নাটকীয়তায় ভরপুর আগৈলঝাড়া যুবদলের কমিটি গঠনে

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া ॥ ২০১১ সাল বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বিশৃঙ্খলা ও বহু নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে চলেছিল বিএনপির দলীয় কার্যক্রম। দলীয় নেতাকর্মীরা ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে নামে মাত্র দলীয় কর্মসূচী পালন করেছেন। কোন কোন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের সহযোগিতায় দলীয় কর্মসূচী পালন করার অভিযোগ উঠেছিল। যখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচী তুঙ্গে তখন আগৈলঝাড়ায় বিএনপি’র গ্রুপিং-এর কারণে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনে অনিহা প্রকাশ করেছিল।

দলীয় ও স্থানীয় একাধিকসূত্রে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিএনপি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। বরিশাল-১ আসনের চারদলীয় ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। নির্বাচনের পরে তার সমর্থিত আঃ লতিফ মোল্লাকে আহবায়ক করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর কেন্দ্রীয় অপর নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান সমর্থিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পরে। একপর্যায়ে তারা ওই কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিল। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর গৈলায় লতিফ মোল্লার বাড়ি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিল প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি এমপি মেজবাহ্ উদ্দিন ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আকন কুদ্দুসুর রহমান।

কাউন্সিলে গোপন ভোটের মাধ্যমে আঃ লতিফ মোল্লা সভাপতি, এসএম আফজাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ও মাহবুবুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়। তখন সংস্কারপন্থীরা ধূঁয়া তুলে সাবেক উপজেলা বিএনপি সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন লাল্টুসহ জহিরউদ্দিন স্বপন সমর্থিত অনেক নেতাকে স্থান দেয়া হয়নি ওই কমিটিতে। এরপর থেকে ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান সমর্থিত নেতাকর্মীদের সাথে কুদ্দুস ও স্বপন সমর্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার মধ্য দিয়ে দলীয় কার্যক্রম চলতে থাকে। কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচী আগৈলঝাড়ায় গ্রুপিং-এর কারণে তেমন পালিত হয়নি। এইকারণে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরে।

এ এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীর অধিকাংশই সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপনের সমর্থক। তারা এ আসনে নেতা হিসাবে তাকেই দেখতে চাচ্ছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীসূত্রে জানা গেছে। আবার অনেকেই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে নতুন মুখ আকন কুদ্দুসকে চায়। এদিকে ৫টি ইউনিয়নের বিএনপি’র সভাপতি, সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের অভিযোগ প্রদান ও দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট জেলা উত্তর বিএনপি সভাপতি এমপি মেজবাহ্ উদ্দিন ফরহাদ আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করে আবুল হোসেন লাল্টুকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহ মোঃ বখতিয়ারসহ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির বিরুদ্ধে বিুব্ধ বিলুপ্ত কমিটির নেতারা তাদের কমিটি বহাল রেখে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গত ২৫ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এ ঘটনার একদিন পর ২৭ আগস্ট বিলুপ্ত কমিটি বহাল রাখতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে জেলা বিএনপি কর্তৃক অবৈধভাবে উপজেলা বিএনপি কার্যকরী কমিটি বিলুপ্ত করে অসাংগঠনিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের অভিযোগ করে পূর্বের কমিটি পুণঃ বহাল রাখার আবেদন করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে দলের মহাসচিবের কার্যালয় থেকে যুগ্ম মহাসচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এ্যাড. রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ২৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি/সাধারণ/৭৬/২৫/২০১১ স্মারকে জেলা উত্তর বিএনপি সভাপতি ও সম্পাদককে ৭ দিনের মধ্যে আগৈলঝাড়া বিএনপি কমিটি বিলুপ্তির কারণ লিখিত প্রতিবেদন আকারে পেশ করতে নির্দেশ দেন।

আঃ লতিফ মোল্লা মহাসচিবের উপর আস্থা রাখতে না পেরে বিলুপ্ত কমিটি টিকিয়ে রাখার জন্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ২০১০ সালের ২৯ আগস্ট বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে জেলা সভাপতি, সম্পাদক, আগৈলঝাড়া উপজেলা আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কসহ ৮জনের বিরুদ্ধে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। গত ৩ অক্টোবর বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ স্বপন সাহার আদালত আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির উপর জারীকৃত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন।

এদিকে দু’গ্রুপের দলীয় কর্মসুচী পালন করতে গেলে সংঘর্ষের আশঙ্কায় গত ৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশক্রমে যুগ্ম মহাসচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এ্যাড. রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপি/বরিশাল উত্তর ৩৫/২০১১ইং স্মারকে দলের যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহানকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

একারণে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীও আলাদা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দলীয় কর্মসূচী পালন করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ২০১১ সাল আগৈলঝাড়ায় বিএনপি চলছিল বিশৃঙ্খলা ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে।