খোন্দকার কাওছার হোসেন ॥ রোডমার্চ শেষে আগামীকাল সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম পলোগ্রাউ- মাঠের জনসভা থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে সরকার পতনের এ আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাবেন। গতরাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি চুড়ান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জোট শরিক ও সম্প্রসারিত জোটের সম্ভাব্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন বছরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছেন খালেদা জিয়া। আর এ কর্মসূচিতে অবরোধ, ঘেরাও বা হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি থাকছে।
এ কর্মসূচিতে জোট শরিক ও সমমনাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চট্টগ্রাম রোডমার্চের পর আবারো তাদের সঙ্গে বসবেন তিনি। অপেক্ষাকৃত খর্বকায় শক্তির এসব দলকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েই কাছে রাখতে চান তিনি। এছাড়া রোডমার্চসহ পরবর্তী কর্মসূচিগুলোতে দলের সিনিয়র নেতাদের আরো সক্রিয় হওয়ারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
চেয়ারপারসনের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, গণতন্ত্র সুসংহত করার প্রয়োজনে সরকারকে চাপে রাখতে অব্যাহত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা দরকার। মাঝে মধ্যে কঠোর কর্মসূচি দিলে নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা থাকে। তাই চট্টগ্রাম রোডমার্চের পরে ঢাকা ঘেরাও বা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিলে তা সব দিক দিয়েই ভালো হবে।
এছাড়া ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে সভা-সমাবেশ, সেমিনার, গোলটেবিল আলোচনা, বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদি করে একদিকে সরকারের মধ্যে যেমন অস্থিরতা সৃষ্টি করা যায়, তেমনি বিএনপির অতীতের উন্নয়নমূলক কর্মকা- ও সরকারের চলমান ব্যর্থতার চিত্র গণমানুষের কাছে তুলে ধরে দলের জনপপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে।
সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ২ দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বিভাগীয় রোডমার্চ আজ রোববার সকাল ১০টায় শুরু হচ্ছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে এ রোডমার্চ রওয়ানা হবে। এ রোড মার্চে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দেবেন। আগামীকাল সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে এই রোড মার্চ শেষ হবে।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানিয়েছেন, প্রথমদিন (আজ) রোডমার্চ যাবে ফেনী পর্যন্ত। সকালে ঢাকা ছাড়ার পর খালেদা জিয়া কুমিল্লার চান্দিনা মাদাই ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রথম পথসভায় বক্তৃতা করবেন। একই এলাকার নূর মানিক চান মাঠে দিনের দ্বিতীয় পথসভায় অংশ নেবেন তিনি। দিনের তৃতীয় ও শেষ পথসভাটি হবে কুমিল্লা বিশ্বরোডের পদুয়ার বাজারে। বিকেলে ফেনির পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হবে প্রথম জনসভা। আগামীকাল সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে।
খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটের মতোই এ রোডমার্চে জনতার ঢল নামবে বলে আশা প্রকাশ করে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে সরকারকে বাধ্য করবে মানুষ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও রোডমার্চের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা জানান, এ রোডমার্র্চের বহরে ৬ হাজার গাড়ি থাকবে। ঢাকা থেকে ৪ হাজার গাড়ী যাত্রা শুরু করবে। পথে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা থেকে আরো ২ হাজার গাড়ী রোডমার্চের সঙ্গে যুক্ত হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দানে অনুষ্টিতব্য বিএনপির মহাসমাবেশকে জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত করে চট্টগ্রাম থেকে মহাজোট সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজানো হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি এখন চট্টগ্রামের দিকে। চট্টগ্রাম হচ্ছে আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। চট্টগ্রামের মানুষ একবার রাজপথে বের হলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আর ঘরে ফিরে যায় না।
এ রোডমার্ড প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, চট্টগ্রামের রোডমার্চ ও সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। সমাবেশে কোন ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটলে সরকারকে এর দায় দায়িত্ব বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সমাবেশ হবে স্মরণাতীতকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। আশা করি সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবে।
রোডমার্চে চাঙ্গা হচ্ছে জামাত
পুলিশের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন ঘটনায় কোণঠাসা হয়ে থাকা জামাত শিবিরের নেতা-কর্মীরা রোড মার্চ উপলক্ষে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। যেসব জেলার ওপর দিয়ে রোডমার্চ যাবে সেসব জেলায় এ দলের নেতাকর্মীরা মিছিল মিটিং, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। পাশাপাশি রোড মার্চে তারা বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামাতের আমির মওলানা শামসুল ইসলাম দাবি করেছেন- রোডমার্চে যে লোকসমাগম হবে তার অর্ধেকই থাকবেন জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থক। যদি ২০ লাখ লোকসমাগম হয়, অর্ধেক লোক হবে জামাত-শিবিরের। সাতকানিয়া-কক্সবাজার থেকে শুরু করে মিরসরাই পর্যন্ত জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা রোড মার্চে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন।
আমাদের বিশ্বাস, সরকার রোডমার্চে বাধা দেবে না
চট্টগ্রামের বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকার তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করলেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি রোডমার্চে কোনো বাধা দেবে না বলেই তারা প্রত্যাশা করছেন। নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রোডমার্চ একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার এ সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেবে না।
এটা চতুর্থ রোডমার্চ
৪ দলীয় জোটের এটা চতুর্থ রোডমার্চ। এর আগে গত ১০ ও ১১ অক্টেবর প্রথমে সিলেট, দ্বিতীয় রোডমার্চ হয় ১৮ ও ১৯ অক্টোবর উত্তরাঞ্চলের বগুড়া ও চাপাইনবাবগঞ্জে, ২৬ ২৭ নভেম্বর তৃতীয় রোডমার্চ হয় খুলনায়।
সরাসরি সম্প্রচার
রোডমার্চ সরাসরি সম্প্রচারের আয়োজন করেছে বিএনপি। www.bnplive.com এ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি রোডমার্চ দেখা যাবে। এর বাইরে কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। যারা সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে জানা গেছে, সেসব চ্যানেলগুলো হলো, সময় টেলিভিশন, একুশে টেলিভিশন, বাংলাভিশন ও দিগন্ত টেলিভিশন।
কোন কোন দল অংশ নেবে
চারদল ভুক্ত বিএনপি, জামাত, বিজেপি ও ইসলামী ঐক্যজোটের বাইরে একমাত্র এলডিপিসহ সমমনা দল, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা, সংসদ সদস্য ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।