারা। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের আশা ছিল মহাজোট সরকার মতায় এলে ভাল থাকবে তারা। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা এখন ভিন্ন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি মহল ওই এলাকার নিরীহ মানুষকে শাসনের স্বপ্নে একের পর এক নির্যাতন চালাচ্ছে। থানা পুলিশের একটি দালাল চক্র অসহায় ভীতু মানুষদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন যুবক।

জল্লার দুরাবস্থা নিয়ে আ’লীগের বরিশালের কর্নধর হিসাবে পরিচিত সাবেক চিফ হুইফ আবুল হাসানাত আব্দুল্লার কাছে একাধিকবার বিচার দিয়েছিলেন পর পর দুইবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান উর্মিলা বাড়ৈ। বরিশাল ১ আসনের সাংসদ তালুকদার মোঃ ইউনুসের কাছেও বিচার দিয়েছেন জল্লার বেশ কয়েকজন আ’লীগের শীর্ষ নেতা। ফলে দিনে দিনে জল্লার অসহায় মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসস্তোষ। যার প্রতিফলন গত ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কুড়ালিয়ার ব্যবসায়ী স্বপন সমাদ্দার হত্যাকান্ডের ঘটনার জের ধরে পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা।
এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ১০ গ্রামবাসী আহত হয়। পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়া ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ ক্যাম্পে ইট, পাটকেল নিপে করে ৫ পুলিশকে আহত করে। এ ঘটনায় ৩/৪ শত গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করলে গ্রামবাসীর পাশে কোন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীরা এসে দাড়ায়নি। নানা আতঙ্ক নিয়ে হাজার হাজার নারী, পুরুষ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। মহাজোট সরকারের আমলেও জল্লার মা-বোনদের রাজ পথে লড়াই করতে হবে তা অকল্পনীয়। যারা নিঃস্বার্থভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন তারা আজ নির্যাতনের শিকার হয়ে শরীর থেকে তাজা রক্ত ঝরাবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি।

জল্লা ইউপি চেয়ারম্যান উর্মিলা বাড়ৈ জানিয়েছেন একটি মহল পরিকল্পিতভাবে মহাজোটের নাম দিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। তারা পুলিশের দালাল হিসাবে কাজ করে সাধারন মানুষকে হয়রানি করছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে আ’লীগের ভোট ব্যাংকে প্রভাব পড়বে। জল্লা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি সমীর মজুমদার জানিয়েছেন দল মতায় আসার পর এ অঞ্চলের নেতা কর্মীদের কোন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। দলের বাইবে পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে নানা কাজ কর্ম চালাচ্ছেন। যার ফলে জল্লার সংখ্যালঘুরা পদে পদে অপদস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আ্গামী নির্বাচনে ভোটে প্রভাব পড়বে। জল্লার বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জুয়েল জানিয়েছেন আমাদের সরকারের আমলে জল্লার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নানা ভাবে লড়াই করছে। পুলিশের নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে তারা।

উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল জানিয়েছেন, জল্লায় বসবাসকারী ৯৯ ভাগ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। ফলে ওই এলাকার উপর কুচক্রীমহল নজর দিচ্ছে স্বার্থ হাসিলের জন্য। বর্তমানে ওই এলাকার মানুষ ভাল নেই।