খুনী রেজাউল ভারত থেকে পাড়ি জমাবে কানাডায় – বিক্রি করে দেয়া হয়েছে টর্চার সেল সিকদার মহলটি

খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী ॥ বহুল আলোচিত চতুর্থ স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা নাদিয়াকে হত্যা করে লাশগুমের সময় ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলো বরিশালের গৌরনদীর চাঞ্চল্যকর পিতৃ হত্যাকারী সন্ত্রাসী সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল। দীর্ঘ আট মাস কারাভোগের পর আইনের ফাঁক ফোকর কাটিয়ে অতিসম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসে খুনী রেজাউল। জামিনে বেরিয়েই আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার বাদিকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রাখে খুনী ও তার ক্যাডাররা।

এরইমধ্যে সু-চতুর রেজাউল তার শেষ সম্ভল টর্চার সেল বলেখ্যাত গৌরনদী পৌর এলাকার টরকী বন্দরের সিকদার মহলটি গত ২৭ জানুয়ারি রাতে বিক্রি করে দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুনী রেজাউলের এক ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২/১ দিনের মধ্যে খুনী রেজাউল পালিয়ে ভারতে যাবে। মামলা থেকে রেহাই পেতে ভারত থেকে খুনী রেজাউল কানাডার পাড়ি জমাবেন। সেলক্ষ্যে ইতোমধ্যে তার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। রেজাউলের শেষ সম্ভল সিকদার মহলটি বিক্রি করায় বাংলাদেশে খুনী রেজাউলের নিজস্ব আর কিছুই রইলো না।

সূত্রমতে, রেজাউল জামিনে বেরিয়েই কমিশন কেচের মাধ্যমে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় বসে গৌরনদীর সাবরেজিষ্টার অসিম কল্ললের উপস্থিতিতে টরকী বন্দরের ৮ শতকের “সিকদার মহল” বাড়িটি বিক্রি করে দেন। ওই বন্দরের ব্যবসায়ী আলমগীর মুন্সী ২৯ লক্ষ টাকায় খুনী রেজাউলের কলঙ্কময় বাড়িটি ক্রয় করেন। এখবর আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার বাদি ও নাদিয়া ছোট ভাই শরীফ আহম্মেদ শাহ্রিয়া সিরাজী সুজন শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রশ্ন রেখে গতকাল শনিবার এ প্রতিনিধির কাছে মোবাইল ফোনে বলেন, আমার বোনের হত্যাকারীর বিচারকি বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। খুনীকি সত্যি পালিয়ে ভারতে কিংবা ভারত থেকে কানাডায় যেতে পারবে। সুজন তার বোনের হত্যাকারী খুনী রেজাউলকে পূর্ণরায় গ্রেফতার পূর্বক জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদকর্মীদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, বরিশালের কাউনিয়া এলাকার আইনজীবি মরহুম এ্যাডভোকেট রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা ও বনানী ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী কামরুন নাহার নাদিয়াকে মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রেজাউল তার পূর্বের বিয়ের কথা গোপন রেখে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই নাদিয়ার পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। এনিয়ে নাদিয়ার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ ঘটনার জের ধরে গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে রেজাউল নাদিয়াকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে নিহত নাদিয়ার লাশ গুমের জন্য রেজাউল ওইদিন রাতে নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে গৌরনদীর উদ্দেশে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহবাগ থানা পুলিশ (২৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ খুনী সিকদার রেজাউলকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় সুজন বাদি হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১৬ অক্টোবর গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুর রহমান দীর্ঘ ৬ মাস তদন্ত শেষে আলোচিত এ মামলায় ঘাতক রেজাউল তার মা নুরজাহান বেগম ও ভাই সিকদার সাইফুর রহমান সোহেলকে অভিযুক্ত করে সিএমএম আদালতে মামলার চাজর্শীট দাখিল করেন। গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক এস.এম আমিনুল ইসলাম রহস্যজনক ভাবে খুনী রেজাউল সিকদারের জামিন মঞ্জুর করেন।