গয়নাঘাটা সেচ প্রকল্পের ম্যানেজারের কাছে পাঁচ হাজার কৃষক জিম্মি

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরে গয়নাঘাটা এলাকায় পালরদী নদীর শাখা নদীর তীরে গয়নাঘাট প্রাইমারী সেচ প্রকল্পের গ্রুপ ম্যানেজার মোঃ হাবুল তালুকদারের কাছে ১০ গ্রামের সেকেন্ডারী ২৫টি সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ও পাঁচ হাজার কৃষক জিম্মি হয়ে পড়েছে। গয়নাঘাটা সেচ প্রকল্পটির ম্যানেজার বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধের সময় সরকারি ভর্তুকি সুবিধা নিয়ে থাকলেও সেকেন্ডারী ২৫ প্রকল্পের আওতায় থাকা ম্যানেজার ও পাঁচ হাজার কৃষককে ভর্তুকি সুবিধা না দিয়ে চড়া দামে সেচ পানি বিক্রি করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহৃত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এর প্রতিবাদে সেকেন্ডারী ব্লক ম্যানেজার ও সাধারন কৃষকদের উদ্যোগে গতকাল শনিবার সকালে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সরেজমিনে ভূক্তভোগী কৃষক ও প্রকল্প ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের মোঃ হাবুল তালুকদার ২০০৮ সনে গৌরনদী বিএডিসির অফিস থেকে ৫ কিউসেকের ১ টি বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প লিজ নিয়ে পালরদী নদীর শাখা গৌরনদী-ধামুরা খালের গয়নাঘাট স্লুইসগেট এলাকায় চাঁদশী খালের সংযোগ মুখে স্থাপন করে গয়নাঘাট প্রাইমারী সেচ প্রকল্প চালু করে। এ প্রকল্পের আওতায় গৌরনদী পৌর এলাকার উত্তর বিজয়পুর, বানিয়াশুরী, পালরদী, গোবর্দ্ধন, দক্ষিন গোবর্দ্ধন, চাঁদশী ইউনিয়নের পশ্চিম বানিয়াশুরী, চাঁদশী, দক্ষিন চাঁদশী, উত্তর চাঁদশী ও কুমারভাঙ্গা গ্রামের ২৫টি সেকেন্ডারী সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার একর জমির মালিকসহ পাঁচ হাজার কৃষক ইরি বোরো আবাদ করে আসছে। গয়নাঘাটা প্রাইমারী সেচ প্রকল্পের গ্র“প ম্যানেজার মোঃ হাবুল তালুকদারের দুটি সেচ পাম্প বসিয়ে ২৫ টি সেকেন্ডারী প্রকল্পে পানি সরবারহের কথা থাকলেও সে গৌরনদী বিএডিসির ৫ কিউসেকের ১টি বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প ভাড়া নিয়ে কৃষকদের জিম্মি করে কয়েক বছর ধরে গয়নাঘাট প্রাইমেরী সেচ প্রকল্প চালিয়ে আসছে।

স্থানীয় কৃষক মোঃ তাহের আলী (৪৫), ইউনুস সরদার (৪২) সহ একাধিক কৃষকেরা জানান, এ প্রকল্পের আওতায় গৌরনদী পৌর ও উপজেলার ১০টি গ্রামের ২৫ টি সেকেন্ডারী সেচ প্রকল্প রয়েছে। সেকেন্ডারী ২৫টি প্রকল্পের ম্যানেজাররা গয়নাঘাট প্রাইমারী সেচ প্রকল্পের গ্রুপ ম্যানেজার হাবুল তালুকদারের কাছে থেকে সেচ পানি ক্রয় করে তাদের (সাধারন কৃষক) কাছে বিক্রি করে থাকে। সেকেন্ডারী প্রকল্প ম্যানেজাররা হাবুল তালুকদারকে পানির চড়া মূল্য পরিশোধ করেন। হাবুল তালুকদার সেকেন্ডারী প্রকল্প ম্যানেজারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নেয়ায় সেকেন্ডারী ম্যানেজারদের কাছ থেকে সাধারন কৃষকেরা আরো অতিরিক্ত মূল্যে (৪শ/৫শ টাকা) সেচ পানি ক্রয় করেন। একাধিক কৃষকেরা অভিযোগ করেন, জৈষ্ঠ মাসে যখন কৃষকদের পানির প্রয়োজন তখন হাবুল পানি সরবারহ বন্ধ করে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করেন। এতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহৃত হয়। গয়নাঘাট প্রাইমারী সেচ প্রকল্পের অধীনে থাকা সেকেন্ডারী প্রকল্প উত্তর বিজয়পুর সেচ প্রকল্পের প্রকল্পের ম্যানেজার জাহিদ হোসেন অভিযোগ করেন, হাবুল তালুকদারকে গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত ১০/১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। ব্লক থেকে অগ্রীম বাবদ দশ হাজার টাকা দিতে হয়। হাবুলের দাবীকৃত অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ না করলে সেচ সরবারহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকালে চাঁদশী হাটে ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দের সভাপতিত্বে ব্লক ম্যানেজার ও কৃষকদের এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দে কৃষকদের জিম্মি দশার কথা স্বীকার করে বলেন, হাবুলের স্বেচ্ছাচারিতায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হতে বসেছে। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অফিসারকে অবহিত করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাবুল তালুকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় এ কথা সত্য নয়। সেকেন্ডরী ম্যানেজাররা ঠিকমত টাকা পরিশোধ করে না। তাছাড়া একটি পাম্প নষ্ট হওয়ায় পানি সরবারহে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কৃষক, সেকেন্ডরী ব্লক ম্যানেজার ও  চাঁদশী চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।